Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বৃষ্টির অভাবে সারা দেশের মত দক্ষিণাঞ্চলও আউশ আবাদ ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার পেছনে

খাদ্য নিরাপত্তায় বিরূপ প্রভাবের আশংকা

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ৩০ আগস্ট, ২০২২, ১:৫১ পিএম | আপডেট : ২:২৭ পিএম, ৩০ আগস্ট, ২০২২

বৃষ্টির অভাবে আউশ আবাদের লক্ষ্যমাত্রার অনেক পেছনে এবার খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চল। যা দক্ষিণাঞ্চল সহ জাতীয় পর্যায়ের খাদ্য নিরাপত্তায় কিছুটা বিরূপ প্রভাব ফেলতে পাড়ে বলেই মনে করছেন কৃষিবীদগন। গত এপ্রিলে বরিশালে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৫.৬%, মে মাসে ৫.৬%, জুনে ৪৪.৪% এবং জুলাই মাসে ৬৪.৭% কম বৃষ্টি হয়েছে। আর আবহাওয়া বিভাগ থেকে চলতি মাসে বরিশাল অঞ্চলে ৪৯০ থেকে ৫৭০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেয়া হলেও মাসের প্রথম ১৫ দিনে বৃষ্টি পরিমান ছিল মাত্র ৫৪.৪ মিলিমিটার। তবে শ্রাবনের শেষ পূর্নিমায় ভর করে এর পরে আরো বেশ কিছু বৃষ্টি হলেও তার হিসেব পাওযা যায়নি।

অথচ নিকট অতীতেও সারা দেশের ২০Ñ২৩ ভাগেরও বেশী আউশের আবাদ হত দক্ষিণাঞ্চলে। গত বছরও দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলায় সোয়া ২ লাখ হেক্টর জমিতে আউশ আবাদ হলেও এবার তা ২ লাখ হেক্টরের মত। সারা দেশেই এবার দানাদার এ খাদ্য ফসল আবাদ গত বছরের প্রায় ১৩ লাখ হেক্টরের স্থলে ১১ লাখ হেক্টরে হ্রাস পেয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই সূত্রে জানা গেছে। ফলে গত বছর যেখানে ৩৪ লাখ টনের মত আউশ চাল পাওয়া যায়, সেখানে এবার তা ৩০ লাখ টনে হ্রাস পাবার আশংকার কথাও জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্র।
বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট-ব্রি ও ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, মৌসুমের মূল সময়ে বৃষ্টির অভাবে কৃষকরা যেমনি আউশ আবাদ করতে পারেনি, তেমনি উৎপাদনও কিছুটা ব্যাহত হয়েছে। ইতোমধ্যে বরিশাল কৃষি অঞ্চল সহ সারা দেইে প্রায় ৫০ ভাগ জমির আউশ ধান কর্তন সম্পন্ন হলেও মূল উৎপাদন লক্ষ্য অর্জিত হচ্ছে না। তবে এবার আউশের হাইব্রীড, ইনব্রীড ও স্থানীয় জাতের গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি ২ টনের মত বলে ডিএই সূত্রে বলা হয়েছে।

সমাপ্ত প্রায় খরিফÑ১ মৌসুমে বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় ২ লাখ ৪ হাজার ৬৭০ হেক্টরে আউশের আবাদ হয়েছে। এরমধ্যে বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ১ লাখ ৭৬ হাজার ৫১৯ হেক্টরে এবং বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫ জেলায় আবাদের পরিমান ২৮ হাজার ১৫০ হেক্টর। বৃহত্বর ফরিদপুরে লক্ষ্যমাত্রার ৩০ হেক্টর বেশী জেিমত অ্উশরে আবাদ হলেও দক্ষিণাঞ্চলের ৫ জেলায় তা প্রায় ৫৮ হাজার হেক্টর পেছনে। গত বছর শুধুমাত্র বরিশাল বিভাগের ৬ জেলাতেই প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ হয়েছিল। এর আগের বছরগুলোতে তা ছিল প্রায় সোয়া ২ লাখ হেক্টর।
এবার বৃষ্টির অভাবে আবদের পরিমান সারা দেশেই প্রায় ১২Ñ১৫% পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে বলে ডিএই সূত্র জানিয়েছে। দক্ষিনাঞ্চলেও ২ লাখ হেক্টর থেকে আবাদ ১ লাখ ৭৬ হাজারে হ্রাস পেয়েছে। যা সম্প্রতিককালের সর্বনি¤œ বলে জানা গেছে। ফলে বরিশাল কৃষি অঞ্চলে ৬.১৬ লাখ টন আউশ চাল প্রাপ্তির সম্ভবনা যথেষ্ট ক্ষীন হয়ে আসছে। বৃষ্টির অভাবে আবাদ লক্ষ্য অর্জিত না হওয়ায় কাঙ্খিত উৎপাদন লক্ষ্যও পিছিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগন।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর-ডিএই’র মতে, দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় কোটি মানুষের দৈনিক ৪৪২ গ্রাম দানাদার খাদ্যের প্রয়োজনীয়তার আলোকে এ অঞ্চলে বছরে খাদ্য শষ্যের চাহিদা ১৬ লাখ ১০ হাজার টনের মত। কিন্তু আমন, আউশ ও বোরো সহ এঅঞ্চলে বছরে চালের উৎপাদন ছিল ২৭ লাখ ৫৩ হাজার টন। এছাড়া আরো প্রায় ১০-১২ হাজার টন গম সহ প্রতিবছর সর্বমোট দানাদার খাদ্য ফসলের উৎপাদন প্রায় ২৭ লাখ ৬৫ হাজার টনের মত। এথেকে ফসল আবাদে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার টন বীজ প্রয়োজন হলেও নীট দানাদার খাদ্য শষ্য থাকছে ২৪ লাখ ৪৫ হাজার টনের মত। সেখান থেকে ১৬ লাখ ১০ হাজার টন খাবার গ্রহনের পরেও প্রতি বছর প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টন খাদ্য উদ্বৃত্ত থাকছে দক্ষিণঞ্চলে।
গত বছরও দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলায় প্রায় ১৬ লাখ টন আমন, পৌনে ৫ লাখ টন আউশ ও প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার টন বোরো উৎপাদন হয়েছিল। গমের উৎপাদনও ছিল প্রায় ১৫ হাজার টনের কাছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ