Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্ধ হয়ে গেল ২৬ বছরের পুরনো ফেরি সার্ভিস

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৬:১১ পিএম

বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুনন্সো ৮ম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু চালু হবার মধ্যে দিয়ে বরিশাল-খুলনা-মোংলা মহাসড়কের বেকুঠিয়াতে কঁচা নদীতে ২৬ বছর আগে চালু হওয়া ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেল। এরই সাথে উপকূলের ৩টি বিভাগ ও সবগুলো সমুদ্র বন্দরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বরিশাল বিভাগীয় সদরের সাথে বিচ্ছিন্ন পিরোজপুর জেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগও প্রতিষ্ঠিত হল। রোববার সকাল ১১টার কিছু পরে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এসেতুর উদ্বোধন ঘোষনার কিছুক্ষন পরেই ফেরি সার্ভিস বন্ধ হয়ে সে স্থলে সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। ফলে বরিশাল,ঝালবাঠী ও পিরোজপুর বাসীর মধ্যে আনন্দের বণ্যা বইতে থাকে। কিন্তু এ আনন্দের আড়ালেই চাপা পড়ে গেছে দক্ষিণাঞ্চলের বিশাল দুরত্বের ঐ ফেরি সেক্টরের দু পাড়ের দেড় শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও কয়েক হাজার কর্মচারীদের কান্না আর হাহাকার।

১৯৯৬ সালের আগষ্ট মাসে বেকুঠিয়া ফেরি সার্ভিস চালু হবার পর থেকে কঁচা নদী দুপাড়ে দেড় শতাধিক ছোট বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও মসজিদ এবং মাদ্রাসাও গড়ে ওঠে। দিনরাত শত শত যানবাহন পারাপার করতে গিয়ে ফেরিঘাটটি ছিল কোলাহল মুখর। এমনকি এ ফেরিঘাটকে কেন্দ্র করেই এখানে তাজা মাছের বাজারও গড়ে ওঠে। কঁচা নদী থেকে মাছ ধরে এ ফেরি ঘাটের অস্থায়ী দোকানে বসে বিক্রী করতেন জেলেরা। বাস সহ বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রীরা বেজায় খুশিতে তাজা মাছ কিনতেন। এখানের তাজা ইলিশ সবারই চোখ আর মনও জুড়াত।

কিন্তু রোববার দুপুরের আগেই সেখানে নেমে এসছে শুনশান নিরবতা। প্রতিঘন্টা অন্তর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১টি করে ইউটিলিটি টাইপ-১ (উন্নত) ফেরি এ ঘাট থেকে গাড়ী নিয়ে ওঘাটে যেত। প্রায় ৫ কিলোমিটার দুরত্বের কঁচা পাড়ি দিতে সময় লাগত ১৫ মিনিট থেকে ২০ মিনিট। এক ঘন্টা অন্তর ফেরি থাকায় এপার ওপার দুই ঘাটেই দিনরাত গাড়ীর লম্বা লাইন ছিল নিত্যকার বিড়ম্বনা।

এখন সেখানে অপেক্ষার কোন বালাই নেই। পাঁচ মিনিটেরও কম সময়ে ১ হাজার ৪৯৪ মিটার দীর্ঘ বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুনন্সো ৮ম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু পার হয়ে গাড়ী চলে যাচ্ছে এপার থেকে ওপারে।

এরশাদ সরকারের আমলে যোগাযোগ মন্ত্রী থাকাবস্থায় আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বরিশালকে ভান্ডারিয়া হয়ে পিরোজপুরÑখুলনার সাথে সড়ক যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার ক্ষমতা গ্রহনের পরে বরিশাল ও খুলনা দুরত্ব আরো হ্রাসের লক্ষ্যে ঝালকাঠীর রাজাপুর থেকে বেকুঠিয়া পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার সড়ক নির্মান সম্পন্ন করা হয়। বেকুঠিয়াতে ফেরি সার্ভিস প্রবর্তনের লক্ষে সে সময়ে ২টি পন্টুন ও ২টি ইউটিলিটি ফেরি মোতায়েন হলেও ’৯৬-এর রাজনৈতিক অস্থিরতায় সে সরকার আর সড়ক ও ফেরি সার্ভিস চালু করতে পারেনি। তবে ঐ বছরই সেপ্টেম্বরে এসড়কটি এবং ফেরি সার্ভিসও চালু করায় বরিশাল ও ঝালকবাঠী থেকে পিরোজপুর ও খুলনার সড়ক পথে দুরত্ব আরো ২২ কিলোমিটার কমে মাত্র ১০৫ কিলোমিটারে হ্রাস পায়।
২০১৫ সালে বেকুঠিয়াতে সেতু নির্মানে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সাথে চীনা দুতাবাসের সমঝোতা স্মর স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু সেতু কতৃপক্ষ বেকুঠিয়া সেতুর দৈর্ঘ ১৫শ মিটারের বেশী বলে জানায় । তা নির্মান সড়ক অধিদপ্তরের এখতিয়ার বহিভর্’ত বলেও দাবী করে কতৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে পরবর্তিতে যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের হস্তক্ষেপে ১ হাজার ৪৯৪ মিটার দীর্ঘ ৮ম চীন বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু নির্মানে সড়ক অধিদপ্তরই দায়িত্ব লাভ করে। চীনা প্রেসিডেন্ট-এর ঢাকা সফরকালে ২০১৬ সালের ১ নভেম্বর ৮ম চীনÑবাংলাদেশ মৈত্রী সেতু নির্মানে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এর দু বছর পরে ২০১৮ সালের ১ অক্টোবর ‘প্রী-স্ট্রেসড কংক্রীট বক্স গার্ডার’ ধরনের এ সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।চীন সরকার সেতুটি নির্মূানে ৬৫৫ কোটি টাকা সম্পূর্ণ অনুদান প্রদান করে।

গত ৩০ জুন সেতুটির নির্মান কাজ শেষ হবার পরে ৭ আগষ্ট চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রী ওয়াং ই’র উপস্থিতিতে ৮ম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতুটি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ