Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

গুজব ছড়িয়ে থানা ঘেরাও পরে মিটমাট

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

নগরীর পাথরঘাটায় গণেশের মূর্তি ভাঙচুরের গুজব ছড়িয়ে হামলা, মারামারির পর গভীর রাতে থানা ঘেরাও করা হয়েছে। তবে পরে থানায় বসে বিষয়টি মিটমাট করা হয়েছে। গতকাল বুধবার পুলিশের পক্ষ থেকে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাথরঘাটায় গত মঙ্গলবার রাতে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কিছু দুষ্কৃতিকারী প্রতিমা ভাঙচুর হয়েছে মর্মে গুজব ছড়িয়ে উস্কানি দিয়েছে।

পুলিশ জানায়, পাথরঘাট আশরাফ আলী রোডে গত মঙ্গলবার রাত ১২টার দিকে ভ্যানগাড়িতে করে সাউন্ডবক্সে বাদ্যবাজনা বাজিয়ে গণেশ মূর্তি নেয়া হচ্ছিল মণ্ডপে। সরু সড়কের কারণে ভ্যানের সঙ্গে প্রাইভেট কারের ধাক্কা লাগে। ওই কারে চালকের আসনে ছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা শেখ জোবায়েরের ছেলে ১৯ বছর বয়সী শেখ মেজোয়ান হোসেন জায়ান। ধাক্কা লাগার পর ভ্যানগাড়িতে থাকা তরুণ-যুবকেরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারা প্রাইভেট কার ভাঙচুরের চেষ্টা করেন। তখন জায়ান দ্রুত কার নিয়ে এগোতে গিয়ে একটি বাই-সাইকেলকে ধাক্কা দেয়। সাইকেলের আরোহী নন্দন দাশগুপ্ত পড়ে গিয়ে আহত হন। শিব নন্দন নামে এক পথচারীও আহত হন। এতে ওই যুবকেরা আরও উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। মূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছে বলে এলাকায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পাথরঘাটা ও আশপাশের এলাকা থেকে লোকজন সেখানে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা শেখ জোবায়েরের বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে দ্রুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আটক করে থানায় নেয়া হয় শেখ মেজোয়ান হোসেন জায়ানকে।
কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবীর বলেন, একেবারে তুচ্ছ ঘটনা। প্রাইভেট কারের সঙ্গে প্রতিমা বহনকারী ভ্যানগাড়িতে ধাক্কা লেগেছে। কিন্তু প্রতিমার কোনো ক্ষতি হয়নি। ধাক্কাটাও ইচ্ছাকৃত ছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে আমাদের মনে হয়নি। কিন্তু হঠাৎ করে গুজব ছড়িয়ে দেয়া হয় যে, প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে। তখন সেখানে শত, শত লোক জমে যায়। আমরা গিয়ে প্রতিমা সুন্দরভাবে মণ্ডপে পৌঁছে দিই। লোকজনও শান্ত হয়ে ফিরে যান। কিন্তু রাত ১টার দিকে সনাতন সম্প্রদায়ের কয়েক’শ তরুণ-যুবক গিয়ে কোতোয়ালী থানার সামনে অবস্থান নেয়। তারা ‘জয় শ্রীরাম’, ‘প্রতিমা ভাঙচুরের বিচার চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। একপর্যায়ে তারা থানার মূল ফটক পেরিয়ে ভেতরে গিয়ে প্রবেশপথ আটকে বিক্ষোভ করতে থাকেন। ওসিসহ পুলিশ কর্মকর্তারা বারবার অনুরোধের পরও তাদের সরাতে পারেনি। ভোর সাড়ে ৪টা পর্যন্ত তারা থানায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন।
ওসি বলেন, কিছু উচ্ছৃঙ্খল ছেলে প্রথমে ঘটনাস্থলে এবং পরে থানায় এসে অনাকাক্সিক্ষত আচরণ করে। প্রতিমা অক্ষত থাকার পরও তারা ভাঙচুর হয়েছে দাবি করে স্লোগান দিতে থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। তুচ্ছ ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের রূপ দেয়ার চেষ্টা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে থানায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। পুলিশের প্রস্তুতি দেখে ভোর সাড়ে ৪টার দিকে উচ্ছৃঙ্খল যুবকরা থানা ছেড়ে যায়।
পরে স্থানীয় কাউন্সিলর পুলক খাস্তগীর এবং বিবাদমান দু’পক্ষের উপস্থিতিতে থানায় সমঝোতা বৈঠক হয়। সেখানে আহত নন্দন দাশগুপ্ত ও শিব নন্দনের পরিবারের লোকজন সমঝোতার ভিত্তিতে তাদের অভিযোগ প্রত্যাহার করেছেন। উভয়পক্ষের লোকজন কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই মর্মে লিখিত অঙ্গীকারনামা দিয়েছেন। আটক শেখ জায়ানের কাছ থেকে মুচলেকা নিয়ে ওয়ার্ড কাউন্সিলরের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ