Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হুমকির মুখে দেশের একমাত্র মেরিন ড্রাইভ

সংস্কার না হলে যান চলাচলে অনুপযোগীর আশঙ্কা

জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে : | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

পর্যটকদের কাছে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ বেশ জনপ্রিয়। সড়কের একদিকে বঙ্গোপসাগর অন্যপাশে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়। এ দুটির সম্মিলনে মেরিন ড্রাইভকে করেছে অনন্য। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোর নির্মিত সড়কটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই হাজারো পর্যটক এ পথ পাড়ি দেন। তবে কক্সবাজারের পর্যটন খাতকে সমৃদ্ধ করা ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়কটি এখন হুমকির মুখে।

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন স্বাভাবিকের চেয়ে সাগরে বেড়েছে পানির উচ্চতা। ফলে প্রতিনিয়ত বঙ্গোপসাগরের বিশাল ঢেউ আঘাত হানছে মেরিন ড্রাইভের কিছু জায়গার ওপর। সাগরে বাড়তে থাকা উচ্চতা এবং পাড়ের অব্যাহত ভাঙনে তলিয়ে যাচ্ছে বিস্তীর্ণ এলাকা। দীর্ঘতম সৈকতের পাশ ঘেঁষে তৈরি এ সড়কের কিছু অংশ জোয়ারের পানিতে ডুবে যায়। বিশেষ করে কলাতলী থেকে সাবরাং পর্যন্ত সড়ক চরম ঝুঁকির মুখে রয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেরিন ড্রাইভের কক্সবাজার অংশের কলাতলী, দরিয়ানগর, বড়ছড়া, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, সি-পার্ল হোটেলের সামনেসহ টেকনাফের সাবরাং পর্যন্ত অংশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সড়ক রক্ষায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিকল্প ব্যবস্থায় এ ভাঙন প্রতিরোধ করা না হলে হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটি শিগগিরই হয়তো বিলীন হয়ে যাবে।

অন্যদিকে মেরিন ড্রাইভকে ঘিরে যে পর্যটন গড়ে উঠেছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের চাপে তার সম্ভাবনাও নষ্ট হতে চলেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। শামলাপুর থেকে টেকনাফ পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটারজুড়ে সড়কের দুই পাশে বসবাস করতে শুরু করেছে হাজারো রোহিঙ্গা নাগরিক। ফলে সৈকতের সড়কটির নয়নাভিরাম সৌন্দর্য আর ধরে রাখা যাচ্ছে না। আবার শরণার্থীদের সহায়তায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর গাড়ির অতিরিক্ত চাপও মেরিন ড্রাইভের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে উঠছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনই সংস্কারের ব্যবস্থা না নেয়া হলে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে উঠবে সড়কটি।

কক্সবাজার পিপলস ফোরামের মুখপাত্র সাংবাদিক এইচএম নজরুল ইসলাম বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে মেরিন ড্রাইভ সড়ক করা হয়েছিল তা ভেস্তে যাওয়ার পথে। কেবল শরণার্থী বসবাসই সমস্যা নয়, তাদের কারণে এ সড়কে বেড়েছে বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার জন্য চলাচলরত বাহনের সংখ্যা। তার ওপর ভাঙন প্রবণ কিছু এলাকা তো রয়েছেই। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী ছয় মাসের মধ্যে সড়কটি ভেঙে যাবে। তাই পর্যটকবাহী গাড়ি ছাড়া অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত গাড়ি চলাচলের জন্য বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা উচিত। এছাড়া প্রভাবশালীদের সৈকত থেকে বালি উত্তোলনও বন্ধ করতে হবে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কক্সবাজারের সভাপতি ফজলুল কাদের চৌধুরী বলেন, মেরিন ড্রাইভ সড়ক পর্যটনের আকর্ষণ বাড়াতে সহায়ক হিসেবে কাজ করছে। সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয়া প্রয়োজন।

উল্লেখ্য, সমুদ্র সৈকত ধরে এ সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয় ১৯৮৯ সালে। ১৯৯৩ সালে তৎকালীন সরকার ৪৮ কিলোমিটার দীর্ঘ মেরিন ড্রাইভ প্রকল্প হাতে নেয়। সে সময় মাত্র দুই কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের পর তা সাগরের প্রবল স্রোতে বিলীন হয়ে যায়। সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্যাটালিয়নের (ইসিবি) তত্ত্বাবধানে নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ১৯৯৪ সালে প্রকল্পটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রকল্পটি পুনরায় সেনাবাহিনীর ইসিবির কাছে আসে। এর পরই প্রায় নিরবচ্ছিন্নভাবে সম্পন্ন হয় প্রকল্পটির নির্মাণ কাজ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ