Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

রানীশংকৈলে দু’দেশের মানুষের মিলন মেলা

| প্রকাশের সময় : ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আশরাফুল আলম, রানীশংকৈল থেকে : প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে কোচল ও হরিপুর চাপসা সীমান্তে গতকাল (শুক্রবার) ভারত ও বাংলাদেশের চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মানুষের মিলন মেলায় পরিণত হয়। প্রতি বছর পাথর কালীর মেলায় বিজিবি ও বিএসএফের সম্মতিতে পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই এই সাক্ষাতের সুযোগের সৃষ্টি হয়। কাঁটাতারের বেড়া তাদের আলাদা করে রাখলেও আবেগ পৌঁছে যায় দেশকালের সীমানা ডিঙ্গিয়ে। মেলা স্থলে কথা হয় নীলফামারী থেকে আসা তফিজুলের সাথে। তিনি বলেন, ১০ বছর পর ছোট ভাইয়ের দেখা পেয়ে চোখে আনন্দ যেন বাঁধ মানছিল না ভাই তোফাজ্জল হোসেনকে দেখে। সে থাকে ভারতের জলপাইগুড়ি জেলার রায়গঞ্জ থানায়। অনেক দিন দেখা না হলেও রক্তের টান ঠিকই তাদের হাজির করেছে দু-দেশের সীমান্তে কাঁটাতারের পারে।
বাংলাদেশের ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, রংপুর এবং ভারতে কোচবিহার, আসাম, দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, মালদা, কলকাতাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাই-সাইকেল, অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, মিনিবাস যোগে মেলা স্থলে হাজির হয়। এরপর চলে প্রতিক্ষার প্রহর। শুক্রবার বিজিবি ও বিএসএফের সম্মতিতে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলে এ মিলন মেলা। সীমান্ত এলাকার স্থানীয়রা জানান, ভোর থেকে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা এসে জড়ো হয় সীমান্তে, দীর্ঘ দিন বিচ্ছিন্ন থাকা একে অপরের সঙ্গে মিলিত হবার এ সুযোগ হাত ছাড়া করতে চায় না কেউ। প্রতি বছর দু-দেশের স্বজনদের এ মিলন মেলা এখানে এক বিরল দৃশ্যের জন্ম দেয়।
লাখো মানুষ কথা বলেছে এই দিনে তাদের প্রিয় স্বজনদের সাথে। দু-দেশের সীমারেখা কাঁটাতার দিয়ে আলাদা করা হলেও আলাদা করা যায়নি তাদের ভালোবাসার টান। দীর্ঘ দিন দূরে থাকা, দেখা হওয়ায় অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। আবার কেউ প্রিয়জনের দেখা না পেয়ে বাড়ি যেতে হয় চোখে পানি নিয়ে।
দুই দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা সাধারণ মানুষ টাকা পয়সার অভাবে পাসপোর্ট-ভিসা করতে পারেন না তারা এই দিনটির অপেক্ষায় থাকেন। তারা সারা বছর অপেক্ষা করে এই দিনটির জন্য। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আগে থেকেই জানিয়ে দেন স্বজনরা। কে কোথায় দেখা করবেন। ভারতীয় অধিবাসীরা কাঁটাতারের পাশে এলে সেখানে বাংলাদেশের ও লাখো নারী পুরুষ সমবেত হয়।
জামাই ইন্দ্রনাথ ভারতীয় সীমান্তে ও শ্বাশুড়ী গীতারানী বাংলাদেশ সীমান্তে সঙ্গে নাতী-নাতনী সবাই সবার সাথে আবেগ কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথা বলছে। রানী বসাক  বলেন, ৫ বছর পর জামাই ও মেয়ের দেখা পেলাম, একে অপরকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা থাকলেও পারেনি। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে মাঝখানে কাঁটাতারের বেড়া। ইচ্ছে হচ্ছিল একটু ছুঁয়ে দেখার, কিন্তু ছুঁতে পারিনি। জড়িয়ে একটু চিৎকার করে কান্না করি, তবে হয়তো দীর্ঘ দিনের জমে থাকা কষ্টগুলো থেকে একটু রেহায় পেতাম- বলছিলেন ভারতের মাকড় হাটে থাকা ছোট বোন মরজিনাকে দেখতে আসা দিনাজপুরের আবুল হোসেন।
পাথর কালীর মেলার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নগেন কুমার পাল জানান, প্রতিবারের ন্যায় এবারও দুই বাংলার মিলন মেলা পালিত হয়েছে। ১৯৭৪ সালে পর উপজেলার সীমান্ত এলাকা পাক ভারত বিভক্তির আগে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অধীনে ছিল। এ কারণে দেশ বিভাগের পর আত্মীয়-স্বজনেরা দু-দেশে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তাই সারা বছর কেউ কারো সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারেন না। তারা অপেক্ষা করে থাকে এই দিনটির জন্য। থানা অফিসার ইনর্চাজ রেজাউল করিম বলেন, শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সেখানে দায়িত্ব পালন করছে।



 

Show all comments
  • huzzatul arefin ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৮:২১ এএম says : 0
    Kob valo laglo onekden pore ake oporer sate deka kora
    Total Reply(0) Reply
  • আকবর আলী ৩ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৫:০৭ পিএম says : 0
    মিলনের এই বাধাটুকু তুলে দিতে পারাটাই এই সভ্য বিশ্বে অধিক মানবিক হতো।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ