পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : লুই আই কানের নকশা এখন দেশের মিডিয়াগুলোর খবরের শিরোনাম। ইহুদি ধর্মাবলম্বী এই আমেরিকান বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের নকশার প্রণেতা। রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অসাধারণ এই স্থাপত্যের জন্য জাতি গর্বিত। কিন্তু হঠাৎ করে সেই নকশা বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলো? ১৯৬২ সালে ঢাকায় সাড়ে ৫ লাখ লোকের বসবাসের সময় নকশা করা হয়; এখন দেড় কোটি মানুষ রাজধানীতে বাস করছে। ৫৪ বছর আগের চিন্তার প্রাসঙ্গিকতা এখন কতটুকু?
আধুনিক যুগের স্থাপত্য রীতির সর্বোৎকৃষ্ট নিদর্শন এই সংসদ ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা হয় ১৯৫৯ সালে। খ্যাতনামা স্থাপতি লুই আই কান সংসদ ভবন কমপ্লেক্সের নকশা প্রণয়নের জন্য প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হন। ১৯৬২ সালের মার্চ মাসে তার নকশা গ্রহণ করা হয়। আদমশুমারি অনুযায়ী ১৯৬১ সালে ঢাকার লোকসংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৫০ হাজার ১৪৩ জন। আইয়ুব খানের নির্দেশে ওই বছরই বর্তমান মানিক মিয়া এভিনিউয়ের উত্তর পাশে ২০৮ একর জমি প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। ১৯৬২ সালে সংসদ ভবনের মূল নকশা তৈরি হয়। ১৯৬৪ সালে কাজ শুরু হলেও সংসদ কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শেষ হয় ১৯৮২ সালে। সংসদ ভবন কমপ্লেক্সের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত আছে মূল সংসদ ভবন, সংসদ সদস্য, মিনিস্টার ও সেক্রেটারিদের হোস্টেল, অতিথি ভবন ও কমিউনিটি বিল্ডিং। রাস্তা, পায়ে হাঁটার পথ, বাগান ও লেক দ্বারা এসব দৃষ্টিনন্দন করে তোলা হয়। সাড়ে ৫ লাখ জনসংখ্যার ঢাকা শহরে সংসদ ভবনের স্থাপনা নির্মাণের যে নকশা প্রণয়ন হয় ৫৪ বছর পর প্রায় দেড় কোটি লোকের বসবাসের সেই শহরে সেই নকশার বাস্তবায়ন কতটুকু যুক্তিসঙ্গত? লুই কানের নকশা বাস্তবায়ন সময়ের দাবি নাকি শুধুই প্রতিহিংসার রাজনীতি? ওই সময় সরকার ধানম-িতে এক বিঘা, দুই বিঘা জমির প্লট বরাদ্দ দিয়েছে। এখন কি সে পরিমাণ জমির একটি করে প্লট জনগণকে বরাদ্দ দেয়ার বাস্তবতা আছে?
১৯৬৪ সালে কাজ শুরু হলেও জাতীয় সংসদ কমপ্লেক্সের নির্মাণ সম্পন্ন হয় ১৯৮২ সালে। ওই বছরের ২৮ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আব্দুস সাত্তার সংসদ ভবনের উদ্বোধন করেন। নির্মাণশৈলীতে নতুনত্বের কারণে স্থাপনাটি সারাবিশ্বে প্রশংসিত হয়। সেই নকশা হাতছাড়া হয়েছিল কেন সেটা যেমন একটা প্রশ্ন; তেমনি সেই নকশা বাস্তবায়ন করার জন্য এত তড়িঘড়ি কেন সেটাও প্রশ্ন। কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে সেই স্থাপনার মূল নকশা আমেরিকা থেকে ঢাকায় আনা হয়েছে। উদ্দেশ্য শেরেবাংলা নগরের সংসদ ভবনের মূল নকশায় ফিরে যাওয়া। রাজধানী ঢাকার ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় প্রতি বছর শহরে ব্যাপক হারে জনসংখ্যা বাড়ছে। প্রতিদিন এই বৃদ্ধির সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। আদমশুমারির বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার সময় ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯২ হাজার। ১৯৫১ সালে বৃদ্ধি পেয়ে হয় ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৯২৮ জন। সংসদ ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ১৯৬১ সালে। ওই সময় ঢাকায় বসবাস করত ৫ লাখ ৫০ হাজার ১৪৩ জন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে আদমশুমারি অনুযায়ী ঢাকার জনসংখ্যা দাঁড়ায় ১৬ লাখ ৭ হাজার। ১০ বছর পর ১৯৮১ সালে জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ লাখ ৪০ হাজার। ১৯৯১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ঢাকার জনসংখ্যা হয় ৬৮ লাখ ৪৪ হাজার এবং ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী ১ কোটি ৭ লাখ। সর্বশেষ আদমশুমারি অনুযায়ী ঢাকার লোকসংখ্যা এক কোটি ৪৩ লাখ ৯৯ হাজার। কাগজে-কলমে এটা হলেও বাস্তবে জনসংখ্যা আরো অনেক বেশি। সংসদ ভবন কমপ্লেক্স নির্মাণের পর দীর্ঘ ৫৪ বছরে সময়ের প্রয়োজন ও চাহিদা অনুযায়ী ঢাকার অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে। যেমনÑ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠা হয়। সে সময় ঢাকায় ছিল ১২টি থানায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে ছিল ৬ হাজার পুলিশ। ৪০ বছরের ব্যবধানে রাজধানীতে থানা এখন ৪৯টি। আর শুধু থানায় আইনশৃঙ্খলার দায়িত্বে রয়েছেন ২৬ হাজার ৬৬১ জন পুলিশ। বর্তমান ঢাকার ‘সময়ের চাহিদা’ সম্পর্কে এ উদাহরণ যথেষ্ট।
১৯৮২ সালে সংসদ ভবন উদ্বোধনের পর ৩৪ বছরে রাজধানীর লোকসংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। বিভিন্ন সরকারও এ সময় কমপ্লেক্সের ভেতরে অনেক স্থাপনা নির্মাণ করেছে। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় রাষ্ট্রীয়ভাবে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিকে কবর দেয়া হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিচারপতি আবদুস সাত্তার, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী আতাউর রহমান খান, সাবেক মন্ত্রী মশিউর রহমান যাদু মিয়া, মুসলিম লীগ নেতা খান এ সবুর, সাহিত্যিক-সাংবাদিক সাবেক মন্ত্রী আবুল মনসুর আহমদ এবং পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকার তমিজউদ্দীন খানকে সমাহিত করা হয়। এ ছাড়াও শেরেবাংলা নগরে লুই আই কানের নকশাবহির্ভূত আরো ৭টি স্থাপনা রয়েছে। এগুলো হলোÑ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন, চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের কবরের চার দিকে থাকা প্রবেশপথের ঝুলন্ত সেতু প্রভৃতি। এসব স্থাপনার বর্তমান বাজার মূল্য কয়েকশ’ কোটি টাকা। লুই কানের মূল নকশায় ফিরতে কি এই স্থাপনাগুলো ভেঙে ফেলা হবে? স্পিকার-ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন না হয় ভেঙে ফেলা হলো কিন্তু আরেকটি বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র নির্মাণের ব্যয় বহন সম্ভব?
বিএনপি অভিযোগ করেছে, চন্দ্রিমা উদ্যান থেকে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর সরিয়ে দিতেই সরকার লুই কানের নকশা বাস্তবায়নের কথা বলছে। কয়েকজন মন্ত্রীও তেমন ইঙ্গিত দিয়েছেন। গতকালও আওয়ামী লীগ নেতা ড. হাছান মাহমুদ তুচ্ছতাচ্ছিল্যের সুরেই বলেছেন, ‘চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়াউর রহমানের লাশ নেই’। কবরে জিয়ার লাশ নেই সেটা হাছান মাহমুদ জানলেন কেমনে? আর ৩৪ বছর আগে দেয়া কবরে মানুষের লাশ কি খুঁজে পাওয়া যায়? সময় তার নিজস্ব গতিতেই চলে। সময়ের প্রয়োজনে নতুন নতুন স্থাপনা হচ্ছে। কূটচিন্তায় রাষ্ট্রের সম্পদ নষ্ট করার মানসিকতা অবান্তর। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা ইয়াহহিয়ার শাসনের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। সামরিক শাসক আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান ঘটিয়েছি। আইয়ুব খানের শাসন খারাপ, তাকে আমরা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করি; কিন্তু সময়ের প্রয়োজন ভুলে গিয়ে সেই আইয়ুব খানের চিন্তার ফসল জাতীয় সংসদের লুই আই কানের নকশা বাস্তবায়নে হঠাৎ কেন এত অস্থির হয়ে উঠছি?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।