Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাপেক্স-এর সক্ষমতা বৃদ্ধি সত্যেও চুক্তি স্বাক্ষরের দুবছর পরে ভোলায় টবগি-১ গ্যাস কুপের খনন শুরু করল গ্যাজপ্রম

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০২২, ১১:৩১ এএম

চুক্তি স্বাক্ষরের প্রায় দু বছর পরে ভোলায় একটি গ্যাস কুপের খনন শুরু করল রাশিয়ার রাষ্ট্রয়ত্ব প্রতিষ্ঠান ‘গ্যাজপ্রম’। শুক্রবার ভোলার ‘টবগিÑ১’ কুপের খনন শুরুর আগে জ¦ালানী বিভাগের সিনিয়র সচিব মোঃ মাহবুব হোসেন আনুষ্ঠানিকভাবে এর উদ্বোধন করেন। টবগিÑ১ কুপে ২০Ñ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদের ব্যপারে আশাবাদী জ¦ালানী বিশেষজ্ঞগন। তবে সচিবের সাথে উপস্থিত বাপেক্স-এর ব্যাবস্থাপনা পরিচালক মোহম্মদ আলী সাংবাদিকদের জানান, খনন সম্পন্ন সহ প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষন করেই মজুদ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে। এসময় পেট্রোবাংলার চেয়রম্যান নাজমুল আহসান সহ জ¦ালানী ও খনিক সম্পদ মন্ত্রনালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাগনও উপস্থিতি ছিলেন। চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছরের জুনের মধ্যে গ্যাজপ্রম ভোলার ‘ইলিশাÑ১’ ও ‘ভোলা নর্থÑ২’ কুপ দুটিও খনন করবে বলে জানিয়েছে বাপেক্স-এর দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে।
২০১৭-১৮ সালে বাংলাদেশ খনিজ অনুসন্ধান ও উন্নয়ন সংস্থাÑবাপেক্স ভুতাত্তিক জরিপ করে ভোলার ৩টি স্থানে গ্যাসের সম্ভাব্য মজুদ চিঞ্হিত করে। বাপেক্স থেকে এসব গ্যাস ক্ষেত্রের নামকরন করা হয় ‘ইলিশাÑ১’, ভোলা নর্থÑ২’ ও টবগীÑ১’ নামে। ইতোমধ্যে এসব গ্যাসকুপ খননে গ্যাজপ্রমের সাথে চুক্তি হয়। তবে বাপেক্স-এর সক্ষমতা আগের চেয়ে বৃদ্ধির পরেও ভোলায় গ্যাসকুপ খননে গ্যাজপ্রমের সাথে চুক্তি নিয়ে আগাগোড়াই বিশেষজ্ঞ মহলে ভিন্ন মত ছিল। এমনকি গ্যাজপ্রমের চুক্তির কারণেই গত তিন বছর বাপেক্সকে এসব কুপ খনন থেকে বিরত রাখার কথাও বলছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ¦ালানী বিশেষজ্ঞ।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৭ জানুয়ারী ‘ভোলা নর্থÑ১’ কুপটির ৩ হাজার ৩৪৮ফুট গভীর থেকে প্রথম পরিক্ষামূলকভাবে গ্যাস উত্তোলন করে বাপেক্স। এটি ছিল দেশের ২৭তম গ্যাস কুপ। সেখানে ৬শ বিলিয়ন ঘনফুটের বিশাল গ্যাস মজুদ রয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারনা দিয়েছে বাপেক্স-এর প্রকৌশলীগনের। ২০১৭ সালের ৯ ডিসেম্বর ভেদুরিয়ার কাছে ‘ভোলা নর্থÑ১’ কুপটির খনন কাজ শুরু করে বাপেক্স। ২০১৮-এর ১৫ জানুয়ারী কুপটিতে গ্যাসের মজুদ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারনা লাভ করেন বাপেক্স-এর প্রকৌশলীগন এবং ২৬ জানুয়ারী দুপুরে কুপ থেকে গ্যাস উত্তোলন করে মজুদ নিশ্চিত করে বাপেক্স। টবগী-১’ সহ খনন পরিকল্পনাধীন ‘ইলিশা-১, ভোলা নর্থ-২ নিয়ে ভোলায় গ্যাস কুপের সংখ্যা দাড়াবে ৯টিতে।
’৯৫ সালের ৮ নভেম্বর দ্বীপ জেলা ভোলার শাহবাজপুরে গ্যাসের সন্ধান লাভের পরেও আজ পর্যন্ত পরিúূর্ণ ব্যাবহার নিশ্চিত হয়নি। শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রে এপর্যন্ত যে ৪টি কুপ খনন করা হয়েছে তার মজুদের পরিমান ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন ঘনফুট। বর্তমানের সরকারী-বেসরকারী ৪টি বিদ্যুৎ উৎপাদন ইউনিট ছাড়াও একটি টাইলস ফ্যক্টরী ও কিছু আবাসিক গ্রাহক মিলিয়ে শাহবাজপুর থেকে দৈনিক গড়ে ৪৫-৪৬ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উত্তোলন হচ্ছে।
এর আগে ২০১৭ সালের অক্টোবরে ভোলার মুলাইপতনে ‘সহবাজপুর-ইষ্ট ১’ কুপে আরো ৭শ বিলিয়ন বা ৭০হাজার কোটি ঘনফুট গ্যাস আবিস্কারের ফলে ভোলায় গ্যাস মজুদ আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। এর পরে মুলাইপতনে আবিস্কৃত গ্যাস ক্ষেত্রটি থেকে ৩২ কিলোমিটার উত্তরে ভোলা সদর উপজেলার ‘ভোলা নর্থ-১’ কুপে নতুন করে গ্যাসের সন্ধান মেলায় ভোলার গ্যাস জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির বিজ্ঞান সম্মত সম্ভবনা নিশ্চিত হয়েছে বলে কারিগড়ি বিশেষজ্ঞগন জানিয়েছেন।
তবে সুষ্ঠু কর্ম পরিকল্পনার অভাব সহ ভোলায় গ্যাসের বিশাল মজুদ ব্যাবহারে বিগত প্রায় ২৭ বছরেও কোন অগ্রগতি হয়নি। ফলে প্রকৃতির এ অপার দান আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে কোন অবদান রাখেনি। এমনকি দেশ যুড়ে গ্যাসের মারাত্মক সংকটের মধ্যেও ভোলার বিশাল গ্যাসের মজুদ অব্যবহ্রত রয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোলায় আবিস্কৃত বিপুল গ্যাস-এর বানিজ্যিক ব্যবহার নিশ্চিত করণে একাধিকবার জাতীয় গ্যাস গ্রীডে সংযুক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
এরই প্রেক্ষিতে বিষয়টি নিয়ে সম্ভাব্যতা সমিক্ষা হলেও সে আলোকে বিশাল ব্যায় বহুল এ প্রকল্পে এখনো কোন সিদ্ধান্ত গ্রহন সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। দক্ষিন ও দক্ষিণ-পশ্চিামাঞ্চলের শিল্প ও বনিক মহল সহ ওয়াকিবাহাল মহল ভোলা থেকে বরিশালÑগোপালগঞ্জÑবাগেরহাট হয়ে খুলনা পর্যন্ত জাতীয় গ্রীডে গ্যাস সঞ্চালনের দাবী জানিয়েছেন। তবে ভোলা থেকে ২৮ কিলোমিটার প্রসস্ত মেঘনা নদী অতিক্রম করে লক্ষ্মীপুর হয়ে ফেনীতে জাতীয় গ্যাস গ্রীডে সরবারহের একটি প্রস্তাবনাও রয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রকৃত মজুদ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বৃহত্বর জনগোষ্ঠীর সুবিধা সহ জাতীয় অর্থনীতিতে প্রভাব হিসেব করেই ভোলার গ্যাস কোন পথে জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হবে, সে আলোকে সিদ্ধান্ত গ্রহনের তাগিদ দিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জ¦ালানী বিশেষজ্ঞগন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ