বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার উচ্চ শিক্ষার একমাত্র বিদ্যাপীঠ শহীদ স্মৃতি সরকারি কলেজ। কলেজটিতে শিক্ষক সঙ্কট আর শিক্ষকদের দলাদলিতে ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। ফলে চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে পাঠদান। ক্লাস না হলেও শিক্ষার্থীদের বাধ্য হয়ে অংশ নিতে হচ্ছে পরীক্ষায়। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ ও ভালো ফলাফল করা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এতে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবকরাও।
জানা গেছে, সমাজ সেবক দুদু মিয়া, শহীদুল হক, আমির হোসেন, রেজাউল করিম, এ.এম মোহাম্মদ ইসহাক (বীর প্রতীক)সহ বেশ কয়েকজন শিক্ষানুরাগীর প্রচেষ্টায় ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে কলেজটি প্রতিষ্ঠিত হয়। কলেজের প্রথম প্রিন্সিপাল ছিলেন এ.এম মোহাম্মদ ইসহাক (বীর প্রতীক)। কিন্তু বর্তমানে শিক্ষক সঙ্কট, অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও মেয়েদের কমন রুমসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত কলেজটি। কলেজের চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টুনি (দেয়াল) না থাকায় অবাধে বখাটে ছেলেরা ঢুকে পড়ছে কলেজে। বখাটেরা মেয়েদের প্রায় সময়ই উত্ত্যক্ত করে। আখাউড়ার সেরা বিদ্যাপীঠ হলে ও শিক্ষক স্বল্পতার জন্য ভেঙে পড়েছে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা। আর শিক্ষকের মধ্যে রাজনৈতিক দলাদলি তো রয়েছে প্রকাশ্যে। প্রায় ৬ দশক ধরে কলেজটি সুনামের সঙ্গে আখাউড়া সহ আশেপাশের উপজেলা থেকে আসা শিক্ষার্থীদের আলোকিত করে আসছে।
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালে কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়। বতর্মানে ২২টি বিষয়ে ডিগ্রিসহ (পাস) উচ্চ মাধ্যমিক চালু রয়েছে। কলেজটিতে বিভিন্ন সেকশনে ৪৬ জন শিক্ষক থাকার কথা থাকলেও শিক্ষক আছেন মাত্র ২৬ জন, ভাইস প্রিন্সিপাল পদটিও শূন্য প্রায় ৮ বছর ধরে। আর ১২ জন শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে এখানে। এত কম শিক্ষক দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিক, ডিগ্রিসহ প্রায় ১ হাজার ৭শ’ শিক্ষার্থীকে পাঠদান চলছে। দীর্ঘদিন থেকে সমাজবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও কৃষি শিক্ষা এই ৩ বিভাগে কোন শিক্ষকই নেই। অথচ এই ৩ বিভাগে ১ হাজার ২শ’ শিক্ষার্থী রয়েছে। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে, যুক্তি বিদ্যায়, অর্থনীতিতে, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতিতে, প্রাণিবিজ্ঞানে, পরিসংখ্যানে, ব্যবস্থাপনায়, মার্কেটিংএ এবং হিসাববিজ্ঞানে ২ জনের মধ্যে ১ জন করে শিক্ষক আছেন। একমাস পর কলেজের হিসাববিজ্ঞানে শিক্ষক ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মো. আবু জামাল অবসরে চলে গেলে এই বিভাগের ২টি পদই শূন্য হয়ে যাবে। কলেজের পদার্থবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান বিভাগের দুইজন প্রদর্শকের পদও শূন্য রয়েছে। এদিকে কলেজের ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারীর ৯টি পদ থাকলেও কর্মরত রয়েছে ৬ জন। অফিস সহকারীর ৩টি পদ শূন্য থাকলেও রয়েছেন মাত্র একজন। আর এত শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে শিক্ষকদের। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা।
এদিকে, দীর্ঘদিন থেকে কলেজটিতে শিক্ষক সঙ্কট থাকায় ছাত্র-ছাত্রীদের পাঠদান মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, ক্লাস করতে এসে শিক্ষক সঙ্কট থাকায় ক্লাস না করতে পেরে হতাশা নিয়ে বাসায় ফিরছে শিক্ষার্থীরা। কয়েকজন শিক্ষার্থী ইনকিলাবকে জানান, দিন দিন ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা বাড়লেও বাড়ছে না শিক্ষক। আমরা হতাশায় ভুগছি। কি করবো, ভেবে পাচ্ছিনা। তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের প্রাণ হলো শিক্ষক, কিন্তু সেই প্রাণ আমাদের কলেজে নেই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কলেজ শিক্ষক বলেন, শিক্ষকদের দলাদলির কারণে কলেজটিতে দিনদিন লেখাপড়ার মান খারাপ হচ্ছে। অনেক শিক্ষকই সপ্তাহে একদিন আসেন। আবার কোন সপ্তাহে আসেনও না। শিক্ষকের মধ্যে দলাদলির কারণে এমন সুযোগটি নিচ্ছেন অন্য শিক্ষকরা।
কলেজের শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. আরিফ রব্বানি বলেন, বিষয়টি আসলে দুঃখজনক হলে সত্য, শিক্ষার্থীদের চাহিদামত ক্লাস আমরা নিতে পারছি না। আমার বিভাগে আমি একা থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদান, দাফতরিক কাজ আমাকেই সব কিছু দেখতে হচ্ছে। তিনি বলেন, একটি কলেজের ভালো ফলাফল তৈরিতে শিক্ষকদের বিকল্প কিছু নেই। আর সেটাই আমাদের কলেজে সঙ্কট।
কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল মো. আবু জামাল বলেন, ২০১৫ সালে কলেজটি সরকারিকরণ হওয়ার পর থেকে সকল নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় ৪৬ জন শিক্ষকদের মধ্যে মাত্র ২৬ জন শিক্ষক নিয়েই চলতে হচ্ছে আমাদের। শিক্ষকদের পাঠদান ছাড়া ও দাফতরিক কিছু কাজ রয়েছে সেগুলোও করতে পারছি না। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং শিক্ষা অধিদফতর এ বিষয়ে অবহিত রয়েছে। তাদের কাছে শূন্যপদের তালিকাও রয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, শিক্ষক কম হলেও রুটিন মাফিক ক্লাস আমরা নেয়ার চেষ্টা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।