Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

টুঙ্গিপাড়ায় জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি ও আলোচনা সভা

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২২, ৯:২৯ পিএম

গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের উদ্যোগে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৭তম শাহাদাত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২২ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ এবং আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১১টায় টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতার সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি, শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি, শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয় এবং ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে নিহত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সকল সদস্যের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া-মোনাজাত করা হয়। এরপর গোপালগঞ্জে প্রতিষ্ঠিত বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ গবেষণা ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেন অতিথিবৃন্দ। তারা এই গবেষণা ইনস্টিটিউটকে আধুনিকীকরণ ও বিশ্বমানের করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। বিকেলে গোপালগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির শেখ ফজলুল হক মনি স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভায় বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ‘বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ’ বিষয়ে রচনা প্রতিযোগিতা, চিত্রাঙ্কন ও স্ব-রচিত কবিতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক এমপি ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা কেবল একটি ব্যক্তি বা পরিবারকে হত্যা নয়, তারা চেয়েছিল বাংলাদেশ ও স্বাধীনতাকে হত্যা করতে। কিন্তু তারা জানতো না বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশ থেকে আলাদা করা যায় না। এটি মুদ্রার এপিট আর ওপিঠ। বঙ্গবন্ধু ২৩ বছর লড়াই সংগ্রাম করেছেন। তিনি ধাপে ধাপে জাতিকে প্রস্তুত করেছেন। জেলা খানায় থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি নির্দেশ দিয়েছেন ছাত্র ধর্মঘটের। এভাবে প্রতিটি আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু। পাকিস্তানের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে বিজয়ী হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। তারপরেও তাকে ক্ষমতা দেয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুর হুকুম ছাড়া একটি পাখিও আকাশে উড়েনি। তার নির্দেশে সবকিছু হয়েছে। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তান থেকে কারামুক্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডন যান তখন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিট এর প্রধানমন্ত্রী তার গাড়ির দরজা খুলে দিয়েছিলেন। এ নিয়ে ব্রিটিশ সংসদে নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়। তখন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- শেখ মুজিব এমন একজন নেতা যিনি স্বপ্ন দেখেছেন, দেখিয়েছেন এবং তা বাস্তবায়ন করেছেন, যেটি পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল। একারণেই আমি তাঁর গাড়ির দরজা খুলে দিয়েছি। এমন নেতাই হলেন বঙ্গবন্ধু।’

আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু সারা বিশ্বের কথা বলতেন। তিনি পৃথিবীর নির্যাতিত মানুষের কণ্ঠস্বর ছিলেন। তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল তুলনাবিহীন। মাত্র সাড়ে তিন বছর রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিলেন। এমন কোনো সেক্টর নেই যেখানে হাত দেননি বঙ্গবন্ধু। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ অনেক কাজ বাকি ছিল। রাস্তা নাই, কাজ নাই, অবকাঠামো নাই। প্রত্যেকটি সেক্টরকে সাজানোর কাজে হাত দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। সকল ক্ষেত্রে তিনি সফল হয়েছিলেন। পাকিস্তান আজকে একটি অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্র। আর বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল।’

২১ আগস্টের নির্মম ঘটনা তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, ‘২১ আগস্টের মাস্টার মাইন্ড ছিলেন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান। এটি আমার কথা নয়, আদালতের দ্বারা প্রমাণিত। যাদের কাছে এতিমের টাকা নিরাপদ নয়, তাদের কাছে রাষ্ট্রের সম্পদ, জনগণের সম্পদ কীভাবে নিরাপদ হবে? আমি আপনি যদি সজাগ না হই তাহলে কিন্তু তারা সফল হবে। আর আমরা যদি সচেতন থাকি, ঐক্যবদ্ধ থাকি তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র কখনোই বাস্তবায়ন হবে না। আজ আমাদের প্রতিজ্ঞা হউক-আমরা বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিশোধ নেবো। দারিদ্রমুক্ত শোষণমুক্ত সোনার বাংলা বাস্তবায়ন করবো।’

সভাপতির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এমপি বলেন, ‘এই টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জন্মগ্রহণ করেছেন। সময়ের বিবর্তনে যার নাম, চিহ্ন মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়েছিল। তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু আজকে সেই পিতা মুজিব প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে ফিরে এসেছেন প্রবলভাবে। পিতা মুজিব জীবিতের চেয়েও অনেক বেশি জীবিত। যেই ঘাতকরা পিতাকে হত্যা করেছিল সেই ঘাতকরা আজকে আবার আস্ফালন করছে। তারা আরেকটি ’৭৫ ঘটাতে চায়। কারণ বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বিদেশে থাকার কারণে ষড়যন্ত্রকারীরা যা চেয়েছিল ৭৫ এ তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। তাদের ভয় ছিল বঙ্গবন্ধুর উত্তরাধিকার বেঁচে থাকলে এদেশে আবার বঙ্গবন্ধু ফিরে আসবেন। হয়েছেও তাই আমাদের রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। এতো কিছু সত্তে¡ও খুনিরা ২১ বারের বেশি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টা চালিয়েছে। আগস্টের এই সময়ে খুনিদের ঘৃণা জানাই। আমরা পিতার আদর্শকে অনুসরণ করবো। একটি শোষণহীন, বৈষম্যহীন, আদর্শ জাতিরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে তৈরি করবো- এ হোক আামাদের অঙ্গীকার।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী এমপি বলেন, ‘আমরা যেই বিষয়েই পড়ি না কেন, পিতার যে আদর্শ সেটিকে ধারণ করতে হবে। নারী পুরুষের সমতার বিষয়ে তরুণ মুজিবের কী অবস্থান ছিল, বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণে তরুণ মুজিবের কী ভূমিকা ছিল- সেটিকে যদি আমরা বাস্তব জীবনে ধারণ করতে না পারি তাহলে কিন্তু আমরা পিছিয়ে যাবো। মূল স্রোতে থেকে ছিটকে পড়বো। এক সময় বঙ্গবন্ধু যে শিক্ষা দর্শন দিয়েছিলেন সেটি থেকে আমরা সরে গিয়েছিলাম। তাঁর দর্শনকে আত্মস্থ করে যদি আমরা বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করতে পারি তাহলে তার আত্মা শান্তি পাবে। শিক্ষকদের প্রতি অনুরোধ থাকবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে কর্মজগতে প্রবেশের প্রয়োগিক শিক্ষার বিষয়ে তাদের আগ্রহ তৈরি করতে হবে। কর্মপ্রস্তুতির জন্য একজন শিক্ষার্থীকে তৈরি করতে হবে। তাদের মধ্যে মনোজগতিক পরিবর্তন আনতে হবে। প্রশিক্ষণ দিতে। মানবিক পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। তাদের দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে পারলে শিক্ষার্থীরা সহজেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পারবে।’

আলোচনা সভায় স্বাগত বক্তব্যে জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে বুকে বুলেট বিদ্ধ করা হয়েছিল তার দৈর্ঘ্য ছিল ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল। রক্তাক্ত হয়েছিল লাল সবুজের বাংলাদেশ। খুনিরা জানতো না পিতাকে হত্যার পরেও অনেক বেশি শক্তি নিয়ে ফিরে আসবেন তিনি। বঙ্গবন্ধু সারা বিশে^ সর্বজনীন হয়ে ফিরে আসে। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলকে সেদিন বিদীর্ণ করা হয়েছিল। সেই থেকে বেদনা আমাদের সাথী। একই সাথে শক্তি জোগায়। কারণ পিতা আর্দশ রেখে গেছেন। সংবিধানে চার মূল বুনিয়াদ রেখে গেছেন- গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও বাঙালি জাতীয়তাবাদ।’

তরুণদের উদ্দেশ্যে ভিসি ড. মশিউর রহমান বলেন, ‘পিতা মুজিবকে যদি ধারণ করা না যায়, তাহলে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে উন্নত হয়েও কোন লাভ হবে না। আমরা পিছিয়ে থাকবো। তোমাদেরকে ইতিহাস চেতনা এতো প্রগাঢ়ভাবে জানতে হবে যাতে বঙ্গবন্ধুকে, মুক্তিযুদ্ধকে ও বাংলাদেশকে কেউ কখনো কুলষিত করতে না পারে। আসুন জ্ঞানচর্চার মধ্য দিয়ে আমরা পিতা হত্যার প্রতিশোধ নেই। শোক থেকে শক্তিতে বারংবার ফিরে যাই। সেটিই আমাদের মূল উপজীব্য হোক। বঙ্গবন্ধুর রেখে যাওয়া পবিত্র আমানত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা। তাঁদেরকে আলিঙ্গনে রাখা আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। মুকুটহীন রাজা হয়ে বঙ্গবন্ধু সবসময় আমাদের মাঝে বেঁচে রইবেন। বঙ্গবন্ধুর কন্যারা বাংলাদেশ হয়ে আমাদের মাঝে মিশে থাকুক।’

আলোচনা সভায় শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো-ভিসিস্থপতি প্রফেসর ড. নিজামউদ্দিন আহমেদ, গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এ কিউ এম মাহবুব, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এমদাদুল হক চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খান, জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, জেলা পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দিকা। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল হোসেন। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কলেজের অধ্যক্ষ, জাতীয় বিশ^বিদ্যালয়ের ডিন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ গোপালগঞ্জের ১৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ