Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪, ০৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নিত্যদিনের ভোগান্তি যানজট

মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ বাজার ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগে যাত্রী সাধারণ

মনির হোসাইন, মুরাদনগর (কুমিল্লা) থেকে | প্রকাশের সময় : ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

কুমিল্লার মুরাদনগরে যানজট নিরসনে ব্যর্থ হচ্ছে পুলিশ। তবে রাস্তার উপর পার্কিং করা বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলেও প্রতিনিয়ত সিএনজি চালিত অটোরিকশার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ। এমতাবস্থায় উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাস টার্মিনালে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট থাকলেও তা যেন দেখার যেন কেউ নেই। বর্তমানে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে এ বাজারের বাস টার্মিনাল থাকলেও আঞ্চলিক পরিবহনসহ কুমিল্লার বাইরে যাতায়াতের যাত্রী উঠানামা করেন রাস্তার মধ্যে। যার কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকা পরেন যাত্রী ও চালকরা।
কিন্তু মুরাদগনগর থানা পুলিশ যানজট নিরসনের দায় এরাতে সিএনজি চালিত অটোরিকশা প্রতিদিন আটক করলেও কোন বাস আটক করছেন না বলে জানান সিএনজি চালকরা। সচেতন মহলের দাবি নির্ধারিত বাসের কাউন্টার বা স্ট্যান্ড থেকে বাস সার্ভিস পরিচালনা করলে এ কোম্পানীগঞ্জ বাজার তথা এ টার্মিনালের যানজট নিরসন করা সম্ভব।
সরেজমিনে দেখা যায়, কোম্পানীগঞ্জ বাস টার্মিনাল অংশে ৫শ’ মিটার আর সিসি ডালাইয়ের কাজ চলছে। এ কাজকে কেন্দ্র করে রাস্তার কুমিল্লাগামী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াগামী অংশে প্রতিদিন লেগে থাকে কয়েক কিলোমিটার যানজট। আর এসব যানজট নিরসনে মুরাদনগর থানা পুলিশ কাজ করে যাচ্ছেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে রাস্তা নির্মাণ অংশে সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে আঞ্চলিক বাস সার্ভিস ফারজানা ট্রান্সপোর্ট, নিউ জনতা, সুগন্ধা পরিবহন, ঢাকাগামী গোমতী পরিবহন, তিশা পরিবহন, চট্টগ্রামগামী প্রান্তিক, হানিফ, শাপলা, টিপু, সুখি, তিশা, বিআরটিসি পরিবহন ও সিলেটগামী কুমিল্লা ট্রান্সপোর্ট, রয়েল সুপার, রিয়েল পরিবহনের নিধার্রিত টার্মিনাল না থাকায় রাস্তার ওপর সিরিয়াল দিয়ে সার্ভিস পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না পুলিশ। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ ফারজানা ট্রান্সপোর্ট, নিউ জনতা ও সুগন্ধা পরিবহন এ বাজারের যানজটের মূলকারণ। এ পরিবহনগুলো কোম্পানীগঞ্জ থেকে কুমিল্লা সার্ভিস পরিচালনা করে এবং বাসে যাত্রী উঠানোর জন্য প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে রাস্তার মধ্যে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রেখে তীব্র যানজটের সৃষ্টি করে। দিনের পর দিন এসব সার্ভিসের নির্ধারিত কোন স্ট্যান্ড না থাকলেও রাস্তার ওপর গাড়ি রেখে সার্ভিস পরিচালনা করে আসছে। এ নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ এবং উত্তেজনা বিরাজ করছে। ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার মাধবপুর গ্রামের কামরুল হাসান নামে এক সিএনজি চালক বলেন, আমি কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে গাড়ি চালাই না। সিএনজির জালানী গ্যাস নেওয়ার জন্য কোম্পানীগঞ্জ বাজার হয়ে পান্নারপুল যাচ্ছিলাম। পুলিশ আমার সিএনজি আটকিয়ে থানায় নিয়ে যায় এবং তিনদিন পর তা ছেড়ে দেয়। এ বাজরে যানজটের কারণ হলো বাস কিন্তু আমার জানামতে এখন পর্যন্ত পুলিশ কোনো বাস আটক করেনি। এখন আমাদের প্রশ্ন আইন কি শুধু সিএনজি চালকদের জন্য।
মুরাদনগর উপজেলার পদুয়া গ্রামের মজিব নামে এক সিএনজি চালক বলেন, পান্নারপুল গ্যাস নেওয়ার জন্য যাওয়ার পথে পুলিশ আমার সিএনজি আটক করে থানায় নিয়ে আসে। যেসব ড্রাইভারদের আত্মীয়-স্বজনের সাথে পুলিশের সখ্যতা রয়েছে তাদের গাড়ি পুলিশ আটক পরপরই ছেড়ে দেয়। পরে আমার গাড়িটি তিনদিন পর ছেড়েছে। তিনদিন আমার পরিবারের লোকজন তিনবেলা খেতে পারেনি। যানজটের জন্য দায়ী হলো বাস আর পুলিশ আটক করে সিএনজি। নিউ জনতা সার্ভিসের পরিচালক ইউপি চেয়ারম্যান কাজী আবুল খায়ের বলেন, নিউ জনতার স্ট্যান্ড বেড়িবাঁধের পূর্ব পাশে করা হয়েছিল রাস্তার কাজ করার আগে। আপাতত কোনো গাড়ির নির্ধারিত স্ট্যান্ড নেই। রাস্তার চলমান কাজ করার কারনে রাস্তার পশ্চিম পাশে সিরিয়ালে একটি গাড়ি রেখে যাত্রী উঠাতে পারবে আর একটি গাড়ি ওয়েটিং এ থাকতে পারবে। রাস্তার কাজ শেষ হলে যানজট নিয়ন্ত্রনে চলে আসবে। ফারজানা টান্সপোর্টের পরিচালক হাবিবুর রহমান বলেন, কোম্পানীগঞ্জে সব বাস গাড়ির টার্মিনাল একটি। রাস্তার কাজ করার কারনে আমরা নির্দিষ্ট স্ট্যান্ডে যেতে পারছি না। আমাদের পরিবহনের সিরিয়ালের গাড়িসহ এ রাস্তায় যাতায়াতের গাড়িগুলো এক লেনে ছাড়ার কারনে একটু যানজট হচ্ছে। আমরা যানজট নিরসনের জন্য পরিবহনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত লোক নিয়োগ দিয়েছি।
মুরাদনগর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আজিজুল বারী ইবনে জলিল বলেন, এখানে শুধু সিএনজি আটকের বিষয়টি ভিত্তিহিন। যানজট নিরসনের জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। যানজট স্বাভাবিক রাখতে প্রতিনিয়ত পুলিশ কোম্পানীগঞ্জ বাজারে কাজ করছে।
উল্লেখ, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের কোম্পানীগঞ্জ এলাকায় হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাওয়ার পথে গত ২০ আগস্ট সকালে আধা ঘণ্টাব্যাপী যানজটে আটকে ছিলেন চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। এ সময় সড়কে মুরাদনগর থানা পুলিশের কোনো তৎপরতা না থাকায় ওই দিনই মুরাদনগর থানার ওসি আবুল হাসিমকে প্রত্যাহার করে নেয়া হয় বলে জানা যায়। তবে প্রত্যাহারের আদেশে ডিআইজির যানজটে আটকে থাকার কোনো বিষয় উল্লেখ করা হয়নি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ