মটর সাইকেল: নিউ নরমাল পরিস্থিতিতে (নতুন বাস্তবতায়)
মটরসাইকেল নিরাপদ, অধিক সুবিধাজনক, খরচ এবং সময় বাঁচায়। গণপরিবহনে একে অন্যের গা ঘেঁষে চলাচলে প্রতিদিন
মিঞা মুজিবুর রহমান : ২০১৫ সালে গৃহযুদ্ধ কবলিত সিরিয়া ছেড়ে আসা শরণার্থীরাসহ ১ কোটি ১০ লাখ মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার পর এখন জার্মান সরকারের পক্ষ থেকে নতুন নীতিমালার ঘোষণা দেওয়া হলো। উল্লেখ্য, অভিবাসীদের জন্য জার্মানির উন্মুক্ত-দরজানীতি ঘোষণার পর কয়েক মাস ধরেই রাজনৈতিকভাবে চাপের মুখে রয়েছেন দেশটির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল। এখানে আরও উল্লেখ্য যে, জার্মানির ঘোষণার আগে হাজার-হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীকে বিতাড়িত করার ঘোষণা দেয় সুইডেন ও ফিনল্যান্ড। ২৭ জানুয়ারি অন্তত ৮০ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীর আবেদন বাতিল করা হতে পারে বলে ঘোষণা দেয় সুইডেন। আর ২৮ জানুয়ারি ফিনল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ৩২ হাজার অভিবাসন প্রত্যাশীর মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশেরই আবেদন খারিজ হয়ে যাবে।
জার্মানি, সুইডেন ও ফিনল্যান্ড সরকারের পক্ষ থেকে এখন যেসব বক্তব্য রাখা হচ্ছে, তাতে এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, তাদের অভিবাসন নীতি ক্রমেই কঠোর হয়ে উঠছে। এতে উপলব্ধি করা যায়, বর্তমান পৃথিবীতে ন্যায়বোধ ও মানবিক বিবেচনাবোধ ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এদিকে ২৮ জানুয়ারি জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রধান ফিলিপিনো গ্র্যান্ডি বলেন, ইউরোপে রাজনৈতিক জটিলতা থাকলেও ধনী দেশগুলোর উচিত শরণার্থীদের জায়গা দেয়া। শরণার্থী তথা অভিবাসীদের বোঝা না ভেবে তাদের দেশের অর্থনীতি গড়ার কাজে লাগানো সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন তিনি। দৃঢ় কণ্ঠে ফিলিপিনো গ্র্যান্ডি আরও বলেন, আইনস্টাইনও যে অভিবাসী ছিলেন তা আমাদের ভুলে গেলে চলবে না।
জাতিসংঘের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মকর্তা প্রায়শই কিছু যুক্তিপূর্ণ ও সুবিবেচনাপ্রসূত কথাবার্তা বলে থাকেন। তাদের এসব কথাবার্তা মানুষের মনে আশাবাদ জাগায়। মানুষ এমনও মনে করতে চায় যে, সবকিছু এখনও শেষ হয়ে যায়নি। কিন্তু বাস্তবে যখন লক্ষ্য করা যায়, জাতিসংঘের আহ্বানকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো কিংবা বড় শক্তিগুলো কোনো গুরুত্ব দেয় না, তখন আশাবাদে হতাশার ছায়া পড়ে। আসলে জাতিসংঘের কাঠামো এবং সংস্থাটির পরিচালনা ব্যবস্থা বিবেচনায় আনলে এ বিষয়টি উপলব্ধি করা যায় যে, জাতিসংঘ আসলে অসহায় ও মজলুমদের জন্য কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণের সক্ষমতা রাখে না। এ বিশ্বের যারা নিয়ামক শক্তি তাদের প্রভাবই জাতিসংঘে কার্যকর রয়েছে। বর্তমান সময়ে অভিবাসী ও অভিবাসন নীতি নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে। কিছু অভিবাসীকে আশ্রয় দিয়ে ইউরোপের দেশগুলো যেন অবিস্মরণীয় কোনো মহান কাজ করে ফেলেছে! অভিবাসন প্রসঙ্গে বর্তমান সময়ের বিশ্বনেতারাও কপাল কুঞ্চিত করে কত ভারী ভারী ও দামি দামি কথা বলছেন! কিন্তু ন্যায়ের চেতনায় ইতিহাসের আলোকে বিবেচনা করলে একজন সাধারণ মানুষও উপলব্ধি করবেন যে, আজকের অভিবাসন পরিস্থিতির জন্য অভিবাসীরা দায়ী নন। বরং বড় রাষ্ট্রগুলো এর জন্য দায়ী। ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া ও সিরিয়ার বর্তমান বিপর্যয়কর অবস্থার জন্য দায়ী কারা? এসব দেশের গৃহযুদ্ধ ও যুদ্ধের পেছনে কারিগর হিসেবে তো বড় শক্তিগুলোর নামই এসে পড়ে। বড় রাষ্ট্রগুলোর ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থ এবং জ্বালানি-অর্থনৈতিক কৌশলের কারণে একে একে বিপর্যস্ত হচ্ছে মুসলিম রাষ্ট্রগুলো। ফলে সহায়-সম্বল হারিয়ে শুধু জীবন বাঁচানোর জন্য যুদ্ধবিপর্যস্ত দেশগুলো থেকে লাখ লাখ মানুষ বাধ্য হচ্ছে অভিবাসীদের মিছিলে যোগ দিতে।
তাই আমরা মনে করি, অভিবাসন নীতি নিয়ে এখন যত আলোচনা হচ্ছে, তার চেয়েও অধিক আলোচনা প্রয়োজন অভিবাসন পরিস্থিতির কারণ অনুসন্ধানে। কারণ কোনো দেশে গৃহযুদ্ধ কিংবা যুদ্ধ-পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে সে দেশের মানুষ অভিবাসী হতে চাইবে কেন? আর এ কথা সবাই জানে যে, ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষ স্বদেশকে ভালোবাসে এবং সেখানেই বাঁচতে চায়।
ষ লেখক : মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল ও চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ মিডিয়া অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।