রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
স্বামী ও শশুর শাশুড়ির দাবিকৃত যৌতুকের ৫ লাখ টাকা দিতে না পারায় ও স্বামীর পরকিয়ায় বাঁধা দেয়ায় প্রকাশ্য দিবালোকে মোসা. নাজমুন নাহার নুপুর (৩২) নামের এক গৃহবধূর ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে তার শশুর বাড়ির লোকজন। এতে করে নির্যাতনের ফলে নষ্ট হয়ে গেছে তার গর্ভের ৪৫ দিনের সন্তান। এলোপাথাড়িভাবে মারপিট করায় পেটের ওপর আঘাত পরায় অন্তঃস্বত্তা নারীর গর্ভপাত হয়ে যায়। মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার সিডিখান এলাকার চরদৌলতখান গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে আদালতে মামলা দায়ের করা হলে হামলাকারী শশুড় সামসুদ্দিন বেপারী, ভাসুর রহমান বেপারী, জা নাছরিন বেগম ও দেবর হাসেম বেপারীকে পুলিশ আটক করে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
গতকাল সোমাবার বিচারপ্রার্থী গৃহবধূকে মামলা তুলে নিতে শশুর বাড়ির লোকজন বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও জেল থেকে বের হয়েই হত্যা করা হবে বলে হুমকি দিয়ে আসছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অপরদিকে গৃহবধূকে নির্যাতনের সময় তার ছেলে বেল্লাল হোসেন বেপারী (১৩) মাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসলে তার মাথায় আঘাত করা হলে সেও ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গর্ভের সন্তান নষ্ট আর এক ছেলে হাসপাতালে চিকিৎসাধিন অন্যদিকে স্বামী আর শশুর বাড়ির লোকজনের হুমকি-ধামকিতে দিশেহারা হয়ে পড়লেও ন্যায় বিচারের আশায় দ্বারে দ্বারে ছুঁটছে ভূক্তভোগী গৃহবধূ।
জানা যায়, পারিবারিক ভাবে ২০০৮ সালে সিডিখান এলাকার চর দৌলতখান গ্রামের সামসুদ্দিন বেপারীর ছেলে মো. কাওছার বেপারীর সাথে পার্শ্ববর্তী সাহেবরামপুর এলাকার দক্ষিণ সাহেবরামপুর গ্রামের মো. কাঞ্চন ফকিরের মেয়ে মোসা. নাজমুন নাহার নুপুরের বিয়ে হয়। বিয়ের সময় দেয়া ৫ ভড়ি স্বর্ণালঙ্কার দেয়া হলেও তা লম্পট স্বামী কাওছার বেপারী জুয়া খেলে সব শেষ করে ফেলে। পরে বিদেশ যাওয়ার কথা বলে স্ত্রীকে ৩ লাখ টাকা যৌতুক আনতে চাঁপ প্রয়োগ করে। মেয়ের সুখের জন্য সে সময়ে ৩ লাখ টাকা দেয়া হলে তা দিয়ে স্বামী কাওছার দুবাই যায়। সেখান থেকে ফিরে সৌদি আরব যায়। কিন্তু তাতেও তার মন ভরেনা। তিনি ফের ইতালি যাওয়ার জন্য শশুর বাড়িতে আবার টাকা দেয়ার জন্য চাঁপ প্রয়োগ করে। কিন্তু অসহায় গৃহবধূ মোসাঃ নাজমুন নাহার নুপুরের পিত্রালয়ের লোকজন তা দিতে না পারায় বেড়ে যায় নির্যাতনের মাত্রা। অপরদিকে একাধিক পরকিয়ার সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে প্রতারক স্বামী কাওছার। আর পরকীয়ার বিষয়টি ১৩ বছরের ছেলের সামনে ধরা পড়লে ছেলে এবং স্ত্রী বাঁধা দিলে শুরু হয় মা ছেলের ওপর নির্যাতন। যদিও পরে উপায়ন্তর না দেখে স্বামী কাওছার স্ত্রীকে অন্তঃস্বত্তা রেখে ফের সৌদি আরব চলে যায়। কিন্তু স্ত্রী আর ছেলের ওপর নির্যাতন চালিয়ে যেতে নিজের পিতা মাতা ভাই ভাবিদের ফোনে নির্দেশ দিতে থাকে। আর তার জেরে গত ৮ জুন বিকেলে নির্মম নির্যাতন চালানো হয় গৃহবধূর ওপর।
এ ব্যাপারে সিডিখান এলাকার ইউপি চেয়ারম্যান চাঁনমিয়া সিকদার বলেন ‘ঐ গৃহবধূকে মারধোর করা ঐ পরিবারের নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। তারা আইনি প্রক্রিয়াকেও ভয় পায় না। ঐ পরিবার সমাজে একটি উচ্ছৃঙ্খল পরিবার হিসেবেই এলাকার মানুষ জানে।’
এনিয়ে একাধিকবার সালিশ মিমাংসাকারী সাহেবরামপুর এলাকার সাবেক ইউপি সদস্য বাহারুল ইসলাম বলেন ‘স্বামী কাওছারকে ইতালি যেতে টাকা না দিলে নির্যাতন করা হবে তা তারা সালিশ মিমাংসায় বসলেও প্রকাশ্যেই প্রস্তাব দিত। কিন্তু তাদের দাবিকৃত টাকা দিতে গৃহবধূ নুপুরের পরিবার অপরাগতা প্রকাশ করতো। আমরা মিলে মিশে থাকতে বলতাম। কিন্তু শেষের মারধোর করাটা ছিল একেবারেই অমানবিক।’
এ ব্যাপারে গৃহবধূ মোসাঃ নাজমুন নাহার নুপুর কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন ‘এর আগেও ছাদ থেকে নামার সময় আমার জা নাছরিন বেগম আমাকে পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। তখন আমি বেঁচে থাকলেও আমার পেটে থাকা ৪ মাসের বাচ্চা নষ্ট হয়ে যায়। আমার স্বামী আমাকে এর বিচার করা হবে বলে আশ্বাস দেয়ায় তখন মামলা করা হয়নি। তবে পরে বুঝতে পারি আমাকে পরিবারের সিদ্ধান্তে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করতে চেয়েছিল তারা। আমি আমার ওপরে করা যুলুম নির্যাতনের বিচার দাবি করি।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।