Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদারীপুরে নিহত ও আহত পরিবারের সদস্যরা ভালো নেই রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি

২১ আগস্ট ট্র্যাজেডি

মাদারীপুর থেকে স্টাফ রিপেোটার | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০২২, ৪:২১ পিএম

আমার প্রথম জন্মদিন ছিলো ২০০৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর। মায়ের মুখে শুনেছি বাবা ঢাকা থেকে নতুন জামা নিয়ে আসবে। নতুন পোষাক পড়ে ধুমধাম করে আমার প্রথম জন্মবার্ষিকী পালন করা হবে। কিন্তু বাবা আর ফিরে আসেননি। ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় আমার বাবা মারা যায়। তখন হয়তো কিছুই বুঝিনি। আস্তে আস্তে বড় হবার পর সব বুঝতে পেরেছি। চলতি বছর ১ সেপ্টেম্বর আমার ১৮ বছর পূর্ণ হবে।কিন্তু এতো বছর পার হলেও বাবাসহ হতাহাতদের অকাল মৃত্যুর বিচারের রায় হলেও তা এখনোও কার্য্যকর হয়নি। তাই সরকারের কাছে আমার একটাই দাবী, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অপরাধীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্য্যকর করার। তাহলে এই ঘটনায় আমার বাবাসহ যারা প্রাণ হারিয়েছেন,তাদের আত্মা শান্তি পাবে। এভাবে কথাগুলো বললেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগ নেতা ২১ আগস্ট গ্রেনেট হামলায় নিহত লিটন মুন্সির মেয়ে নুসরাত জাহান মিথিলা।

শুধু মিথিলার পরিবার নয়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভিনিউ-এ অনুষ্ঠিত শেখ হাসিনার সমাবেশে বর্বরোচিত গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের নিহত ৪ পরিবারসহ আহত ৩ পরিবারের সদস্যরা ভাল নেই। একই ঘটনায় আহতরা পঙ্গুত্ব নিয়ে দুঃসহ জীবন-যাপন করছেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় মাদারীপুরের নিহত ৪ জন হলো, রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগ নেতা নিহত লিটন মুন্সি, একই উপজেলার কদমবাড়ি ইউনিয়নের মহিষমারি গ্রামের সুফিয়া বেগম, কালকিনি উপজেলার কয়ারিয়া ইউনিয়নের রামারপোল গ্রামের নাছিরউদ্দিন ও ক্রোকিরচর গ্রামের যুবলীগ নেতা মোস্তাক আহাম্মেদ ওরফে কালা সেন্টু।
আহতরা হলেন, কালকিনি পৌরসভার বিভাগদি গ্রামের হালান হাওলাদার, কৃষ্ণনগর গ্রামের কবির হোসেন, ঝাউতলা গ্রামের সাইদুল হক সরদার।

খোঁজ-খবর নিয়ে জানা গেছে, রাজৈর উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের চানপট্টি গ্রামের যুবলীগ নেতা নিহত লিটন মুন্সির মা আছিয়া বেগম ও বাবা আইয়ুব আলী মুন্সি তাদের একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আজও তারা কষ্টে দিন কাটায়।
নিহতের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মিথিলা প্রতিমাসে ৫ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছে।এছাড়াও ঢাকার মিরপুরে একটি ফ্লাট বাসা ও ২০১৮ সালের রোজার সময় ৫ লাখ টাকা সরকারী ভাবে পেয়েছে। তাই সরকারের কাছে তারা কৃজ্ঞতা প্রকাশ করে দ্রুত বিচারের দাবী করেছেন। হামলার ঘটনায় অপরাধীদের বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানাই। তাহলে এই ঘটনায় আমার বাবাসহ যারা প্রাণ হারিয়েছেন, তাদের আত্মা শান্তি পাবে।
নাসিরের বড় ছেলে মাহাবুব হোসেন(২২)জানান, বাবার উপার্জনেই চলতো সংসার।বাবার মৃত্যুর পর টাকার অভাবে আমাদের লেখাপড়া প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।কোন কোনদিন অর্ধপেট আবার কোনদিন খাবারই জোটেনি।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দিয়েছেন।এখন সেই টাকার লভ্যাংশ দিয়ে আমার মা, আমি আর আমার ভাই নাজমুলকে নিয়ে কোনরকম বেঁচে আছি।এ ছাড়া আমাদের খবর আর কেউ রাখেনি।
গ্রেনেড হামালায় নিহত যুবলীগ নেতা মোস্তাক আহাম্মেদ ওরফে কালা সেন্টু। তার বাড়ি কালকিনি উপজেলার ক্রোকিরচর।সে বরিশালের মুলাদি নানা বাড়িতে বড় হয়েছে।এ কারনেই তার লাশ মুলাদিতেই দাফন করা হয়।কথা হয় সেন্টুর স্ত্রী আইরিন সুলতানার সাথে।তিনি ঢাকার মার্কেন্টাইল ব্যাংকে চাকরি করেন।এক মেয়ে আফসানা আহমেদ রীদিকে নিয়ে ঢাকায় থাকেন।তিনি বলেন,এমন দু:খজনক স্মৃতি কি ভোলা যায়,না মুছে যায়।মেয়েকে নিয়ে ঢাকায় থাকি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ১০ লাখ টাকার অনুদান পেয়েছিলাম।সে সম্বল আর চাকরি থেকে যা পাই, তা দিয়েই মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভাবছি।তিনি ঢাকায় একা থাকেন,মহিলা মানুষের একা থাকা বিড়ম্বনা উল্লেখ করে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর যদি মৃতদের পরিবারের জন্য একটা বাসস্থানের ব্যবস্থা করতেন, তাহলে উপকৃত হতাম।
হালান হাওলাদার বলেন, শরীরের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর পরিমান স্প্রিন্টার রয়েছে। স্প্রিন্টার জ্বালা-যন্ত্রণা অসহ্য লাগে মাঝে মাঝে। হাটাচলা করতে খুব কষ্ট হয়। সে কারণে তেমন কাজ করতে পারি না। তারপরেও সংসারের খরচ মেটানোর জন্য ফেরি করে মুরগি বিক্রি করি। করোনার কারনে এখন তা বন্ধ আছে। আমরা যারা আহত আছি প্রধানমন্ত্রী যদি আমাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতো তা হলে ভালো হতো। আহত অনেকে বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট থেকে প্রতি মাবে ভাতা পায়। আমি ভাতা পাই না। প্রধানমন্ত্রী যেন আমাদের কালকিনির আহত তিন জনের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেন। আহত অনেকে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ফ্লাট পেয়েছে। আমি ফ্লাট পাইনি। আমার থাকার জন্য স্থায়ী বসত ঘরের প্রয়োজন।
আহত কবির হোসেন বলেন, গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হয়ে বাম হাতের ৫ আঙ্গুল বাকা হয়ে আছে। এ হাত দিয়ে কোন ভারি কাজ করতে পারি না। দুইবার আমি মাত্র এক লাখ ২০ হাজার টাকা পেয়েছি। ২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী সবাইকে যে টাকা দিয়েছে আমি সে টাকা পাইনি। তখন আমি টাকা রোজগারের জন্য মালায়েশিয়া ছিলাম। বিদেশে গিয়েও হাতের সমস্যার কারনে তেমন কাজ করতে পারিনি। বাধ্য হয়ে দেশে চলে আসি কয়েক মাস পূর্বে। এখন বেকার জীবন যাপন করছি। প্রধানমন্ত্রী সবাইকে যে এককালীন টাকা দিয়েছে আমাকেও যেন সে টাকা দেয়। প্রতিমাসে যেন ভাতার ব্যবস্থা করেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা চাই।
কালকিনির ঝাউতলা গ্রামের সাইদুল হক সরদার বলেন, শেখ হাসিনাকে দেখার জন্য আস্তে আস্তে মঞ্চের ১০ থেকে ১২ হাত দূরত্বে চলে আসি। দাঁড়িয়ে মন দিয়ে নেত্রীর বক্তব্য শুনতে থাকি। বক্তব্য প্রায় শেষ। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু শেষ করতে পারেননি তার মধ্যে বোমা ফাটানোর শব্দ। সে ঘটনায় আহত হয়ে শরীরে স্পিন্টার নিয়ে যন্ত্রণাকর জীবন-যাপন করছি। শরীরে স্পিন্টারের যন্ত্রনায় তেমন ভারি কাজ করতে পারছি না। ডাক্তার দেখিয়েছি। ডাক্তার বলে উন্নত চিকিৎসা দরকার। আমি উন্নত চিকিৎসা কি ভাবে করবো। এত টাকা পয়সাতো আমার নেই। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানাই তিনি যেন আমাদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। যাতে করে শরীর থেকে স্পিন্টার বের হয়ে যায়। বাঁচার তাগিদে বিভিন্ন কাজ কর্ম করেও ভালো কিছু করতে পারছি না। ছোট একটা চায়ের দোকান দিয়ে সংসার চালাই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ