Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পদ্মা নদীতে বালু লুটের হিড়িক

মো. শওকত হোসেন, লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) উপজেলা থেকে | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীতে চলছে স্থানীয় বালুখেকোদের বালু লুটের হিড়িক। সরকারি নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে বালুদস্যুরা শরিয়তপুর, জাজীরা, লৌহজং, টঙ্গীবাড়ি পর্যন্ত পদ্মা নদীর অত্যন্ত ১৫টি পয়েন্ট থেকে দিনে-রাতে অবৈধভাবে বালু তুলছে। প্রতিদিন অর্ধশতাধিক শক্তিশালী ড্রেজারের সাহায্যে নদী থেকে অবৈধভাবে তোলা হচ্ছে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ ঘনফুট বালু। উত্তোলিত এসব বালু প্রতি ঘনফুট বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৪০ থেকে ৬০ পয়সা দরে। শত শত বাল্কহেডে এসব বালু পৌঁছানো হচ্ছে ঢাকা, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলায়।
কর্মরত শ্রমিকরা জানায়- প্রশাসন, প্রভাবশালীসহ বিভিন্ন মহলকে ম্যানেজ করেই চলছে ড্রেজারগুলো। এদিকে বালুমহল ইজারা না দেয়ায় সরকার হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব তেমনি অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করায় নদীভাঙন বেড়েই চলেছে। ডহরি-তালতলা খাল দিয়ে দিনে-রাতে অনিয়মতান্ত্রীতভাবে ওই বালু বহনকারী বাল্কহেড চলাচলে উত্তাল ঢেউয়ের কারণে ভাঙনের মুখে বিলীন হচ্ছে তীরবর্তী ঘেষা বসতভিটা। বালুখেকোদের কারণে সর্বগ্রাসী হচ্ছেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দা।
সরেজমিনে লৌহজং উপজেলার পদ্মা নদীর তীরবর্তী এলাকা ঘুরে, তীরবর্তী বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এককালের রাক্ষসি পদ্মা নদী ওই এলাকার ১৫টি গ্রামের কয়েক লাখ পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। গত দুই বছর ধরে সরকারের পক্ষ থেকে গৃহহীনদের ২ শতাধিক পরিবারকে আশ্রায়ণ প্রকল্পের ঘর ও জমি দেয়া হয়েছে। তার পরেও নদীর ভাঙন কবলিত মানুষের আজও মাথা গোঁজার ঠাঁই মেলেনি ওই নদী ভাঙা গ্রামের শত শত পরিবারের। স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর পূর্বে লৌহজং উপজেলায় ভাঙন কবলিত এলাকায় চর জেগে ওঠায় সর্বস্বান্ত পরিবারগুলো বাঁচার স্বপ্ন দেখেন। এরইমধ্যে জেগে ওঠা চরের ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে লৌহজং উপজেলার প্রভাবশালী বালুদস্যুদের উপজেলার প্রায় ২৫টি বালু সিন্ডিকেটের ও তাদের সহযোগীদের। ইতিমধ্যে চরের ৫০০ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। বালুখেকোরা পদ্মা নদী থেকে তারা দীর্ঘদিন ধরে দিনে ও রাতের আঁধারে জেগে ওঠা চর ও নদীর বিভিন্নস্থানে অপরিকল্পিতভাবে ড্রেজার বসিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তলন করে বিক্রি করছে। সেদিকে প্রশাসনের কোন নজর নেই। এলাকাবসীরা বলছে সরকার জ্বালানি তেল সাশ্রয় করতে লোডশেডিং ও রাত ৮টার পর দোকান ও মার্কেট বন্ধ ঘোষণা করছে। আর এসব ড্রেজার ও হাজার হাজার বাল্কহেড ২৪ ঘণ্টা চলাচলে প্রতিদিন কয়েক লাখ লিটার ডিজেল খরচ করছে সেদিকেও কোন নজর নেই। এসব সিন্ডিকেট উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ও পদ্মার পাড়ে বালুর ব্যবসা জমজমাট করে তুলেছে। তারা ড্রেজার দিয়ে গ্রামের পুকুর ও ডোবা ভরাটের মাধ্যমে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরও জানা গেছে, অবৈধ ড্রেজিংয়ের ফলে নদী ভাঙনের হাত থেকে নিজেদের বাড়িঘর রক্ষা করতে প্রভাবশালীদের বাধা দেয়ায় ইতোমধ্যে তাদের (বালুখেকো) হুমকির স্বীকার হয়েছেন অনেকে। ওই হুমকির পর বালুখেকোদের ভয়ে এলাকায় কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না।
জানা গেছে, জেলার অধিকাংশ এলাকার নদীতে বালুগ্রাসী সিন্ডিকেট চক্র দীর্ঘদিন থেকে অপরিকল্পিত ও অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। ফলে প্রতিবছরই এ উপজেলায় নদীভাঙনের ঘটনা বেড়েই চলেছে। এছাড়া ডহরি-তালতলা খালে বালুখেকোদের বেপরোয়াভাবে বাল্কহেড চলাচলে সর্বগ্রাসী হচ্ছেন নদীর তীরবর্তী বাসিন্দা।
এ ব্যাপারে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী। এ বিষয়ে লৌহজং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল আউয়াল জানান, পদ্মা নদীর শরিয়তপুর ও জাজিরা পয়েন্ট থেকে এসব বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে আমরা যানতে পেরেছি। এছাড়া ডহরিখালে অনিয়ন্ত্রীত বাল্কহেড চলাচলে তীরবর্তী ভাঙনের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। শিগ্রই আমরা বাল্কহেড চলাচল বন্ধের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ