Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকার জ্বালানিকে রাজনৈতিক পণ্য ও দুর্নীতির হাতিয়ার বানিয়েছে

সেমিনারে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৩ এএম

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার জ্বালানিকে রাজনৈতিক পণ্য ও দুর্নীতির হাতিয়ার বানিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, জ্বালানি সংকটের প্রধান কারণ হচ্ছে দুর্নীতি। সরকার জ্বালানিকে ‘রাজনৈতিক পণ্যে’ পরিণত করার পাশাপাশি এই খাতকে দুর্নীতির হাতিয়ার হিসেবে নিয়েছে। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপির উদ্যোগে ‘দুর্নীতি জ্বালানি সঙ্কটের উৎস’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

দেশে গণতন্ত্র ও জবাবদিহি না থাকার কারণে সব সেক্টরে দুর্নীতি হচ্ছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ বর্গীদের সরকার। ছোটবেলায় মায়েরা গান শোনাতেন, খোকা ঘুমালো, পাড়া জুড়ালো, বর্গী এলো দেশে। আজ এ সরকার বর্গীদের ভূমিকা পালন করছে। এখন আমাদের বাচ্চাদের ঘুম পাড়াতে হবে, আওয়ামী লীগ এলো দেশে-এ কথা বলে। কেননা এই সরকার দেশকে সম্পূর্ণভাবে ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয় বলে এদের কোনো জবাবদিহিতা নেই।

প্রধানমন্ত্রী বার বার চক্রান্তের কথা কেন বলছেন প্রশ্ন রেখে মির্জা ফখরুল বলেন, তাহলে এত বছর ধরে যে দেশ চালালেন এবং বললেন যে, টেরোরিজমকে উধাও করে দিয়েছেন। সেখানে আবার সেই চিন্তা আসছেন কেন? আসলে সম্পূর্ণভাবে প্রতারনার মধ্য দিয়ে, জনগনকে বোকা বানিয়ে এই দেশটাকে চালাচ্ছে তারা।

এখন মানুষ নিজেরাই জেগে উঠতে শুরু করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ সুমন নামের একজনকে হাতিরঝিল থানায় নিয়ে বলা হয়েছে, সে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আসলে তাকে অত্যাচার-নির্যাতন করেই মেরে ফেলা হয়েছে। জনগন আজকে নিজেরাই রাস্তা দখল করেছে, গেইট ঘেরাও করেছে, থানা ঘেরাও করেছে। আজকে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছে চা শ্রমিকরা নুন্যতম দাবি নিয়ে। এ সময় আবারো সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বাতিল, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার, নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করে একটি জনগনের সরকার প্রতিষ্ঠার দাবি জানান বিএনপি মহাসচিব।

এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন দলের স্থায়ী কমিটির ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, যিনি ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারের জ্বালানি ও বিদ্যুত মন্ত্রী ছিলেন। জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ, ক্ষমতাসীনদের ব্যবসায়িক লুন্ঠনের চিত্র তুলে ধরা হয়। এছাড়াও বর্তমানে সৃষ্ট সংকট উত্তরণে জ্বালানি তেল আমদানিতে বর্তমান শুল্ক, কর বাবদ ব্যয়কৃত ৩৪% অনতিবিলম্বে মওকুফ, জ্বালানি তেলের মূল্য ৫ আগস্টের পূর্বাস্থায় পুণঃনির্ধারণ, রেশন কার্ডের বিপরীতে খাদ্য সরবারহ, ওএমএসের আওতায় নিত্য দ্রব্যের আইটেম বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের প্রণোদনা প্রদান, নতুন গ্যাস ফিল্ড আবিস্কার, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নির্ভর বিদ্যুত উৎপাদন পলিসি গ্রহন, বিপিসিতে জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণসহ স্বল্প, মধ্য মেয়াদী ১৬ দফা করণীয় তুলে ধরা হয় প্রবন্ধে।

মূল প্রবন্ধে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) গত ৮ বছরে বিশ্ববাজারের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রি করে ৪৮ হাজার কোটি টাকা লাভ করেছে। সরকার চাইলে জ্বালানির দাম না বাড়িয়ে মুনাফার টাকায় আরও প্রায় ২১ মাস জ্বালানি সরবরাহ করতে পারত।

বিপিসি এক ব্যারেল তেল বিক্রি করে প্রায় ১৫ হাজার টাকা লাভ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার এ ক্ষেত্রে পুরোপুরি ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিতে কাজ করেছে, জনকল্যাণে নয়। বিইআরসিকে পাশ কাটিয়ে যে হারে জ্বালনি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে, সেটি ‘লুণ্ঠনমূলক’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বিএনপির আরেক স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জ্বালানি তেল আর বাজারের পণ্য নেই, রাজনৈতিক পণ্য হয়ে গেছে এবং এর রাজনৈতিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। যারা মূল্য সাধারণ মানুষের পকেট থেকে দিতে হচ্ছে। গত ১৩ বছরে একটি কূপও খনন করা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, অন্য দেশে পাঁচটি কূপ খনন করলে একটিতে তেল পাওয়া যায়, আর আমাদের দেশে তিনটি কূপ খনন করলে একটিতে পাওয়া যায়। তারপরও কূপ খনন করা হয়নি। এর পেছনে আর্থিকভাবে আওয়ামী লীগের লাভবান হওয়ার বিষয় জড়িত বলে তিনি অভিযোগ করেন।

পরিবেশ ও জ্বালানি বিশেষজ্ঞ এম জাকির হোসেন বলেন, বাংলাদেশে জ্বালানি ও বিদ্যুত খাতের যে মাস্টার প্ল্যান করা হয় তা বিদেশি কোনো একটা কোম্পানি ও সংস্থা দিয়ে করানো হয়। কেন? বাংলাদেশে কী জ্বালানি বিশেষজ্ঞ নেই? এই মাস্টার প্ল্যান রাষ্ট্রের নিরাপত্তা, প্রাণ-প্রকৃতির সুনির্দিষ্টভাবে অগ্রাধিকার, মানুষের অগ্রাধিকার থাকবে। সে অগ্রাধিকার কিভাবে একটা বিদেশি কোম্পানি নিশ্চিত করে?

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক জহির উদ্দিন স্বপনের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন-দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সেলিমা রহমান, সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মজুমদার, অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স-এ্যাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ইউনির্ভাসিটি টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান প্রমুখ।

সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থাযী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, কেন্দ্রীয় নেতা ইসমাইল জবিউল্লাহ, মশিউর রহমান, আবদুস সালাম আজাদ, শিরিন সুলতানা, সেলিম ভুঁইয়া, এবিএম মোশাররফ হোসেন, মীর সরফত আলী সপু, তাইফুল ইসলাম টিপু, আকরামুল হাসান, মিডিয়া সেলের রুমিন ফারহানা, শায়রুল কবির খানসহ বিভিন্ন পেশাজীবী নেতারা।#



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ