Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লুই কানের মূল নকশা দেশে পৌঁছেছে

| প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

হাবিবুর রহমান : অবশেষে অতি গোপনীয়তার মধ্য দিয়ে বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই আই কানের করা জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার আর্কিটেকচারাল আর্কাইভে সংরক্ষিত আট হাজার নকশা ও নথি থেকে প্রয়োজনীয় ৮৫৩ টি নকশা ও ৬০টি ডকুমেন্ট চিহ্নিত করে এর মধ্যে ৪১টি কার্টনে আনা হয়েছে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশের একটি বিমানে এ জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা দেশে পৌঁছে গেছে বলে সংসদ সচিবালয় থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জাতীয় সংসদের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া চুক্তি অনুযায়ী নকশাগুলো নিয়ে একটি বিদেশি বিমান যোগে দেশে পৌঁছে বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে। পরে সংসদ ভবনের কয়েকটি গাড়ীতে বহন করে আনা হয়। জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ইনকিলাবের কাছে বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করেন। তবে তিনি দেখার আগে কিছু বলতে চাননি।
নকশাগুলোর একটি জাতীয় সংসদ লাইব্রেরীতে এবং স্থাপত্য অধিদপ্তরে এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে আর্কাইভে রাখা হচ্ছে। এরই মধ্যে নকশাবহির্ভূত অধিকাংশ স্থাপনা উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি নকশার জন্য ১৯ ডলার খরচ করা হয়েছে। এছাড়া ১১৫টি নকশা আছে, যেগুলো এখনো তৈরি হয়নি। এগুলো আনতে ৬০ হাজার ডলারের মতো লাগবে। বিশ্বখ্যাত স্থপতি লুই আই কানের করা জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা পৌঁছে গেছে। তবে ওই নকশার পুরোপুরি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এরই মধ্যে নকশাবহির্ভূত অধিকাংশ স্থাপনা উচ্ছেদের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, সংসদ ভবন এলাকা থেকে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর স্থানান্তর করা হবে। আর নকশা অনুযায়ী, জাতীয় সংসদ লাইব্রেরি, জাদুঘর ও প্রশাসনিক সচিবালয়সহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় সংসদের এক অতিরিক্ত সচিব ইনকিলাবকে বলেন, প্রতিনিধিদলের প্রধান জাতীয় সংসদের অতিরিক্ত সচিব আ ই ম গোলাম কিবরিয়া  নিয়ে আসছেন। আজ (গতকাল) সন্ধ্যা ছয়টায় আসবে। এগুলো গত আগস্টের দিকে নকশাগুলো পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রয়োজনীয় ৮৫৩টির মধ্যে ১১৫টি আনবিল্ড নকশা (এখনো কোনো ভবন হয়নি) রয়েছে, যা আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া সেখানে লুই আই কান ও তাঁর সহকারীদের তোলা বেশ কিছু দুর্লভ আলোকচিত্রও পাওয়া গেছে। সেগুলোও আনা হলো। প্রতিটি নকশার জন্য আমাদের ২২ ডলার দিতে হয়েছে। বিনিময়ে আমরা প্রতিটি নকশার চারটি করে কপি পাব।’ প্রয়োজনীয় নকশাগুলো সাত হাজার পৃষ্ঠার মতো হবে।
জাতীয় সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, লুই আই কানের করা নকশার আলোকে ১৯৬১ সালে জাতীয় সংসদ ভবন নামের এই দুর্লভ স্থাপত্যকর্মের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এই ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। সংসদ ভবনের উত্তরে ৭৪ একর জায়গা জুড়ে নির্মিত চন্দ্রিমা উদ্যানের মাঝে বিশাল এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জিয়ার মাজার কমপ্লেক্স। সংসদ ভবনের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে মানিক মিয়া এভিনিউয়ের পশ্চিম পাশে পাঁচ বিঘারও বেশি জায়গায় জাতীয় কবরস্থান নাম দিয়ে অন্তত সাতজনকে কবর দেয়া হয়েছে। মূল ভবনের পাশে খোলা সবুজ চত্বরে স্পিকার ও  ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন নির্মাণ করা হয়েছে। চন্দ্রিমা উদ্যানের পাশে ১০ একর জমির ওপর নির্মাণ করা হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র। আর আসাদ গেটের উল্টো দিকে সংসদ ভবনের সীমানার মধ্যে স্থাপন করা হয় পেট্রোলপাম্প সেটি এখন বন্ধ রয়েছে। এখনো নিরাপত্তা বেষ্টনীর নির্মাণ কাজ চলছে। এর আগে সংসদ সচিবালয়ের গণপূর্ত বিভাগ ২০১৩ সালে সংসদ ভবনের উত্তর গেট বন্ধ করে সেখানে সংসদ টেলিভিশনের স্টুডিও নির্মাণের কাজ শুরু করলে তা নিয়ে নানা আলোচনা ও সমালোচনার মুখে ২০১৪ সালে সংসদ কমিশনের বৈঠকে মূল নকশাগুলো দেশে আনার সিদ্ধান্ত হয়।
গত মে মাসে জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশা আনতে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্র যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার আর্কিটেকচারাল আর্কাইভে সংরক্ষিত আট হাজার নকশা ও নথি থেকে প্রয়োজনীয় ৮৫৩টি নকশা ও ৬০টি ডকুমেন্ট চিহ্নিত করা হয়। পরে আবারো বাংলাদেশ থেকে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল গত ৬ জুন সেখানে যায়। দুই সপ্তাহ সেখানে অবস্থানকালে তারা লুই আই কানের প্রতিষ্ঠান ডেভিড অ্যান্ড উইজডমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নকশাগুলো চিহ্নিত করে। এরপর সেগুলো আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার আর্কিটেকচারাল আর্কাইভ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিও করে। চুক্তি অনুযায়ী, সেগুলোর মুদ্রণকাজ শুরু হয়েছে।
স্থাপত্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, লুই আই কানের মূল নকশার প্রথম ধাপ ছিল ২০৮ একর জায়গার ওপর জাতীয় সংসদ ভবন নির্মাণ। যার সামনে ও পেছনে বিস্তীর্ণ সবুজ খোলা মাঠ থাকবে। চারদিকে আট লেনের সড়ক ও মাঝখানে লেক। দ্বিতীয় ধাপে লেকের পর বিস্তীর্ণ সবুজ। এ ছাড়া বাকি জায়গায় সচিবালয়, লাইব্রেরি, জাদুঘর, হাসপাতালসহ প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক বলয়। এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী মূল নকশা অনুযায়ী ওই এলাকাকে সাজানোর ঘোষণা দিয়েছেন। আর নকশাবহির্ভূত স্থাপনাগুলো উচ্ছেদের প্রস্তুতিও নিবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে নকশাবহির্ভূত সব স্থাপনা উচ্ছেদ সম্ভব নয় বলে দাবি করেছেন অনেকেই।
সংসদ সচিবালয়ের একাধিক কর্মকর্তা জানান, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের বাসভবন নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও বিষয়টি এরই মধ্যে আদালতের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়েছে। আর নিরাপত্তা বেষ্টনী ও বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্র বিশেষ প্রয়োজনেই করতে হয়েছে। তাই এগুলো উচ্ছেদের সম্ভাবনা নেই। তবে অন্যান্য স্থাপনা উচ্ছেদের পাশাপাশি নতুন বেশ কিছু ভবন নির্মাণে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ  নেয়া হবে।
জাতীয় সংসদ লাইব্রেরির জন্য চন্দ্রিমা উদ্যানের পাশে নতুন ভবন নির্মাণের কথা জানিয়েছেন লাইব্রেরি কমিটির সভাপতি, ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি বলেন, লাইব্রেরির জন্য আরো বড় জায়গা প্রয়োজন। কিন্তু মূল ভবনে সেটা সম্ভব নয়। আর নকশায় লাইব্রেরির জন্য আলাদা ভবনের কথা বলা আছে। নকশা পাওয়ার পর এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হবে। এ ছাড়া সংসদ জাদুঘর নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে বলেও তিনি জানান।
এদিকে মূল নকশায় সংসদ ভবনের পাশাপাশি ২৭টি মন্ত্রণালয়ের ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। এরই মধ্যে মূল নকশা ধরে সচিবালয়সহ সব কিছু করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে ১৯৭৪ সালে শেরে বাংলানগরে ৪২ একর জায়গায় জাতীয় সচিবালয় নির্মাণের জন্য সরকার ও মার্কিন কোম্পানি ডেভিড উইজডম অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের সঙ্গে চুক্তি হলেও তার কোনো অগ্রগতি হয়নি। তবে নকশা পাওয়ার পর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, এরই মধ্যে মূল নকশা আনার সব প্রক্রিয়া শেষ আজ আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার আর্কিটেকচারাল আর্কাইভে সংরক্ষিত আট হাজার নকশা ও নথি থেকে প্রয়োজনীয় ৮৫৩টি নকশা ও ৬০টি ডকুমেন্ট চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশ থেকে পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধিদল গত ৬ জুন সেখানে যায়। দুই সপ্তাহ সেখানে অবস্থানকালে তারা লুই আই কানের প্রতিষ্ঠান ডেভিড অ্যান্ড উইজডমের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাতের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় নকশাগুলো চিহ্নিত করে। এরপর সেগুলো আনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব পেনসিলভানিয়ার আর্কিটেকচারাল আর্কাইভ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে চুক্তিও করে। চুক্তি অনুযায়ী, সেগুলোর মুদ্রণকাজ শেষে দেশে আনা হয়।
     



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জাতীয় সংসদ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ