Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

শিবগঞ্জে ৭০ থেকে ১১০ বছরের ৭ জন দুস্থ পাননি বয়স্ক-ভাতা

| প্রকাশের সময় : ৫ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

শিবগঞ্জ (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা : সরকার অসহায় দুস্থদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ভাতা দেয়া অব্যাহত রাখলে শিবগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না। শেষ বয়সে খাওয়া-দাওয়া, পরনের কাপড়-চোপড় এমনকি চিকিৎসার অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করলেও এ পর্যন্ত  বয়স্ক ভাতা, বিধাব ভাতা, ভিজিএফ কার্ড ও ১০ টাকা কেজির চালের কার্ডসহ সবধরনের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত উপজেলার ৭০ হতে ১১০ বছরের ৭ জন অসহায় দুস্থ ব্যক্তি। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার মনাকষা ও দুর্লভপুর ইউনিয়নে। সরজমিনে গিয়ে কথা হয়, মনাকষা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের সাহাপাড়া বৈরাগীপাড়া গ্রামের মৃত মুকসেদ আলির ছেলে ইসরাইল হকের সাথে। তিনি জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রে জন্ম-তারিখ ১ জুলাই ১৯১৪ইং হলেও তার প্রকৃত বয়স ১১০ বছর। কান্নাজড়িত কণ্ঠে মনাকষা ইউনিয়নের সবচেয়ে বয়স্ব ইসরাইল হক জানান, অনেক জমিজমা ছিল। সব পদ্মার ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে। ২ ছেলে ও ৬ মেয়ের সবার বিয়ে হয়েছে। ছেলেমেয়ে, পৌত্র ও পৌত্রি সবাই নিজ নিজ  সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আমার স্ত্রী আয়েশা বেগমের বয়স ৭৯ বছর। আমি কিছুটা চলতে পারলেও সে বর্তমানে একেবারেই অক্ষম। শেষ বয়সেও তার সেবা আমাকেই করতেই হয়। অভাবের সংসারে কোনোদিন খেতে পাই, কোনোদিন পাই না। একাধিকবার মেম্বার, চেয়ারম্যানের কাছে ধরনা দিয়েও লাভ হয়নি। শেষে আশা করেছিলাম ১০ টাকা কেজি চালের কার্ড দু’জনের মধ্যে একজন পাব। সেটাও জোটেনি। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে না পেরে অসুস্থ অবস্থাকেই পরিণতি হিসাবে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছি। পাশের বাড়ির বিধবা ফুলেরা বেগম। স্বামী মৃত ইদিস আলী। ২০ বছর আগে তার স্বামী মারা গেছেন। জন্ম-তারিখ ১ জুলাই ১৯৩৮ সাল। বর্তমান বয়স সাড়ে ৭৮ বছর। কথা বলতে পারে না। তার ছেলে জয়নাল জানান, আমরা ৪ ভাইবোন। বোন তিনটা স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত। আমি সামান্য পুঁজি দিয়ে গ্রামে মাটির হাঁড়ি বিক্রি করে পর্বত সমান পরিবার নিয়ে কোনোরকমে দিনাতিপাত করি। মায়ের বয়স্ক, বিধবা বা অন্য কোনো ভাতার কার্ডের জন্য মেম্বার-চেয়ারম্যানদের অনেক হাত-পা ধরেও লাভ হয়নি। ফুলেরার সামনে বাড়ির হুমায়ুন ও তার স্ত্রী হালিমা বেগম জানান, আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে গেছে। হুমায়ুনের কথা মতে, তার বয়স ৯০ বছর এবং তার স্ত্রীর বয়স ৭৫ বছর। বসতভিটা ছাড়া কোনো জমিজমা নেই। ছেলেমেয়ে ৭ জন। মেয়েরা স্বামীর সংসার নিয়ে ব্যস্ত। ছেলেরা সবাই ভিন্ন। আমাদের সম্পদ বলতে একটি গাভী। আমি গাভীর জন্য ঘাস কেটে নিয়ে আসি এবং নিজেই খাওয়াই। দুধের টাকা দিয়েই কোনোদিন খেয়ে কোনোদিন না খেয়ে দিন কেটে যায়। হুমায়ুনের স্ত্রী হালিমা বেগম জানান, ভোটের আগে আমার নিজের ভাই খুররমের জন্য ভোট নিয়েছে এবং বলেছিল ১০ টাকা কেজির চালের কার্ড করে দিব। কিন্তু ভোটের পরে আর দেখা করেনি। আর মেম্বার চেয়ারম্যানরা তো কোনোদিন আসেই না। একই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত ঠুঠাপাড়া হঠাৎপাড়া গ্রামের মৃত শের মোহাম্মদের ছেলে রাইসুদ্দিন। জন্মতারিখ ১৬ এপ্রিল ১৯৪৯ইং। বর্তমান বয়স সাড়ে ৬৭ বছর। ছেলেমেয়ে ৩ জন। ৫ বছর ধরে অন্ধ অবস্থায় শুধু বাড়িতে কঠিন বাস্তবতার মধ্য দিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। নেই কোনো জমিজমা। নেই কোনো পোশাক। নেই কোনো খাবার। নেই কোনো চিকিৎসা। ক্ষোভের সাথে রাইসুদ্দিন বলেন, আমার মাধ্যমে প্রমাণ হয়েছে যে মেম্বার-চেয়ারম্যানরা শুধু নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। অন্ধ অবস্থায় আমি সাবেক চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন, বর্তমান চেয়ারম্যান মির্জা শাহাদাত হোসেন, সাবেক, সংশ্লি­ষ্ট ইউপি মেম্বার সমীর উদ্দিনকে অনেকবার অনুরোধ করেও লাভ হয়নি। রাইসুদ্দিনের স্ত্রী মোসা. শাহাজাদী বেগম জানান, ৫ বছর আগে মাঠে কামলা খাটতে গিয়ে হঠাৎ চোখে ব্যথা শুরু হলে বাড়ি ফিরে আসে। টাকার অভাবে সঠিক চিকিৎসা না করাতে পারায় তখন থেকে অন্ধ হয়ে আছে। ভিক্ষা করে সংসার চলে। তারপর প্রতিদিন ভিক্ষা করতে যেতে না পারায় অনেকদিন না খেয়ে থাকতে হয়। নির্বাচনের সময় সবাই সহযোগিতা করতে চাইলেও নির্বাচনের পরে আর খোঁজ করে না। এব্যাপারে মনাকষা ইউপি চেয়ারম্যান মির্জা শাহাদাৎ হোসেন খুররম জানান, মাত্র কয়েকমাস হলো দায়িত্ব পেয়েছি। তদন্ত করে দেখাব যদি জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বয়স হয়ে থাকলে সে অবশ্যই ভাতা পাবে। বিধবা ভাতার ব্যাপারে তিনি বলেন, বিধবার সংখ্যা অনুযায়ী বিধবা ভাতার কার্ড বরাদ্দ না পাওয়ায় সকলকে বিধবা ভাতার কার্ড দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দুর্লভপুর ইউনিয়নের রামনাথপুর গ্রামের কয়েস উদ্দিনের মেয়ে ও মৃত আফজাল হোসেনের বিধবা স্ত্রী গোলসান বেগম (৬০) জানান, ১৮ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। ৯ জন ছেলেমেয়ে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। বর্তমানে ছেলেমেয়েরা সবাই নিজ নিজ সংসার নিয়ে ব্যস্ত। নিজে ভিক্ষা করে সংসার চালাই। দুর্লভপুর ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান আবু আহমদ নজমুল কবির মুক্তা ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রাজিব রাজুসহ অনেকের কাছে একটি বিধবা ভাতা ও ভিজিডি কার্ডের জন্য ঘুরাঘুরি করেছি। এমনকি ১০ টাকা কেজি চালের একটি কার্ডের জন্য মেম্বারকে বলেও কার্ড হয়নি। এব্যাপারে দুর্লভপুর ইউপি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুর রাজিব রাজুর সাথে মুঠোফোনে (০১৭১১৪১৪৩৯১) একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।




 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ