পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
প্রচন্ড গরমে প্রশান্তির আশায় একদল শিশু-কিশোর ঝাঁপিয়ে পড়ে পুকুরে। দাপাদাপির এক পর্যায়ে পানিতে তলিয়ে যায় পারভেজ (৫) ও আশিক (৭)। কয়েক ঘণ্টা পর ভেসে ওঠে দুজনের লাশ। তখনই ওই দুই শিশুর পরিবার জানতে পারে তারা পুকুরে নেমেছিল। বুধবার রাতে নগরীর চকবাজার থানার ওমর আলী মাতব্বর মসজিদ সংলগ্ন পুকুরে ঘটে এ মর্মান্তিক ঘটনা।
পুলিশ জানিয়েছে, সাঁতার না জানার পরও মা-বাবার অজান্তেই তারা পুকুরে গোসল করতে নামে। শিশু পারভেজ ও আশিকের মত আরও অনেক শিশু এভাবে পানিতে ডুবে মরছে। চট্টগ্রামে প্রায় প্রতিদিনই পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর মর্মান্তিক খবর পাওয়া যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মূলত মা-বাবা এবং অভিভাবকদের অসচেতনতা এবং অবহেলার কারণে এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। সন্তান সাঁতার শেখেনি এটা জানার পরও অভিভাবকদের অনেকে তাদের একা একা পুকুরে নামতে দিচ্ছেন। অনেক সময় খেলতে গিয়ে পুকুরে পড়ে তলিয়ে যাচ্ছে শিশুরা। অথচ বেখবর অভিভাবকসহ বাড়ির অন্য সদস্যরা। শিশুর জন্য নিরাপদ আশ্রয় পরিবার। অথচ পরিবারের সদস্যদের একটুখানি অবহেলা আর অসচেতনতায় ঘটছে সর্বনাশ।
মূলত বড়দের গাফেলতির কারণে প্রস্ফুটিত হয়ে পড়ার আগেই ঝরে পড়ছে নিষ্পাপ শিশুরা। একেকটি মৃত্যু একেকটি পরিবারে নিয়ে আসছে বিষাদের ছাঁয়া। তবুও নেই সচেতনতা। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর খবর আসছে। চট্টগ্রামে পানিতে ডুবে মৃত্যুর কোন পরিসংখ্যান কারও কাছে নেই। তবে থানা-পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে খবর নিয়ে জানা যায়, প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বিভিন্ন নদ-নদী, সৈকত ও ঝরণাতে বেড়াতে গিয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটছে প্রতিদিন। মূলত সাঁতার না জানায় এমন মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
শিশুদের সাঁতার শেখানোর কোন ব্যবস্থা নেই। ফলে শিশুদের পাশাপাশি কিশোর-যুবকেরাও পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে। গ্রামের বাড়িতে কিংবা ঝরণা ও সৈকতে বেড়াতে গিয়ে প্রাণ যাচ্ছে অনেকের। বিশেষ করে পানিতে ডুবে শিশুদের ব্যাপকহারে মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মা-বাবার অসাবধানতার কারণেই দুর্ঘটনা ঘটছে। গত মঙ্গলবার বোয়ালখালীর আমুচিয়া ইউনিয়নের উত্তর সর্দ্দার পাড়ায় পুকুরে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। তারা হলো- প্রিয়া সর্দ্দার (৭) ও মৃত্তিকা দাশ (৬)। প্রিয়া সর্দ্দার উত্তর সর্দ্দার পাড়ার মেঘনাথ সর্দ্দার লেদুর মেয়ে এবং মৃত্তিকা দাশ একই এলাকার মাছ ব্যবসায়ী রঞ্জন দাসের মেয়ে।
স্থানীয়রা জানান, স্কুল থেকে এসে গোসল করতে গিয়ে ঘরে না ফেরায় শুরু হয় খোঁজাখুঁজি। এক পর্যায়ে বাড়ির পাশের পুকুরে তাদের লাশ ভাসতে দেখা যায়। পুকুর থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্তিকা দাশ মুক্তাকেশি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণির ছাত্রী, প্রিয়া সর্দ্দার স্থানীয় মন্দিরের ধর্মীয় শিক্ষার্থী। দুজনেই সাঁতার জানতো না। কিন্তু তারা অভিভাবক ছাড়াই পুকুরে গোসল করতে নামে।
একই দিন চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার সরল ইউনিয়নের পুকুরে ডুবে মারা যায় দুই জমজ বোন। তারা হলো- চার বছর বয়সী রূপসা ও রূপসী। সাঁতার না জানার পরেও পরিবারের বড় কোন সদস্য ছাড়াই পুকুরে নেমে পড়ে তারা। গোসল করতে গিয়ে এক পর্যায়ে পানিতে তলিয়ে যায়। পরে তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে ১৯ আগস্ট রাতে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার চন্দ্রঘোনা কদমতলী ইউনিয়নের একটি পুকুর থেকে মো. হাসান (১০) ও মো. হোসেন (৯) নামে দুই সহোদরের লাশ উদ্ধার করা হয়।
চন্দ্রঘোনা খোন্দকার পাড়ার দিনমজুর মো. শফির ছেলে তারা। ওইদিন বিকেলে আছরের নামাজ পড়ার কথা বলে বনগ্রাম আবুল খায়ের কলোনীর বাসা থেকে পাশের মসজিদে যায় দুই ভাই। সন্ধ্যার পরও তারা বাড়ি না ফেরায় খুঁজে থাকেন অভিভাবকেরা। এক পর্যায়ে স্থানীয় পুকুরে তাদের লাশ পাওয়া যায়। পরিবারের সদস্যরা জানান, নামাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে গরম থেকে স্বস্তি পাওয়ার জন্য দুই ভাই পুকুরে নেমে যায়। সাঁতার না জানায় পুকুরেই ডুবে মরে তারা।
গত ১৫ আগস্ট লোহাগাড়ার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের মাইজপাড়ায় গোসল করতে নেমে পুকুরে ডুবে মারা যায় আট বছর বয়সী শিশু সুমাইয়া ও রাইসা। তাদের বাড়ি একই গ্রামে পাশাপাশি। দুজন স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। স্থানীয়রা জানায়, পুকুরে গোসল করতে নেমে তারা পানিতে তলিয়ে যায়। পরে তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পানিতে ডুবে মৃত্যুর কয়েকটি ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মা-বাবার অজান্তেই শিশু-কিশোররা সাঁতার না জানার পরও একা একা পুকুরে নামছে। এ ব্যাপারে অভিভাবকদেরও অবহেলা রয়েছে। পুকুরে বড়শিতে মাছ ধরছেন পিতা। আর তার পাশেই পানিতে ডুবে আড়াই বছরের শিশু মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে। আবার মা-বাবার সাথে গোসল করতে নেমে সন্তানদের পুকুরে তলিয়ে যাওয়ার মত ঘটনাও ঘটেছে।
ফায়ার সার্ভিস, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগ ও কয়েকটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনায় বেশিরভাগ শিশুর বয়স দুই থেকে সাত বছর। আবার ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সের শিশু-কিশোররাও পানিতে ডুবে মরছে। বেশিরভাগ ঘটনায় পানিতে ডুবে যাওয়ার অনেকক্ষণ পর খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। ফলে তখন আর কিছুই করার থাকে না। তাছাড়া পানিতে পড়া শিশুকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার করে জীবন রক্ষায় কোন ধরনের ব্যবস্থা নিতে হবে তাও অনেকে জানেন না। ফলে পানিতে ডুবে গেলে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত।
বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সফিউর রহমান মজুমদার বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায় মৃত অবস্থায় শিশুদের হাসপাতালে আনা হয়। একজন শিশু যখন পানিতে ডুবে যায় তখন সে প্রচÐ ভীত হয়ে পড়ে। ওই অবস্থায় প্রচুর পরিমাণ পানি খেয়ে ফেলে। তার ফুসফুসে পানি ঢুকে পড়ে। এতে শ^াসকষ্ট শুরু হলে কিছুক্ষণের মধ্যে তার মৃত্যু হয়। তবে যাদের বয়স বেশি তারা অপেক্ষাকৃত বেশি সময় পানিতে ডুবে থাকতে পারে।
চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা বিভাগের পরিচালক আনিসুল আলম বলেন, পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা রোধে সাঁতার শেখানোর কোন বিকল্প নেই। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য শিশুদের সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা খুবই কম। মহানগরীতে যে কয়েকটি সুইমিং পুল আছে সেটি সবার জন্য উন্মুক্ত না। নগরীতে পুকুরেরও অভাব রয়েছে। ইদানিং গ্রামে-গঞ্জেও পুকুর, দীঘি হারিয়ে যাচ্ছে। পাঁচ বছর বয়স থেকে শিশুদের সাঁতার শেখানো জরুরি উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য নগরী এবং গ্রাম পর্যায়ে পর্যাপ্ত সুইমিং পুলসহ সাঁতার শেখার ব্যবস্থা থাকা উচিত। সাঁতার না জানা কোন শিশুকে কোনভাবেই একা পুকুর কিংবা ঝরণাতে গোসল করতে দেয়া যাবে না। এ ব্যাপারে অভিভাবকদেরও আরও বেশি সচেতন হতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।