পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বছরে সাড়ে ৩২ লাখ কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করছে চট্টগ্রাম বন্দর। খোলা পণ্য হ্যান্ডলিং হচ্ছে প্রায় ১২ কোটি মেট্রিক টন। দেশের অর্থনীতির আকার ও প্রবৃদ্ধির সাথে বন্দরে আমদানি-রফতানিও বাড়ছে। সেইসাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বন্দরমুখী ভারি যানবাহনের সংখ্যা। প্রতিদিন গড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, লরি, ট্রেইলরসহ ভারি যানবাহন বন্দরে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন করছে। তবে এত বিপুল সংখ্যক যানবাহনের জন্য বন্দর এলাকায় স্থায়ী কোন টার্মিনাল নেই। নেই এসব যানবাহন পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থাও। ফলে বাধ্য হয়ে বন্দরমুখী যানবাহন সড়কেই পার্কিং করা হচ্ছে। তাতে আশপাশের সবকয়টি সড়কে যানজট এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বন্দরের আশেপাশে এবং শহরতলীতে গড়ে উঠেছে ১৯টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি)।
এসব ডিপোতে স্থান সঙ্কুলান না হওয়ায় ডিপোর সামনেই পার্কিং করা হচ্ছে পণ্য বোঝাই ভারি যানবাহন। নগরীর মাদারবাড়ি থেকে মাঝিরঘাট হয়ে বারিক বিল্ডিং, নিমতলা বিশ্বরোড হয়ে সাগরিকা, টোল রোড, আগ্রাবাদ থেকে ইপিজেড হয়ে কাটগড় সড়ক এবং সিটি আউটার রিং রোডে হাজার হাজার যানবাহনের অবৈধ পার্কিং। ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়তই এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। সড়কের এক অংশ থেকে যানবাহন সরিয়ে দেয়ার পর অন্য অংশে পার্কিং করছে পরিবহন চালকেরা। এর ফলে পুলিশি অভিযানেরও সুফল মিলছে না। সরকারকে নিয়মিত ভ্যাট, ট্যাক্স দিয়েও টার্মিনালের অভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছেন ভারি যানবাহনের মালিক ও চালকেরা। পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই অথচ নো-পার্কিং মামলা দিচ্ছে পুলিশ। জরিমানা দিতে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন মালিক শ্রমিকেরা।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরকে ঘিরে বিপুল সংখ্যক ভারি যানবাহনের জন্য পর্যাপ্ত টার্মিনাল না থাকায় এমন অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তাই টার্মিনালেই আসবে স্থায়ী সমাধান। পতেঙ্গায় চট্টগ্রাম বন্দরের নতুন কন্টেইনার টার্মিনাল চালু হচ্ছে। চলতি বছরের শেষদিকে চালু হচ্ছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। তখন বন্দরমুখী ভারি যানবাহনের পাশাপাশি সব ধরনের যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ পড়বে এসব সড়কে। ফলে জরুরি ভিত্তিতে পর্যাপ্ত পার্কিং, স্ট্যান্ড এবং টার্মিনাল করা না গেলে পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। আর তাতে বিঘ্নিত হবে চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রফতানি কার্যক্রম।
চট্টগ্রাম বন্দরের অদূরে নিমতলা বিশ্বরোডে অপরিকল্পিতভাবে বন্দরের জমিতে গড়ে ওঠে একটি ট্রাক টার্মিনাল। আকারে ছোট হওয়ায় টার্মিনালে পর্যাপ্ত যানবাহনের স্থান সঙ্কুলান হচ্ছে না। টার্মিনালকে ঘিরে আশপাশের সড়ক, অলিগলিতে রাখা হচ্ছে ট্রাক, কাভার্ডভ্যানসহ ভারি যানবাহন। এর ফলে পোর্ট কানেকটিং রোডের নিমতলা অংশে নিত্য যানজট হচ্ছে। ওই টার্মিনাল ছাড়া গত ৫০ বছরে বন্দর ও আশপাশের এলাকায় কোন টার্মিনাল গড়ে উঠেনি।
ভারি যানবাহন মালিক ও শ্রমিকরা জানান, টোল রোডের ইসহাক ডিপো থেকে বন্দর পর্যন্ত সড়কের একপাশের পণ্যবাহী পরিবহন পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা হলেও সেটি রাজনৈতিক ক্যাডার-মাস্তানদের নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তারা সেখানে নিজেদের মত অতিরিক্ত যানবাহনের পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করছে। এর ফলে বিশৃঙ্খলার কারণে টোল রোডটি প্রায় অচল হয়ে থাকছে। এতে যানবাহন চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে।
বন্দরের তরফে বলা হচ্ছে, প্রস্তাবিত বে-টার্মিনাল এলাকায় পাঁচ হাজার ট্রাক ধারণক্ষমতার একটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। তবে প্রকল্পটির এখনও সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের কাজ চলছে। টার্মিনাল বাস্তবায়ন হতে আরো অন্তত পাঁচ বছর সময় লাগবে। আর ততোদিনে চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রফতানি পণ্যবাহি যানবাহনের চাপও প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যাবে। ফলে এখন থেকে বিকল্প ব্যবস্থা না নেয়া হলে অচলাবস্থা আরো বাড়বে।
বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, বন্দর-হালিশহর ও পতেঙ্গা এলাকায় ছোট ছোট টার্মিনাল করার মত পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন, চট্টগ্রাম বন্দর উদ্যোগ নিলে খুব শিগগির টার্মিনাল নির্মাণ সম্ভব। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে এসব সংস্থাকে এ ব্যাপারে প্রস্তাবনাও দেয়া হয়েছে। আউটার রিং রোড চালু হওয়ার পর ওই সড়কের আশপাশে অপরিকল্পিতভাবে কিছু টার্মিনাল গড়ে উঠছে।
ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অপরিকল্পিত এসব টার্মিনালের কারণে অচলাবস্থার সৃষ্টি হবে। শুরু থেকেই এসব স্থাপনা পরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করতে সিডিএ ও সিটি কর্পোরেশনের প্রতি আহ্বান জানান সংশ্লিষ্টরা।
চিটাগাং চেম্বারের প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম বলেন, বন্দর এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে একাধিক টার্মিনাল করতে হবে। পতেঙ্গা টার্মিনাল চালু হচ্ছে। ডিসেম্বরে খুলে দেয়া হবে কর্ণফুলী টানেল। নদীর ওপারে আনোয়ারায় চায়না ইপিজেড এবং বে-টার্মিনাল চালু হলে যানবাহনের চাপ কয়েকগুণ বাড়বে। এ অবস্থায় টার্মিনাল এবং পার্কিংয়ের ব্যবস্থা করা না হলে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়বে। গতকাল সার্কিট হাউসে বিভাগীয় সমন্বয় সভায় তিনি বিষয়টি উত্থাপন করেছেন বলেও জানান।
তিনি বলেন, বে-টার্মিনালে ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে, তবে সেটি সময়সাপেক্ষ। কর্ণফুলী টানেল চালু হলেও নদীর ওপাড়েও টার্মিনাল নির্মাণ করা যাবে। তবে এখন পরিস্থিতি সামাল দিতে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনায় টার্মিনাল ও স্ট্যান্ড নির্মাণ করতে হবে।
বিজিএমইএর প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বন্দর এলাকায় পর্যাপ্ত টার্মিনাল ও স্ট্যান্ড না থাকায় বন্দরকে ঘিরে তীব্র জট হচ্ছে। তাতে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে গেছে। লোডশেডিংয়ের কারণে শিল্প কারখানায় উৎপাদনও বিঘ্নিত হচ্ছে। এ অবস্থায় আমদানি-রফতানি কার্যক্রম গতিশীল না হলে তৈরি পোশাক শিল্পসহ রফতানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তিনি জরুরি ভিত্তিতে ভারি যানবাহনের পার্কিং ও স্ট্যান্ডের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানান।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস বলেন, বন্দর-পতেঙ্গা এলাকায় সিডিএর উদ্যোগে আপাতত ট্রাক টার্মিনাল করার কোন পরিকল্পনা নেই। তবে বেসরকারি উদ্যোগে কেউ টার্মিনাল নির্মাণ করতে চাইলে সিডিএ সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। আর তা হতে হবে পর্যটন এলাকা পতেঙ্গা থেকে অন্তত ছয় কিলোমিটার দূরে। তিনি বলেন, কর্ণফুলী টানেল চালু হওয়ার আগেই চট্টগ্রাম বন্দর ও বিমানবন্দরমুখী সড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে বেশ কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। টোল রোড ফৌজদারহাট পর্যন্ত চার লেনে উন্নীত করা হবে। এর পাশাপাশি পতেঙ্গা এলাকায় টানেলের মুখে একাধিক সার্ভিস রুট, ইউটার্ন ও বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার তারেক আহম্মদ বলেন, স্থায়ী টার্মিনাল না থাকায় ভারি যানবাহন রাস্তায় রাখা হচ্ছে। নিয়মিত অভিযানেও পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় টার্মিনাল নির্মাণের কোন বিকল্প নেই। কারণ শুধু অভিযান চালিয়ে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখা যাবে না। এরজন্য দরকার স্থায়ী সমাধান। বন্দর ও হালিশহর এলাকায় এমনকি সাগরতীরে টার্মিনাল করার মত পর্যাপ্ত জায়গা রয়েছে। সিটি কর্পোরেশন, সিডিএ এবং বন্দর কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে। বন্দর এলাকায় পর্যাপ্ত টার্মিনাল নির্মাণের জন্য ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে ওই তিন সংস্থাকে একাধিকবার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে।
প্রাইম মুভার, ট্রেইলর শ্রমিক ইউনিয়ন চট্টগ্রামের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেন, ভারি যানবাহন মালিকরা সরকারকে প্রতিবছর ট্যাক্স, ভ্যাট দিয়ে যাচ্ছেন। টার্মিনাল এবং পার্কিং আমাদের অধিকার। কিন্তু সে অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। টার্মিনাল না থাকায় চালকরা বাধ্য হয়ে রাস্তায় পার্কিং করছে। অথচ তাদের মামলা দেয়া হচ্ছে, জরিমানা করা হচ্ছে এমনকি পরিবহনও আটক করা হচ্ছে। তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে টার্মিনাল নির্মাণের জন্য দাবি জানানো হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, টার্মিনাল না হলে বন্দর এলাকায় এ অচলাবস্থার অবসান হবে না।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।