Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কমছে পানি স্পষ্ট হচ্ছে ক্ষত

সুনামগঞ্জের ভয়াবহ বন্যাত্তোর চিত্র ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে ৪-৫ বছর লাগবে : জেলা প্রশাসক

মো. হাসান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ থেকে | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় সুনামগঞ্জের ১২ উপজেলায় বন্যার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পাচ্ছে নানান খাতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। বন্যার করাল গ্রাসে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে হাওরাঞ্চলের মানুষ। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অন্তত ৪-৫ বছর হার ভাঙা পরিশ্রম করতে হবে বানবাসী মানুষের। ঘর হারা, ফসল হারা, গৃহস্থালী আসবাবপত্র, গোলার ধান চাল হারিয়ে নিঃস্ব অবস্থায় দিনাতিপাত করছেন জেলার ২০ লাখ মানুষ। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ক্ষতিগ্রস্থদের সাহায্য সহযোগিতা করলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই নগন্য। রাস্তাঘাট, কৃষি, মৎস্য সম্পদ, ঘরবাড়ি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাঠ, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ সর্বক্ষেত্রেই ক্ষতির ক্ষত চিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছে বানবাসী মানুষ। বন্যার আগাম প্রস্তুতি না থাকায় ক্ষতির পরিমাণ বহুগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণে দু’দুবার বন্যার কবলে পড়েছে হাওরাঞ্চলের ২০ লাখ মানুষ। দ্বিতীয় দফা বন্যায় জেলার বেশিরভাগ ঘরের নিচতলা ছিল পানির নিচে। ফলে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওর্য়াক বন্ধ ছিল টানা পাঁচ দিন। অন্ধকারেই ছিল সুনামগঞ্জ জেলার প্রায় সবকটি উপজেলা, ইউনিয়ন, গ্রাম। সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় মানুষের দুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছিল। বিদ্যুতের পাওয়ার স্টেশনগুলোও ছিল পানির নিচে।

সুনামগঞ্জ জেলা শহরসহ প্রতিটি উপজেলা সদরে নৌকা দিয়ে পাড়াপাড় হতে হয়েছে বানবাসী মানুষ। বহুজন আশ্রয় কেন্দ্রে ওঠে জীবন বাচালেও বাচাঁতে পারেনি তিলে তিলে গড়ে উঠা সম্পদ। রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি, ব্যবসা- প্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসকারি ভবন, ফ্লোর ৪ থেকে ৫ ফুট পানি নিচে। এত কম সময়, এমন ভয়ানক পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, প্রশাসনসহ কাহার ও চিন্তা-চেতনায় মধ্যে ছিলো না।

সরেজমিনে জেলার কয়েকট উচু ও নিচু এলাকায় সড়ক ঘুরে দেখা যায় পানি নামছে ক্ষয়-ক্ষতির বিধ্বস্তের ক্ষত স্পষ্ট হচ্ছে। ভয়াবহ বন্যায় ভেঙে গেছে রাস্তা, কালভাট, ব্রিজ এপ্রোচ প্রটেকশন দেওয়াল, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা জেলা প্রায় ১০টি উপজলা বিভিন্ন সড়কে ছোট-বড় গর্তে বেহাল দশা দুর্ভোগের যেনো শেষ নেই। এতে প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জেলার হাজার হাজার যাত্রীও পথচারিদের। অনেক সড়ক ভেঙে খালের মত হয়ে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে জেলার কয়েক লক্ষাধিক মানুষের। শুধু তাই নয় অনেক সড়কে পায়ে হেঁটে চলাচলই ভীষণ কষ্টকর হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রাং জানান, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে ৩৫৬ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ১৮৪ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অন্তত ৩০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে।

এলজিইডির সুনামগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুব আলম জানান, বন্যায় গ্রামীণ সড়কের নজির বিহীন ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে। ৪৫৭১ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১৫শ’ কোটি টাকা। ক্ষয়-ক্ষতির বিস্তারিত তুলে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রাস্তাঘাটের যান চলাচলসহ স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে দ্রুত রাস্তাঘাট সংস্কারের জন্য কাজ শুরু করা হবে।

সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, ভয়বাহ বন্যার কবলে সুনামগঞ্জের রাস্তাঘাট, ব্রিজ কালর্ভাট, ঘরবাড়ি, কৃষি জমি, বোরো ফসল, আমন ধান, মৎস্য সম্পদ ও পশু সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অন্তত ৪-৫ বছর সময় লাগবে। বন্যার্ত মানুষের ক্ষতি পুষিয়ে উঠাতে বর্তমান সরকার কাজ করছে। ক্ষুদ্র ঋণের কিস্তি বন্ধ করা হয়েছে। কৃষি ঋণ বৃদ্ধির জন্য সরকারের উচ্চ মহলকে জানানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ