Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাঠে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষাণ-কৃষাণিরা

চাটমোহরে বিনা হালে রসুন আবাদ

| প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

আফতাব হোসেন, চাটমোহর (পাবনা) থেকে : পাবনার চাটমোহরসহ চলনবিলের অধ্যুষিত উপজেলাগুলোতে বিনা হালে রসুন রোপণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কৃষক-কৃষাণিরা। সকালে ঘুম থেকে উঠেই কৃষকরা মাঠে সারিবদ্ধভাবে রসুনের কোয়া রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। লাইন করে, দড়ি টেনে। সময় খুব কম। নরম মাটি রোদে শক্ত হলে, আর হবে না। তাই মজুরদের সাথে পরিবারের সবাই মিলে এখন মাঠে নেমেছেন কৃষক। চলনবিলের দ্বিতীয় প্রধান অর্থকরী মসলা জাতীয় ফসল এখন এই রসুন। সাম্প্রতিক সময়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এই বিনা হালের রসুন চাষ। তাই বিলের কৃষক ধান বেচে পাওনাদার বিদায় করতে না পারলে তাকে বলেন, সেই প্রচলিত গ্রামীণ প্রবাদ ‘আর কয়টা দিন সবুর কর, রসুন বুনেছি’। চলনবিলের মাঠ থেকে পানি নেমে গেছে নদীতে। জেগে উঠেছে পলি ধোয়া উর্বর ফসলি জমি। জমির আমন ধান কাটার পাশাপাশি চলছে খড় পরিষ্কারের কাজ। জমি চাষের প্রয়োজন নেই। জমি পরিষ্কার বা হালের দরকার নেই। কাদা মাটিতে পুঁতে দেয়া হচ্ছে রসুন কোয়া। সাথে সাথেই ধানের নাড়া (খড় বিচালী) অথবা কচুরি পানা দিয়ে ঢেকে দেয়া হচ্ছে রসুনের ক্ষেত। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এখন চলছে রসুন বোনা। একসাথে ধানকাটা মাড়াই আর রসুন বোনার কারণে দেখা দিয়েছে মজুর সংকট। নারী ৩০০, পুরুষ মজুর ৪০০ টাকায়ও মিলছে না। গম বা বোরো আবাদের তুলনায় বিনা হালের রসুনের আবাদে বেশি লাভ হওয়ার কারণে এলাকার কৃষক রসুন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। বিগত বছরগুলোতে কৃষকরা রসুনে ফলনও পেয়েছেন ভালো। তাই দ্রুতই সম্প্রসারিত হয়েছে তা এখন গোটা চলনবিল এলাকায়। অতি বন্যা, খরা, ঝড়, শিলাবৃষ্টি ও কালবৈশাখীসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের সাথে রোগ-বালাইয়ের ঝুঁকি। সারসহ কৃষি উপকরণের দাম বাড়তি হলে কৃষকের ফসলের উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়েছে। সেদিক থেকে বিনা চাষে রসুন আবাদ করে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকরা এখন রসুনেই ঝুঁকে পড়েছেন বেশি। ফলে রসুন এখন চলনবিল এলাকার কৃষকদের কাছে হয়ে উঠেছে বোরো ধানের পরেই প্রধান অর্থকারী ফসল। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে চলনবিলে রসুন চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ২৪৫ হেক্টর জমিতে। চাটমোহর উপজেলায় চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ১০০ হেক্টর। এর মধ্যে অর্জন হয়ে গেছে ১২০০ হেক্টর। প্রতি বিঘা জমিতে রসুনের ফলন হয় ২২ থেকে ২৮ মণ। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রতি মণ বীজ ৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর খাবার রসুন বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা মণ। রসুন আবাদ করতে বিঘাপ্রতি ৩ মণ হারে বীজ বাবদ ১৪ হাজার টাকা, সার কীটনাশক বাবদ ৬/৭ হাজার টাকা, শ্রমিক খরচ ৪ হাজার টাকা, জমির আগাছা পরিষ্কার বাবদ ৪ হাজার টাকা, সেচ বাবদ ৩ হাজার টাকাসহ প্রায় ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ হয়। যারা জমি লিজ নিয়ে আবাদ করেন তাদেরকে বিঘাপ্রতি অতিরিক্ত ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা গুনতে হয়। ১ বিঘা জমির রসুন বিক্রি করা যাচ্ছে ১ লাখ টাকা। খরচ বাদে বিঘাপ্রতি লাভ থাকছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ