বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
ভাঙনে সৌন্দর্য হারাচ্ছে বিশ্বের দীর্ঘতম কক্সবাজার সৈকত। রক্ষায় নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ। প্রতিবছর বর্ষায় এই ভাঙনের জন্য
অনেকাংশে রক্ষকরাই দায়ী বলে জানা গেছে। সরকারি বেসরকারী দখলে সৌন্দর্য হারিয়ে সৈকতের বেহাল দশা হলেও এর জন্য কার্যকর কোন উদ্যোগ নেই কোন কর্তৃপক্ষের। এছাড়াও ইসি এলাকায় কার্যকর হচ্ছেনা হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সৈকতের লাবনী পয়েন্ট, ডায়াবেটিস হাসপাতাল পয়েন্ট, ইসলামিয়া বালিকা কামিল মাদরাসা পয়েন্ট, হিমছড়ি পয়েন্ট ও টেকনাফের সাব্রাং এক্সক্লুসিভ টুরিষ্টজোন এলাকায় এই বাঙনের চিহ্ন। হিমছড়ি এবং সাব্রাং এলাকায় সাগরের করাল গ্রাস থেকে মেরিন ড্রাইভ রক্ষায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেনা সদস্যরা কিছু কিছু জায়গায় ট্রিট্টা ব্লক এবং জিওব্যাগে বালু ভর্তি করে সাগরের ঢেউয়ের সাথে যেন এক প্রকার যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন মেরিন ড্রাইভ রক্ষায়।
এদিকে গত কয়েকদিনের দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সাগর অস্বাভাবি উত্তাল হয়ে উঠেছে। যার প্রভাবে সৈকতজুড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। এই ভাঙনের কবলে পড়ে তছনছ হয়ে গেছে সৈকতের অন্যতম ব্যস্ত পয়েন্ট লাবনী সৈকত। এতে একদিকে সৌন্দর্য হারাচ্ছে কক্সবাজার সৈকত। অন্যদিকে পর্যটনে বিরূপ প্রভাব দেখা দিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাঙন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরি ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানালেও বাস্তবে তেমন কোন উদ্যোগ নিতে দেখাযায়নি।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, কক্সবাজার উপকূলে কয়েকদিন ধরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত অব্যাহত আছে। লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ০২-০৪ ফুট
উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
এদিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সাগর উত্তাল এবং জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হচ্ছে। কক্সবাজারে ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। উচ্চ জোয়ারের আঘাতে সৈকতের লাবণী পয়েন্ট ঝুঁকির মুখে পড়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের স্থাপনা। চার পাশে ভাঙন জোয়ারের তুড়ে যেকোন মুহুর্তে ভেঙে পড়তে পারে ওই স্থাপনাটি। জিও ব্যাগ দিয়ে আপাতত রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সৈকতের অন্যতম পয়েন্ট লাবণী জোয়ারের পানিতে ভেঙ্গে তছনছ হয়ে গেছে।
সৈকতের কিটকট (ছাতা) ব্যবসায়ী আব্দুল করিম বলেন, উচ্চ জোয়ারের কারণে প্রতিদিন ৬ বার করে ছাতা সরিয়ে নিয়ে শুকনো স্থানে রাখতে হচ্ছে। এতে পর্যটকদেরও ছাতা থেকে উঠে পুনরায় আরেক স্থানে বসতে হচ্ছে। আর জোয়ারের পানিতে একের পর এক বালিয়াড়ি ভেঙ্গে যাচ্ছে।
লাবণী পয়েন্টে দায়িত্বরত লাইফ গার্ড কর্মী মোহাম্মদ জহির বলেন, এত উচ্চ জোয়ার আর কোন বছর দেখিনি। এবছর সর্বোচ্চ জোয়ারের পানি আঘাত করছে উপকূলে। এতে সৈকতের ইসলামিয়া বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্ট থেকে শুরু করে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত বালিয়াড়ি ভেঙ্গে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ঝুঁকির মুখে পড়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশের স্থাপনাও। যার কারণে সৌন্দর্যহীন হয়ে পড়ছে সৈকত। আর সৈকতে নামতে গিয়ে অনেক সময় আহত হচ্ছেন পর্যটকরা।
কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, দলবেধে তারা লাবণী সৈকতে নেমেছিল। কিন্তু জোয়ারের কারণে জিও ব্যাগ তলিয়ে গেছে। একই সঙ্গে ইটের রাস্তা ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। যার ফলে সাগরের নোনাজলে নামতে গিয়ে হোচট খেয়ে তাদের দুই বন্ধু পড়ে গেছে। এরকম ভাঙনের দৃশ্য আগে কখনও সৈকতে এসে দেখেনি তারা।
গেলো কয়েকবছর ধরে প্রতিদিন সৈকতে হাটেন কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন অফিসের অতিরিক্ত কমিশনার মো. সামছুদ্দৌজা। তিনি বলেন, কয়েকবছর ধরে সাগরের বালিয়াড়ির ভাঙন তীব্র হচ্ছে। সারা বিশ্বের ন্যায় জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব কক্সবাজারও পড়ছে। তাই সৈকতের তীব্র ভাঙন রোধে পরিবেশবান্ধব কার্যকরি ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে কাজ করা হবে। কক্সবাজার পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. তানজির সাইফ আহমদ বলেন, গত কয়েকবছর ধরে সৈকতে ডায়বেটিক পয়েন্ট থেকে কলাতলী পয়েন্ট পর্যন্ত বর্ষামৗসুমে ভাঙন তীব্র হচ্ছে। এতে প্রাথমিকভাবে সৈকতের ইসলামিয়া বালিকা মাদ্রাসা পয়েন্ট থেকে লাবণী পয়েন্টের কিছু অংশ জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে স্থায়ী কিভাবে ভাঙন রোধ করা যায় দ্রুত তার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সৈকতের লাবণী থেকে শুরু করে মাদ্রাসা পয়েন্ট ও ডায়াবেটিক পয়েন্টে শত শত ঝাউগাছ সাগরে বিলীন হয়ে গেছে। সেখানে জিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙন রোধ করার চেষ্টা করা হলেও তা কোন কাজে আসছে না। তাই সৈকতের সৌন্দর্য রক্ষায় ভাঙন রোধে স্থায়ী সমাধানের দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল।
সৈকত এলাকাকে পরিবেশ গত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষনা করে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ওই এলাকায় যেকোন ধরনের স্থাপনা নিষিদ্ধ করে এবং সেখানে ইতোমধ্যে স্থাপিত স্থাপনাগুলো বেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়া হলেও তা বছের পর বছর বাস্তবায়ন করেনি কক্সবাজার এর কোন কর্তৃপক্ষ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।