Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কর্ণফুলী পেপার মিলে উৎপাদন বন্ধ

কাঁচামাল পাল্প সঙ্কট

রাঙ্গুনিয়া (চট্টগ্রাম) উপজেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

চন্দ্রঘনাস্থ কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেডে পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাবে গত এক সপ্তাহ ধরে কাগজ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। মিলের রুগ্ন যন্ত্রপাতি ও বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে ২০১৭ সালে কেপিএমের নিজস্ব কূপ থেকে আহরিত কাঁচামাল বাঁশ ও পাল্পউড দিয়ে কাগজ উৎপাদন বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। বিদেশি পাল্প দিয়ে কাগজ উৎপাদনের নিমিত্তে টেন্ডার আহ্বান করে এবং সাইড কাটিং ও পুরনো কাগজ ব্যবহার করে কোনমতে কাগজ উৎপাদন করে আসছে মিল কর্তৃপক্ষ।
গত অর্থবছরে পাল্প আমদানির জন্য তিন দফায় টেন্ডার আহ্বান করেও কেউ অংশগ্রহণ করেনি। এর আগে টেন্ডারে অংশ নেওয়ায় এক ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হলেও তিনি পাল্প সরবরাহে ব্যর্থ হন। পর্যাপ্ত পাল্পের অভাবে মিলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে মিল সূত্রে জানা গেছে। কাগজ উৎপাদন বন্ধ থাকায় মিলে কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। কবে নাগাদ কারখানাটি আবারো উৎপাদনে যাবে উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করছেন শ্রমিক-কর্মচারিরা।
জানা যায়, কেপিএমে নিজস্ব কূপ হতে আহরিত কাঁচামাল বাঁশ ও পাল্পউড (নরম কাঠ) দিয়ে ১৯৫৩ সালে বাৎসরিক ৩০,০০০ টন ধারণক্ষমতা লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে কাগজ উৎপাদন শুরু হয়। ১৯৯১ সালে কেপিএম নিজের রুগ্নতা কাটিয়ে উৎপাদন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে বৈদেশিক বাজারে কাগজ রপ্তানি করতে সক্ষম হয় এবং ঐ বছরে ৪,১০২ জন শ্রমিক-কর্মচারি ও কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। ১৯৯০-৯১ সালে কেপিএম-এর সংস্থাপিত ধারণক্ষমতা ছিল ৩৩,০০০ টন, প্রকল্পিত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৮,৪৩৮ টন ও প্রকৃত উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৩০,২১৬ টন। কেপিএম-এর উৎপাদিত কাগজের মধ্যে রয়েছে লেখার কাগজ, ছাপা ও মুদ্রণের কাগজ, করোগেটেড বোর্ড, মোমের প্রলেপযুক্ত কাগজ, আঠাযুক্ত ফিতা এবং বিটুমিন কাগজ। ২০০৯-১০ সালে উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়ায় ২৪,২০১ টন। মিলের শ্রমিক-কর্মচারিরা জানান, স্থানীয় উৎপাদিত ৪-৫ টন কাঁচামাল বাঁশ থেকে এক টন পাল্প তৈরি করা হয়। বাঁশ থেকে কাগজ উৎপাদনে প্রতিটন ১৮-২০ হাজার টাকা ব্যয় হয়। কাঁচামাল বাঁশ ও পাল্পউড ক্রয় বন্ধ করে দেওয়ায় প্রতিটন কাগজ উৎপাদনে দাম চার গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বাঁশ ও পাল্পউড দিয়ে উৎপাদিত কাগজের মানও উন্নত। কাঁচামাল বাঁশ ও পাল্পউড (নরম কাঠ) দিয়ে মিলে কাগজ উৎপাদন বন্ধ রাখায় মূল্যবান যন্ত্রপাতি অকেজো হয়ে যাচ্ছে। এতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির।
পার্বত্যাঞ্চলের বিভিন্ন হেডম্যান কার্বারীদের সূত্রে জানা যায়, কর্ণফুলী পেপার মিলের ৪৫ হাজার একর নিজস্ব কূপ এরিয়ায় প্রায় এক হাজার পরিবারের দুই হাজার শ্রমিক-কর্মচারী বাঁশ ও পাল্পউড আহরণ, পরিবহন ও সরবরাহ করে জীবিকা নির্বাহ করে। পার্বত্যাঞ্চলের বাঁশ ও নরম কাঠের পরিবর্তে বর্তমানে কেপিএম কর্তৃপক্ষ বিদেশি পাল্প ব্যবহারে উৎসাহিত হচ্ছে।
সময়মত বিদেশি পাল্প না পাওয়ায় কারখানাটি চিরতরে বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে। কারণ বার বার টেন্ডার আহবান করেও ঠিকাদার বিদেশি পাল্প সরবরাহ করতে পারছেন না। মিলে দেশিয় কাঁচামাল বাঁশ ও পাল্পউড কারখানায় আবারো নতুন ভাবে ব্যবহার করে উৎপাদনে গেলে কোন সঙ্কটে পড়তে হবে না বলে মেহনতি শ্রমিক-কর্মচারীরা জানিয়েছেন।
কেপিএমের সিবিএ সভাপতি মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাবে একসপ্তাহ মিল বন্ধ রয়েছে। কারখানায় কাগজ উৎপাদন না হলে প্রতিমাসে লাখ লাখ টাকা লোকসান গুণতে হচ্ছে। কাঁচামাল সংকট দূরীকরণে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেয়া দরকার।
কর্ণফুলী পেপার মিলের মহা ব্যবস্থাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, টেন্ডার আহবান করেও বিদেশি পাল্প পাওয়া যাচ্ছে না। পুরনো কাগজের দামও অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রয়োজনীয় কাঁচামালের অভাবে মিলের উৎপাদন বন্ধ রাখা হয়েছে। কাঁচামাল পাওয়া গেলে কাগজ উৎপাদন যথারীতি চলবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ