পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নরসিংদীর রেলস্টেশনে তরুণীকে হেনস্তার অভিযোগে গ্রেফতার মার্জিয়া আক্তার শিলার জামিন শুনানির সময় পোশাক নিয়ে হাইকোর্টের একটি মন্তব্যকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
গতকাল বুধবার বিষয়টি হাইকোর্টের দৃষ্টিতে আনেন অ্যাডভোকেট মো. কামাল হোসেন। এ প্রেক্ষিতে বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন এবং বিচারপতি একে এম জহিরুল হকের ডিভিশন বেঞ্চ বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।
এই আইনজীবী আদালতকে বলেন, শামীম আশরাফ নামে এক ব্যক্তি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশকে হাইকোর্টের কাঠমোল্লাদের হাতে দিয়ে আমি দেশ ছেড়ে কোথাও যাব না’। এটি লিখে ওই ব্যক্তি হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন করেছেন। আদালতকে অবজ্ঞা করেছেন।
এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ আবুল হাশেমও আদালত নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করা ফেসবুকের একটি স্ক্রিনশট উপস্থাপন করেন। তিনি এসব মন্তব্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন।
আদালত তখন বলেন, মঙ্গলবার জামিন শুনানিকালে আমরা পোশাক নিয়ে কোনো মন্তব্য করিনি। আদেশে কিছু লিখিনি। শুধু ভিডিও দেখে প্রশ্ন করে জানতে চেয়েছি একেবারে গ্রাম্য এলাকায় এ ধরণের পোশাক পরে যাওয়া সমীচীন কি-না?
পরে আদালত আইনজীবীদের বলেন, ফেসবুকে কারা আদালত সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেছে, সুনির্দিষ্ট করে তাদের তথ্য দিন। আমরা বিষয়টি দেখবো।
এ বিষয়ে অ্যাডভোকেট মো. কামাল হোসেন বলেন, মঙ্গলবার মার্জিয়া আক্তার নামের এক নারীর জামিন শুনানি কালে আদালত যেসব প্রশ্ন তুলেছেন, মন্তব্য করেছেন সেটি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হওয়ায় আদালত সম্পর্কে বাজে মন্তব্য করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে অনেকে আদালত অবমাননা করেছেন। তাদের বিষয়ে তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশনা চেয়ে বিষয়টি আদালতের দৃষ্টিতে এনেছিলাম। আদালত সুনির্দিষ্ট করে নিয়ে যেতে বলেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৮ মে ভোর সোয়া ৫টার দিকে নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনে হেনস্তার শিকার হন এক তরুণ ও দুই তরুণী নারী। সকাল পৌঁনে ৬টা পর্যন্ত স্টেশনটির ১ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে তারা ঢাকাগামী ঢাকা মেইল ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সাড়ে ৫টার দিকে স্টেশনে অবস্থানরত মধ্যবয়সী এক নারী ওই তরুণীকে জিজ্ঞাসা করেন,‘এটা কী পোশাক পরেছ তুমি?’ তরুণী পাল্টা প্রশ্ন করেন, আপনার তাতে কী সমস্যা হচ্ছে?’ এ নিয়ে তাদের মধ্যে বাগবিতন্ডা হয়। সেই বিতর্কে যোগ দেন স্টেশনে অবস্থানরত আরও কয়েকজন ব্যক্তি। কেউ একজন দৃশ্যটি ভিডিও করে ফেসবুকে আপলোড দেন। ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ওই তরুণীকে ঘিরে রেখেছে একদল ব্যক্তি। এর মধ্যে এক নারী উত্তেজিত অবস্থায় তার সঙ্গে কথা বলছেন। বয়ষ্ক এক ব্যক্তিও তার পোশাক নিয়ে কথা বলছেন। একপর্যায়ে ওই তরুণী সেখান থেকে চলে যেতে চাইলে ওই নারী দৌঁড়ে তাকে ধরে ফেলেন। এ সময় অশ্লীল গালাগাল করতে করতে তার পোশাক ধরে টান দেন ওই নারী। কোনো রকমে নিজেকে সামলে দৌঁড়ে স্টেশন মাস্টারের কক্ষে চলে যান ওই তরুণী। এ সময় তার সঙ্গে থাকা দুই তরুণকেও মারধর করতে দেখা যায় ঘটনাস্থলে থাকা কয়েকজন ব্যক্তিকে।
পরে ভুক্তভোগী তরুণী জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করলে নরসিংদী মডেল থানা পুলিশ রেলস্টেশনে এসে তাদের ঢাকার ট্রেনে উঠিয়ে দেয়। ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ার পর এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তরুণী হেনস্তাকারীদের শাস্তির দাবি জানান তারা। এ প্রেক্ষিতে পুলিশ বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ও ৩০ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩২৩ ও ৫০৬ ধারায় একটি মামলা করে। মামলায় মো. ইসমাইল ও শিলা ওরফে মার্জিয়া আক্তারের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও একজন নারী ও ৮-১০ জন পুরুষকে আসামি করা হয়।
এ মামলায় নরসিংদী থেকে গ্রেফতার করা হয় মার্জিয়া আক্তার নামের এক নারীকে। মঙ্গলবার ওই নারীর জামিন শুনানি হয় হাইকোর্টে। পরে তাকে ৬ মাসের জামিন দেন আদালত।
শুনানিকালে হাইকোর্ট কিছু প্রশ্ন তোলেন ও মন্তব্য করেন। হাইকোর্টের বরাত দিয়ে অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন জানান, আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেছেন, গুলশান বনানীর মতো এলাকায়ও কোনো মেয়ে এ ধরণের পোশাক পরে রাস্তায বের হয় না। সেখানে গ্রামের মতো একটি জায়গায় পাবলিক প্লেসে এ রকম পোশাক পরা স্বাধীনতা হতে পারে না। যেমন খুশি তেমন পোশাকের নামে আমাদের সোসাইটির কালচারকে ধ্বংস করতে পারে না। ওই মেয়ে যে ধরণের পোশাক পরিহিত ছিল সেটা আমাদের দেশের সামাজিক অবস্থার সঙ্গে বেমানান। যে কারণেই প্রতিবাদের শিকার হয়েছিল। আদালতের এসব মন্তব্য সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেটিও ভাইরাল হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।