Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

একটি স্লুইস গেটের কারণে অস্তিত্ব হারাচ্ছে করতোয়া

| প্রকাশের সময় : ৪ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে একটি স্লুইস গেটের কারণে দক্ষিণমুখী প্রবাহিত করতোয়া নদী সম্পূর্ণ মৃত্যুবরণ করলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ফলে জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতিসহ বিরূপ প্রভাব পড়েছে মৃত করতোয়া নদীর অববাহিকা অঞ্চলসমূহে। করতোয়া নদী এক সময় গোবিন্দগঞ্জ সদর ইউনিয়ন ও গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নকে ভৌগোলিকভাবে দুভাগ করে রাখলেও ১৯৯৮ সালে ২৫ আগস্ট গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভা প্রতিষ্ঠার সময় গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের কালিকাডোবা, আরজী খলসী, ববনপুর ও খলসী মৌজা অন্তর্ভুক্ত করে পৌরসভা গঠন করা হয়। বহু পূর্ব থেকেই এ করতোয়া নদীকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে ছিল গঞ্জেরহাট নামে। তখন গঞ্জের ঘাটে বড় বড় নৌকা নোঙ্গর করত দেশি-বিদেশি বণিক ও সওদাগররা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য। এক কালের প্রমত্তা করতোয়ার পশ্চিম পাড়ের ৬টি ইউনিয়নের লোকজন এই নদী পথ দিয়েই গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরসহ সারাদেশের সাথে যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য করত। প্রমত্তা করতোয়া নদী গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পশ্চিম কোল ঘেঁষে গুমানীগঞ্জ ইউনিয়নের মধ্যে দিয়ে বয়ে গিয়ে প্রবেশ করেছে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাটা ইউনিয়নে। আর একটি শাখা করতোয়া নামেই কাটাখালী হয়ে বাঙ্গালী নদীতে মিশেছে। করতোয়া উত্তরবঙ্গের এক কালের সর্বপ্রধান ও পবিত্র নদী। ভুটান সীমান্তের উত্তরে  হিমালয় পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে বিভিন্ন উপনদীর জলধারা বক্ষে ধারণ করে পশ্চিমবঙ্গের  দার্জিলিং ও জলপাইগুড়ির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশে বৃহত্তর রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার মধ্য দিয়ে রংপুরের প্রায় ১৯ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে কতিপয় জলধারার সংযোগে সৃষ্ট নতুন উৎসমুখ থেকে আনুমানিক ২৪২ কিমি দক্ষিণে  ইছামতি নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে। উত্তরতম প্রবাহে এর নাম তিস্তা, এ তিস্তার জলধারা তিনটি খাতে প্রবাহিত হতো করতোয়া, আত্রাই ও পুনর্ভবা। গতিপথের বিভিন্ন অংশে করতোয়া এখনো পুরাতন তিস্তা নামে আখ্যায়িত হয়ে থাকে। বর্তমান করতোয়া কিছুটা পথ দিনাজপুর ও রংপুর জেলার সীমানা নির্ধারণ করে প্রবাহিত হয়েছে, অতঃপর গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা অতিক্রম করে বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার ময়দানহাটা ইউনিয়নে প্রবেশ করেছে। রংপুর জেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় নদীটি পূর্বদিক থেকে আসা দুটি উপনদী সর্বমঙ্গলা এবং যমুনেশ্বরীকে গ্রহণ করেছে। করতোয়া ছিল একসময় তিস্তা নদীর একটি শাখা। করতোয়ার মাধ্যমেই তিস্তার জলরাশি গঙ্গা নদীতে প্রবাহিত হতো। ১৭৮৭ সালের ২৭ আগস্ট তিস্তায় এক প্রলয়ঙ্করী  বন্যা হয়। এ বন্যার ফলেই করতোয়ার সঙ্গে তিস্তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। তিস্তার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর করতোয়া তার মূল স্রোতধারা হারিয়ে খর্বকায় হতে থাকে। ধীরে ধীরে করতোয়া পাঁচটি অংশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। উত্তরের অংশের নাম হয় দিনাজপুর-করতোয়া। প্রকৃতপক্ষে এটিই আত্রাইয়ের প্রধান উৎস। দিনাজপুর, করতোয়া পূর্বে খানসামা উপজেলার উত্তরে রংপুর, করতোয়ার সঙ্গে মিলিত হতো। কিন্তু বর্তমানে সে নদী দিয়ে অতি সামান্য পানি প্রবাহিত হয়ে থাকে। নীলফামারী জেলার সৈয়দপুরের কাছে রংপুর, করতোয়ার উৎপত্তি। এখান থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এঁকে বেঁকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পর্যন্ত গিয়েছে। সেখান থেকে মূল স্রোত কাটাখালির মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাঙ্গালী নদীতে পতিত হয়। দুই করতোয়ার মূল প্রমত্তা করতোয়া নদীর উৎসস্থলে পানিপ্রবাহ বন্ধ হওয়ায় যৌবন হারিয়েছে বহু বছর আগেই। যৌবন হারিয়ে বৃদ্ধ এই নদীটি কোনোমতে বেঁচে থাকলেও গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভার খলসী নামক স্থানে স্লুইস গেটসহ বাঁধ নির্মাণ করায় রংপুর-করতোয়াকে বগুড়া-করতোয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করেছে। ফলে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের পাশ দিয়ে বগুড়ামুখী প্রবাহিত মূল করতোয়া নদী সম্পূর্ণ মরে গিয়ে ক্ষুদ্র খালে পরিণত হওয়ায় বগুড়া জেলার অভিমুখী এ নদীর যে অংশ প্রবাহিত তা বছরের প্রায় অধিকাংশ সময় শুকনা থাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ