Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সৈকতের ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়েই পর্যটকদের সমুদ্র দর্শন

জাকের উল্লাহ চকোরী, কক্সবাজার থেকে : | প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

সমুদ্র আর সুউচ্চ পাহাড়ের মিতালী কক্সবাজারকে করেছে বিমোহিত। সৈকত দর্শনের প্রতি বছরই দেশি-বিদেশি পর্যটক এখানে ছুটে আসেন। রেখে যান কিছু মুহুর্ত, নিয়ে যান স্মৃতি। তবে গত কয়েকদিনে প্রবল ঢেউয়ের আঘাতে লণ্ডভণ্ড বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত। সমুদ্র থেকে ধেয়ে আসা ঢেউ একটি নান্দনিক সৈকতকে কিভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে এটা দেখেছে পর্যটকসহ দেশবাসী। সাগর এখন উত্তাল। এরপরেও সমুদ্র দর্শনে পর্যটকদের উপস্থিতি কম নয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বৈরী পরিবেশে কক্সবাজার সমুদ্র উপকূল এমনিতে উত্তাল, তার উপর চলছে পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাব। জোয়ারের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ায় বালিয়াড়ি রক্ষা করা যাচ্ছেনা। ইতোমধ্যে কলাতলী থেকে সুগন্ধা, সিগাল, লাবনী, শৈবাল হয়ে উত্তর দিকের সমিতির পাড়া পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সৈকত এখন লন্ডভন্ড। সৈকতের এমন হাল ৫০-৬০ বছরেও দেখেনি স্থানীয় বাসিন্দারা।
গত বুধবার থেকে সৈকতের কয়েকটি পয়েন্ট তীব্র জোয়ারের তোড়ে ইতোমধ্যে বিলীন হয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে সমুদ্র উত্তাল থাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে ২-৪ ফুট বাড়ছে জোয়ারের পানি। এতে ঢেউয়ের তোড়ে ক্রমে ভাঙছে কক্সবাজার সৈকত। ঢেউয়ের তোড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে সৈকতের বালুকাবেলা। তলিয়ে যাচ্ছে ঝাউবীথি। এতে করে সৈকত হারিয়েছে তার চিরচেনা রূপ ও সৌন্দর্য। ভাঙনে ঝুঁকির মুখে রয়েছে সৈকতের ছাতা ও ঝিনুক মার্কেট। পূর্ণিমার জোয়ারের পানি আরো উচ্চতায় বাড়লে ভাঙন তীব্র হওয়ার আশংকা করেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
প্রবল স্রোতে সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি, পাকা সড়ক, জিও ব্যাগ নিমিষে ভেঙেচুড়ে ভাসিয়ে নিতে থাকে সমুদ্র তীর ঘেষে সৃষ্ট ঝাউ বনায়ন কর্মসূচির গাছপালা। পাহাড় সমান উচ্চতার সেই সামুদ্রিক ঢেউ একের পর এক আঘাত হানতে থাকে সৈকতে। জোয়ারের তীব্রতা লণ্ডভণ্ড করে দেয় সৈকতের কয়েকটি পয়েন্ট। সৈকতের লাবণী পয়েন্ট ঢেউয়ের ভয়াবহতার স্মৃতি নিয়ে এখন দাঁড়িয়ে আছে।
পরিবেশবাদী ও স্থানীয় প্রবীন নাগরিকদের অভিমত, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অপরিকল্পিত জিও ব্যাগে বাঁধের কারণেই সমুদ্র সৈকতের বালিয়াড়ি বিলীন হচ্ছে। সৈকত রক্ষার জন্য বালুভর্তি জিও ব্যাগের যে বাঁধ দেয়া হচ্ছে, সেই বালু ড্রেজার মেশিন দিয়ে উত্তোলন হচ্ছে সমুদ্র থেকেই। বালুর বাঁধের ১০-১২ ফুট দূর থেকে উত্তোলণ করা হচ্ছে। বালুর এই বাঁধ যেমন টিকছেনা তেমনি এই জিও ব্যাগ বাঁধের কারণে সৈকত বিলীন হচ্ছে। সমুদ্রের ঢেউ এবং স্রোতধারাকে স্বাভাবিক নিয়মে চলতে না দিয়ে বাধা সৃষ্টির কারণে সাগর আগ্রাসী তাণ্ডব চালাচ্ছে। লাবনী পয়েন্টসহ সৈকতের কয়েকটি পয়েন্টের এমন পরিণতি তাই হচ্ছে।
এদিকে সৈকতের তীব্র ভাঙনে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া পর্যটন ব্যবসায়ী আর খোলা সমুদ্র তীর এখন আবার জাগছে। সৈকতের লাবনীসহ কয়েকটি পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, সমুদ্রের সুন্দরের মায়াবী হাতছানি যেন একটুখানি আটকে যাচ্ছে, ভাঙনের তীব্রতায় ধ্বংসের স্তুপে। আর সেই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িড়েই পর্যটকদের সমুদ্র দর্শন যেন থেমে নেই। এবার সৈকতের ধ্বংসস্তুপ দেখতে আসছে ভ্রমণ পিপাসুরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ