দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
দু’জন নারী-পুরুষের দাম্পত্য বন্ধনই পরিবারের প্রধান ভিত্তি। আবহমান কাল থেকে এই পবিত্র ব্যবস্থা চলে এসেছে এবং এর মাধ্যমে মানব গোষ্ঠীর ধারাবাহিকতা ও সম্প্রসারণ অব্যাহত রয়েছে। সভ্য, অসভ্য, ধর্ম-বর্ণ-গোত্র-অঞ্চল নির্বিশেষে সকল মানব গোষ্ঠীর মধ্যে বৈবাহিক জীবন একটি পবিত্র ও অনুপম ব্যবস্থা হিসাবে স্বীকৃত হয়ে আসছে। এই ব্যবস্থার মাধ্যমে নারী-পুরুষ তাদের জৈবিক চাহিদা পূরণ করে নিজেদের চরিত্র-নৈতিকতার হেফাফত করছে এবং মানব বংশের পবিত্র ক্রমধারা অব্যাহত রয়েছে। বিবাহ বহির্ভূত যৌনাচার সকল ধর্মেই নিন্দনীয়, এমনকি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এই অনাচারে লিপ্ত ব্যক্তিদেরকে কেউই মর্যাদার চোখে দেখে না।
অবৈধ যৌনাচার স্বামী-স্ত্রীর জীবনে বিভিন্নমূখী বিশৃংখলা, অশান্তি, কলহ-বিবাদের সূত্রপাত করে, এমনকি দাম্পত্য সম্পর্কের তিক্ততাপূর্ণ অবসান ঘটায়। পরিবারের আর্থিক ভিত দুর্বল করে এবং সন্তানদের জন্য বয়ে আনে সুষ্ঠু-শান্তিময় জীবনের অনিশ্চয়তা। অবৈধ যৌনাচারের ফলস্বরূপ যে মানব সন্তানটি পৃথিবীতে আসে, তাকে কেউই সম্মানের দৃষ্টিতে সুনজরে দেখে না, বরং অশ্রাব্য ভাষায় মন্তব্য ছুড়ে মারে। অথচ এ মানব সন্তানটি সম্পূর্ণ নিষ্পাপ, নির্দোষ। অবৈধ যৌনাচার শুধু নৈতিক ও ধার্মিক জীবনের জন্যই ক্ষতিকর নয়, স্বাস্থ্যগত দিক থেকে এর ক্ষতি ভয়ংকর, গা শিউরে ওঠার মতো। আজকের অত্যাধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান প্রমাণ করেছে যে, মরণব্যাধি এইডস-এর মূল উৎস হলো অবৈধ যৌনাচার, যার কোন কার্যকর প্রতিষেধক আজো আবিস্কৃত হয়নি। এ ভয়াবহ ব্যাধি সম্পর্কে বহুকাল পূর্বেই রসূলুল্লাহ স. ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন যে, ‘কোন জাতির মধ্যে অবৈধ যৌনাচারের বিস্তার ঘটলে তাদের মধ্যে দূরারোগ্য ব্যাধির প্রাদুর্ভাব হয়’। অবৈধ যৌনাচারের লিলাভূমি খৃস্টান পাশ্চাত্যে বর্তমানে এই দূরারোগ্য ব্যাধির বিস্তার ঘটেছে এবং সেখান থেকে তা প্রাচ্যেও সংক্রমিত হচ্ছে। বিশেষ করে মুসলিম দেশসমূহে যেহেতু এখনো যৌন জীবন সুনিয়ন্ত্রিত, তাই এখানে উপরোক্ত রোগের আক্রমণ নেই বললেই চলে। ছিটেফোঁটা যা দেখা যায় তাও পাশ্চাত্যের প্রভাবে এবং তাদের আমদানী।
আসমানী ধর্মসমূহে যেনা ও তার শাস্তি ঃ অবৈধ যৌনাচারকে ইসলামী আইনের পরিভাষায় ‘যেনা’ (বাংলা প্রতিশব্দ ব্যভিচার) বলা হয়। সহজ ভাষায় দাম্পত্য সম্পর্ক বহির্ভূত নারী-পুরুষের পারস্পরিক যৌনমিলনকে ‘যেনা’ বলে। ইয়াহূদী, সৃষ্ট ও ইসলাম এই তিনটি ধর্মেই ‘যেনা’ একটি গর্হিত, নৈতিক ও ফৌজদারী অপরাধ এবং এর জন্য কোঠার শাস্তির বিধান রয়েছে। তাওরাতের (বাইবেলের পুরাতন নিয়ম) বিধান নিম্নরূপ: আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা আ.-কে যে দশটি আজ্ঞা দান করেন তার একটি হলো, ‘ব্যভিচার করিও না’ (যাত্রাপুস্তক, ২০ ঃ ১৪)। আল-কুরআন বলছেঃ ‘তোমরা যেনা-ব্যভিচারের নিকটবর্তীও হয়ো না তা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ’ (১৭ ঃ ৩২)
তাওরাত বলছে ঃ ‘তুমি আপন কন্যাকে বেশ্যা হইতে দিয়া অপবিত্র করিও না, পাছে দেশ ব্যভিচারী হইয়া পড়ে ও দেশ কুকার্যে পূর্ণ হয়’ (লেবীয় পুস্তক, ১৯ ঃ ২৯)। আল-কুরআন বলছে ঃ ‘তোমরা তোমাদের যুবতীদেরকে ব্যভিচারে লিপ্ত হতে বাধ্য করো না’ (২৪ ঃ ৩৩)। ২৬ ইসলামী আইন ও বিচার তাওরাতে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি অপরের স্ত্রীর সহিত ব্যভিচার করে, যে ব্যক্তি প্রতিবেশীর স্ত্রীর সহিত ব্যভিচার করে, সেই ব্যভিচারী ও সেই ব্যভিচারিণী, উভয়ের প্রাণদণ্ড অবশ্যই হইবে’ (লেবীয় পুস্তুক, ২০ ঃ ১০; আরো দ্র. ২০ ঃ ১১-১২)। ‘কোন পুরুষ যদি পরস্ত্রীর সহিত শয়নকালে ধরা পড়ে, তবে পরস্ত্রীর সহিত শয়নকারী সেই পুরুষ ও সেই স্ত্রী উভয়ে হত হইবে; এইরূপে তুমি ইসরাঈলের মধ্য হইতে দুষ্টাচার লোপ করিবে’ (দ্বিতীয় বিবরণ, ২২ ঃ ২২)। ‘যদি কেহ পুরুষের প্রতি বাºত্তা কোন কুমারীকে নগরমধ্যে পাইয়া তাহার সহিত শয়ন করে, তবে তোমরা সেই দুইজনকে বাহির করিয়া নগরদ্বারের নিকটে আনিয়া প্রস্তরাঘাতে বধ করিবে। সেই কুমারীকে বধ করিবে, কেননা নগরের মধ্যে থাকিলেও সে চীৎকার করে নাই, এবং সেই পুরুষকে বধ করিবে, কেননা সে আপন প্রতিবেশীর স্ত্রীকে মানভ্রষ্টা করিয়াছে। এইরূপে তুমি আপনার মধ্যে হইতে দুষ্টাকার লোপ করিবে’ (দ্বিতীয় বিবরণ, ২২ ঃ ২৩-২৪)। আল-কুরআনের বাণী ঃ ‘যেনাকারিণী ও যেনাকারী-তাদের প্রত্যেককে তোমরা একশত বেত্রাঘাত করো। আল্লাহর বিধান কার্যকরী করতে ওদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে প্রভাবান্বিত না করে-যদি তোমরা আল্লাহ ও রাখেরাতে ঈমান এনে থাকো। ‘মু’মিনদের একটি দল যেন ওদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে’ (২৪ ঃ ২)। এখানে উল্লেখ্য যে, উপরোক্ত আয়াতে অবিবাহিত ব্যভিচারী নারী-পুরুষের শাস্তির কথা বলা হয়েছে। বিবাহিত নারী-পুরুষের শাস্তি ‘মৃত্যুদণ্ড’ রসূলুল্লাহ স.-এর বাণী ও তাঁর বাস্তব কার্যক্রম তথা হাদীসে বিবৃত হয়েছে। এ সম্পর্কে সহীহ হাদীসে মায়েয ইবনে মালেক আল-আসলামী, গামেদ গোত্রীয় এক নারী এবং এক শ্রমিকের নিয়োগকর্তার স্ত্রীর সাথে ব্যভিচার সংক্রান্ত মোকদ্দমায় রসূলুল্লাহ স.-এর রায় এবং খুলাফায়ে রাশেদীনের শাসনকালের ঘটনাসমূহ শক্তিশালী দলীল।
ধর্ষণ ঃ বলপ্রয়োগে বা জোরপূর্বক যেনা সম্পর্কে তাওরাতের (বাইবেলের) বিবরণ নিম্নরূপ: ‘কিন্তু যদি কোন পুরুষ বাºত্তা কন্যাকে মাঠে পাইয়া বলপূর্বক তাহার সহিত শয়ন করে, তবে তাহার সহিত শয়নকারী সেই পুরুষ মাত্র হত হইবে; কিন্তু কন্যার প্রতি তুমি কিছুই করিবে না। সে কন্যাতে প্রাণদণ্ডের যোগ্য পাপ নাই। কেননা সেই পুরুষ মাঠে তাহাকে পাইয়াছিল। ঐ বাºত্তা কন্যা চীৎকার করিলেও তাহার নিস্তারকর্তা কেহ ছিল না’। (বাইবেল, দ্বিতীয় বিবরণ, ২২ ঃ ২৫-২৭) ইসলামী বিধানের সাথে বাইবেলের উপরোক্ত বিধানের পূর্ণ সামঞ্জস্য রয়েছে। জারজ সন্তান ঃ জারক সন্তান সম্পর্কে তাওরাতের বিবরণ নিম্নরূপ ঃ ‘জারজ ব্যক্তি সদাপ্রভুর সমাজে প্রবেশ করিবে না। তাহার দশম পুরুষ পর্যন্তও সদাপ্রভুর সমাজে প্রবেশ করিতে পারিবে না’ (বাইবেল, দ্বিতীয় বিবরণ, ২৩ ঃ ২)। ইসলামী বিধানের সাথে এই বক্তব্য সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কারণ ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী জারজ সন্তান নিষ্পাপ। কারণ তার জন্মসূত্রের উপর তার কোন ভূমিকা নেই।
ইয়াহূদী ধর্মে ব্যভিচারের শাস্তি ঃ উপরে উল্লিখিত তাওরাতের বাণী মোতাবেক ইয়াহূদী ধর্মে অবৈধ যৌনাচার একটি গর্হিত কাজ এবং মারাত্মক দণ্ডযোগ্য অপরাধ। এই অপরাধের শাস্তি পাথর নিক্ষেপে (রজম) মৃত্যুদণ্ড। আল্লাহ তা’আলা হযরত মূসা আ.-কে নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি যেন উপরোক্ত শাস্তি কার্যকর করার মাধ্যমে সমাজ থেকে দুষ্টাচার লোপ করার ব্যবস্থা করেন। ইয়াহূদী পণ্ডিতবর্গ হযরত ঈসা আ.-কে একাধারে অপরাধী ও আল্লাহর বিধান লংঘনকারী সাব্যস্ত করার জন্য যে ষড়যন্ত্র করেছিল তা থেকেও তাদের ধর্মে যে ব্যাভিচারের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড তা প্রমাণিত হয়। ইয়াহূদী অধ্যাপক ও ফরীশীগণ ব্যভিচারে ধৃতা এক নারীকে হযরত ঈসা আ.-এর দরবারে উপস্থিত করে বললো, হে গুরু! এই নারী ব্যভিচারে লিপ্ত অবস্থায় ধরা পড়েছে। ব্যবস্থায় মোশি (মূসা আ.) এই প্রকার লোককে পাথর মারার আজ্ঞা আমাদের দান করেছেন। তবে আপনি কি বলেন? তারা তাঁকে বিপদে ফেলার জন্যই একথা বললো, যাতে তাঁর নামে দোষারোপ করার সূত্র পেতে পারে। (দ্র. বাইবেলের নূতন নিয়ম, যোহন, ৮ ঃ ১-৬)। হযরত ঈসা আ.-এর বিরোধী ইয়াহূদী পণ্ডিতদের উদ্দেশ্য ছিল, দ্বিবিধ। হযরত ঈসা আ. যদি তাওরাতের বিধানমত অভিযুক্ত নারীকে ব্যভিচারের শাস্তির রায় না দেন তবে তারা তাঁর বিরুদ্ধে এই বলে অপপ্রচার চালানোর সুযোগ পাবে যে, একদিকে তিনি নিজেকে নবী বলে দাবি করছেন এবং তাওরাতের সত্যতা স্বীকার করছেন, অপরদিকে শাস্তির রায় না দিয়ে তাওরাতের বিধান সংঘন করছেন। আবার তিনি যদি তাওরাতের বিধামত উপরোক্ত নারীর মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন, তবে সমসাময়িক ইয়াহূদী রাজার আইনে তাঁকে সহজেই অপরাধী সাব্যস্ত করা যাবে যে, তিনি রাষ্ট্রীয় বিধান লংঘন করেছেন। উল্লেখ্য যে, তৎকালীন ইয়াহূদী রাষ্ট্রীয় বিধানে ব্যভিচারের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড বাতিল করা হয়েছিল। হযরত ঈসা আ. নবী সুলভ প্রজ্ঞার মাধ্যমে যথার্থ রায়ই প্রদান করলেন। তিনি অভিযুক্ত নারীর প্রতি ইশারা করে ইয়াহূদী পণ্ডিতদের বললেন, তোমাদের বক্তব্য অনুযায়ী, এই নারী যে গর্হিত অপকর্মে লিপ্ত হয়েছে, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কখনো সেই গর্হিত অপকর্মে লিপ্ত হয়নি সে তাকে পাথর মারুক। এই রায় শোনামাত্র ইয়াহূদী পণ্ডিতবর্গ একে একে স্থান ত্যাগ করলো, শুধু ঐ নারীই একাকী দাঁড়িয়ে থাকলো। হযরত ঈসা আ. তাকে তওবা করালেন এবং উপদেশ দিয়ে বিদায় দিলেন। (দ্র. বাইবেলের নূতন নিয়ম, যোহন, ৮ ঃ ৭-১১) অনুরূপ একটি ঘটনা মহানবী স.-এর সময়ও ঘটেছিল। আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। ইয়াহূদীরা মহানবী স.-এর দরবারে উপস্থিত হয়ে তাঁকে অবহিত করলো যে, তাদের মধ্যকার একজোড়া নারী-পুরুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে ধরা পড়েছে। মহানবী স. তাদের জিজ্ঞেস করলেন, ব্যভিচারের শাস্তি (রজম) সম্পর্কে তোমরা তাওরাতে কী বিধান পাচ্ছো? তারা বললো, আমরা এসব অপরাধীকে অপমান করি ও বেত্রাঘাত করি। (ইয়াহূদী পণ্ডিত ও পরে ইসলাম গ্রহণকারী) আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. তাদের বলেন, তোমরা মিথ্যা বলছো। তাওরাতে রজম (পাথর নিক্ষেপে হত্যা)-এর বিধান রয়েছে। তারা তাওরাত কিতাব নিয়ে এলো এবং খুলে তাদের এক ব্যক্তি রজম সম্পর্কিত নির্দেশটি হাত দিয়ে ঢেকে রেখে তার আগে-পরের অংশ পড়লো। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম রা. বললেন, তোমার হাত সরাও। অতএব সে তার হাত সরালে রজম সম্পর্কিত বিধা দেখা গেলো। পাঠকারী লোকটি বললো, হে মুহাম্মদ! আপনি সত্য কথা বলেছেন। তাতে রজম সংক্রান্ত বিধান বিদ্যমান আছে। অতএব রসূলুল্লাহ স. অপরাধীদ্বয় সম্পর্কে রায় প্রদান করলে তদনুযায়ী তাদের রজম করা হয়। ইবনে উমর রা. বলেন, আমি যেনাকারী পুরুষটিকে দেখেছি যে, সে স্ত্রীলোকটিকে পাথরের আঘাত থেকে রক্ষার জন্য তার দিকে ঝুঁকে পড়তো।
উপরোক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ তা’আলা আয়াত নাযিল করেন ঃ ‘আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা মীমাংসা করে না, তারাই কাফের’ (সূরা মাইদা, নং ৪৪)। ‘আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা মীমাংসা করে না, তারাই যালেম’ (ঐ সূরা, নং ৪৫) ‘আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুসারে যারা মীমাংসা করে না, তারাই পাপাচারী’ (ঐ সূরা, নং ৪৭)।
ইয়াহূদী রাষ্ট্রে এক পর্যায়ে তাওরাতের উপরোক্ত দণ্ডবিধি বলবৎ থাকলেও পরবর্তী কালে এবং হযরত ঈসা আ.-এর আবির্ভাবের বহু পূর্বে ইয়াহূদী পন্ডিতবর্গ, আইনজ্ঞ, রাজন্যবর্গ ও জনসাধারণ উপরোক্ত বিধানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে বাতিল করে দিয়েছিল। রসূলুল্লাহ স. ইয়াহূদীদেরকে তাওরাতের বিধান বাতিল করে তদস্থলে মানব রচিত বিধান প্রবর্তনের কারণ জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, আমাদের রাষ্ট্রীয় আইনেও রজমের বিধান কার্যকর ছিল। কিন্তু আমাদের সমাজের সম্মানিত ব্যক্তিগণ ব্যাপকভাবে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়ে। তারা উপরোক্ত অপকর্ম করে ধরা পড়লে তাদেরকে বিচারের আওতায় না এনে ছেড়ে দেয়া হতো। কিন্তু কোন সাধারণ লোক উপরোক্ত অপরাধে ধৃত হলে তাকে আইনের আওতায় এনে রজম (পাথর নিক্ষেপে হত্যা) করা হতো। পরিশেষে আমরা বললাম, তোমরা সকলে এসো, আমরা সম্মিলিতভাবে একটি শাস্তির বিধান চালু করি, যা গণ্যমান্য ও সাধারণ সকলের বেলায় প্রযোজ্য হবে। সুতরাং আমরা ব্যভিচারের শাস্তি মুখমণ্ডলে কালি মাখানো এবং বেত্রাঘাত করাকেই স্থির করে নিলাম, পাথর নিক্ষেপের পরিবর্তে। এই বিবরণ শুনে রসূলুল্লাহ স. বলেন, হে আল্লাহ! আমিই প্রথম ব্যক্তি যে তোমার নির্দেশ ‘রজম’-এর শাস্তি কার্যকর করে তোমার বিধানকে পুনর্জীবিত করলো, যা তারা বাতিল করে দিয়েছিল।
যেনা সম্পর্কে তাওরাত ও ইনজীলের বিধান ঃ ইয়াহূদীদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত (বাইবেলের পুরাতন নিয়ম) এবং খৃষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ তাওরাত ও ইনজীল (বাইবেলের নূতন নিয়ম)-এর যেনা (ব্যভিচার) সম্পর্কে যে আলোচনা রয়েছে তার সারমর্ম হলো ঃ আল্লাহ তাআলা তাঁর নবীকে নির্দেশ দিচ্ছেন ঃ (ক) যেনা একটি দুষ্টাচার; (খ) যে নারী-পুরুষ যেনায় লিপ্ত হবে তাদের উভয়কে কঠোর শাস্তি দিতে হবে; (গ) শাস্তির ধরন ও তা কার্যকর করার পদ্ধতি হলো- (১) উভয়ের মৃত্যুদণ্ড হবে এবং (২) তা প্রকাশ্য দিবালোকে (৩) তাদের প্রতি পাথর নিক্ষেপ (রজম) করে কার্যকর করতে হবে; (ঘ) এই পদ্ধতিতে সমাজ থেকে উপরোক্ত দুষ্টাচারকে উৎখাত করতে হবে।
পাশ্চাত্যের ইয়াহূদী-খৃষ্টান পণ্ডিতগণের সমালোচনা ঃ এ পর্যন্ত ব্যভিচার সম্পর্কে বাইবেলে যেসব বক্তব্য আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, আল-কুরআনের বক্তব্যের সাথে তার হুবহু সামঞ্জস্য রয়েছে। অপরাধ সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি, অপরাধের শাস্তি এবং তা কার্যকর করার পদ্ধতি সব দিক থেকেই মিল রয়েছে। পাশ্চাত্যের ইয়াহূদী ও খৃষ্টান পণ্ডিতগণ ইসলাম ধর্ম যেনার যে শাস্তি অনুমোদন করেছে, তাকে তারা বর্বর, মানবতা বিরোধী, আদিম ও বর্তমান সভ্যতার জন্য লজ্জাজনক ইত্যাদি শব্দে সমালোচনা করে থাকেন। কিন্তু তারা কখনো নিজেদের তাওরাত-ইনজীলের পাতাগুলো উল্টিয়ে দেখেন না যে, তাদের ধর্মও ইসলাম ধর্মের অনুরূপ ব্যভিচারের একই শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছে। আসলে তাদের সমালোচনার উদ্দেশ্য ভিন্নতর। তারা যেভাবে তদের নিকট রক্ষিত আল্লাহর কিতাবকে পশ্চাতপটে নিক্ষেপ করে সত্য পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তদ্রুপ মুসলমানদেরকেও তারা আল-কুরআন থেকে বিচ্ছিন্ন করে পথভ্রষ্ট করতে চায়। আল-কুরআন আমাদের সতর্ক করে দিচ্ছে ঃ ‘ইয়াহূদী-খৃষ্টানরা তোমার প্রতি কখনো সন্তুষ্ট হবে না, যাবত না তুমি তাদের জাতির অনুসরণ করো’ (সূরা বাকারা ঃ ১২০)। ‘হে মুমিনগণ! যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে (ইয়াহূদী-খৃষ্টান), তোমরা যদি তাদের দলবিশেষের অনুসরণ করো, তবে তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর আবার কাফির বানিয়ে ছাড়বে’ (সূরা আল ইমরান ঃ ১০০)। (চলবে)
লেখক : মুহাম্মদ মনজুর হোসেন খান, পাঠান পাড়া, (খান বাড়ী) কদমতলী, সদর, সিলেট-৩১১১।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।