বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
লোডসেডিং মূক্ত দক্ষিণাঞ্চলে ত্রুটিপূর্ণ বিতরন ও সরবারহ ব্যবস্থায় ওজোপাডিকো’র লক্ষ লক্ষ গ্রাহক বিদ্যুৎ নিয়ে প্রতিনিয়ত চরম দূর্ভোগ আর বিড়ম্বনার শিকার। খোদ বরিশাল মহানগরীর প্রায় ১০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎ নিয়ে দিনরাত নানামুখি যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ । দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলা সদর ছাড়াও কয়েকটি উপজেলায় ‘ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী-ওজোপাডিকো’র দূর্বল বিতরন ও সরবারহ ব্যবস্থা যথেষ্ঠ ভোগান্তিতে রেখেছে সাধারন মানুষ থেকে শিল্প ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও।
পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখনো জাতীয় গ্রীডে যুক্ত না হওয়ায় উৎপাদিত সিমিত বিদ্যুতের সমুদয়ই পশ্চিম জোনে বিতরনের ফলে লোডসেডিং-এর বাইরে থেকেও বিড়ম্বনার কোন শেষ নেই দক্ষিণাঞ্চলে। এ অঞ্চলে ১১ কেভি ফিডার থেকে শুরু করে এলটি লাইন সহ ১১/.০৪ ট্রান্সফর্মার সহ অন্যান্য স্পর্ষকাতর বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলোর যথাযথ রক্ষনাবেক্ষনের সাথে পূণর্বশন জরুরী হলেও সে লক্ষে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। এমনকি গত কয়েক বছর ধরে বরিশাল,যশোর ও গোপালগঞ্জ শহরের ১১ কেভী সঞ্চালন লাইনসমুহ ভূগর্ভে প্রতিস্থাপনের কথা শোনা গেলেও আদৌ তা আলোর মুখ দেখবে কিনা সে বিষয়ে সন্দিহান কতৃপক্ষ। তবে দুটি প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি বরিশাল মহনগরীতে ৩টি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন পূণর্বাশণের পাশাপাশি আরো ২টি নতুন নির্মান ও ৩৩ কেভি কিছু লাইন নির্মিত হয়েছে। কিন্তু এ মহানগর সহ দক্ষিণাঞ্চলে ১১ কেভি ও ১১/.০৪ কেভি লইনসমুহ পূণর্বাশন হয়নি গত ২৫ বছরেও।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা সদর ছাড়াও ৩টি উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরন ও সরবারহের দায়িত্ব উত্তরাধিকার সূত্রে পিডিবি’র কাছ থেকে ওজোপাডিকো গ্রহন করে বানিজ্যিক ভিত্তিতে কাজ করছে বিগত ১৫ বছরেরও বেশী সময়। কিন্তু গত দেড় দশকেও প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণাঞ্চলে সঠিক পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে পারেনি বলে অভিযোগ গ্রাহকদের। অথচ কোম্পানী গঠনের পরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে অন্তত ৪ গুন। প্রতিষ্ঠানটিতে অনেক দক্ষ ও পেশাদারী প্রকৌশলী সহ বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে পিডিবি’র চেয়ে প্রায় দ্বিগুন বেতনে। কিন্তু গ্রাহকদের সেবার মান বৃদ্ধির পরিবর্তে ক্রমশ তলানীতে ঠেকছে।
খোদ বরিশাল মহানগরীর ২৮টি ১১ কেভীর এইচটি ফিডারে দিনরাত নানা মুখি বিড়ম্বনা অব্যাহত থাকলেও তা থেকে উত্তরনের তেমন কোন কর্ম পরিকল্পনা নেই। ১১/.০৪ কেভি ট্রান্সফর্মারের ফিউজ পুড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে এলটি ও এইচটি জাম্পার, লুপ আর ব্রেকারে গোলযোগ এ নগরীর নিয়মিত ঘটনা।
ফলে ‘আকাশে মেঘ জমলেই বরিশাল মহানগরীর বিদ্যুৎ চলে যায়’ এ প্রাবাদ থেকে এখনো বের হতে পারেনি ওজোপাডিকো। এবারের আষাঢ়Ñশ্রাবনের দুঃসহ গরমে বিদ্যুৎ বিভ্রাট গ্রাহকদের দূর্ভোগের চরম সীমা অতিক্রম করে।
বরিশাল মহানগরীর ২০-৩০বছরের পুরনো এইচটি ও এলটি লাইনই ত্রুটিপূর্ণ। এলটি লাইনগুলো ইনসুলেটেড হলেও সময়মত পরিবর্তন সহ যথাযথ রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে তার অবস্থাও করুন। এ নগরীর কোন ১১/.০৪ ট্রান্সফর্মারে ড্রপ আউট সহ সংযুক্ত এলটি লাইনগুলোতে এমসিপি না থাকায় গোলযোগ লেগেই আছে। বেশীরভাগ ট্রান্সফর্মারের এলটি লাইনগুলোর ভারসাম্যতা না থাকায় ঘন ঘন এইচটি ফিউজ পুড়ে যাচ্ছে। আর ট্রান্সফর্মারগুলোতে ড্রপআউট না থাকায় একটি ফিউজ পুড়ে গেলে পুরো ফিডার বন্ধ করে তা যুড়তে হচ্ছে।
নগরীর বেশীরভাগ ফিডারের ৫০Ñ৬০টি করে ট্্রান্সফর্মার থাকায় গ্রাহকদের দূর্ভোগও বাড়ছে। ফলে কোন ফিডারে দৈনিক ৫টি ট্রান্সফর্মার ফিউজ পুড়ে গেলেও অন্য গোলযোগের বাইরেও ৫ বার লাইন বন্ধ করে ঐসব ফিউজ যুড়তে হচ্ছে।
এর বাইরেও নানামুখি গোলযোগের কোন শেষ নেই বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরন ব্যবস্থায়। খোদ বরিশাল মহানগরীর কোন অভিযোগ ও সেবা কেন্দ্রগুলোর জন্য সার্বক্ষনিক গাড়ী নেই। ফলে গ্রাহকদের অভিযোগের সুরাহা খুব দ্রুত হচ্ছে না। উপরন্তু কোন আবাসিক গ্রাহকের সার্ভিস লাইনের ত্রুটি দুর করতে ওজোপাডিকো’র সংশ্লিষ্ট অভিযোগ কেন্দ্রে খবর দেয়ার পরে দ্রুত সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তেমনি এসব অভিযোগের সুরাহা করতে যারা আসেন, তাদের হাতে নুন্যতম দুশ টাকা দিতে হচ্ছে রিক্সাভাড়া বাবদ। কারণ বিশাল মই নিয়ে অভিযোগ কেন্দ্র থেকে গ্রাহকের বাড়িতে যাতায়াতেই ১শ টাকা রিক্সা ভাড়া লাগছে।
অপরদিকে রাত ১০টার পরে বরিশাল মহানগরীর দুটি বিতরন বিভাগের ২৮টি ফিডারের প্রায় ৩ লাখ গ্রাহকের জন্য মাত্র দুটি কথিত ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার’ খোলা থাকে। কিন্তু এ বিশাল মহানগরীর এত বিপুল সংখ্যক গ্রাহককে মাত্র দুটি কথিত সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে কি সেবা প্রদান সম্ভব, তা ওজোপাডিকো’র দায়িত্বশীলগন না বুঝলেও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন গ্রাহকগন। রাত ১০টার পরে কোন গ্রাহকের বিদ্যুৎ লাইনে গেলযোগ হলে তার সমাধান মিলতে কয়েক ঘন্টা থেকে সকালও হয়ে যাচ্ছে।
বরিশাল মহানগরীর মত পটুযাখালী, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী শহরেও একই পরিস্থিতি। তবে দ্বীপজেলা ভোলা সহ কয়েকটি শহরের অবস্থা আরো করুন।
এসব ব্যাপারে ওজোপাডিকো’র নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী আবু হাসানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, আমরা গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পৌছে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তবে বরিশাল সহ ওজোপাডিকো’র প্রায় সব এলাকার বিদ্যুৎ লাইনগুলো দীর্ঘদিনের পুরনো ও মেয়াদত্তীর্ণ বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সব বিতরন ও সরবারহ লাইন পূণর্বাশনে প্রকল্প প্রনয়নের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আগামী বছর পাঁচেকের মধ্যে সব বিতরন লাইন পূণর্বাশন সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি। তবে দাতার অভাবে বরিশাল, যশোর ও গোপালগঞ্জ শহরে ভ’গর্ভে ১১ কেভি লাইন প্রতিস্থাপনের প্রকল্প প্রস্তাবনাটি এখনো পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন লাভ করেনি বলেও জানান তিনি ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।