Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৪৭ বছরে ২৭ খুনের বিচার হয়নি একটিরও

আতঙ্কের জনপদ রূপগঞ্জের চনপাড়া বস্তি চাঁদাবাজ ও ভাড়াটে খুনিদের নিরাপদ আস্তানা

মো. খলিল শিকদার, রূপগঞ্জ (নারয়ণগঞ্জ) থেকে : | প্রকাশের সময় : ১১ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

রাজধানীর সন্নিকটে ডেমরার পাশে রূপগঞ্জের কায়েতপাড়া ইউনিয়নের চনপাড়া পূনর্বাসন কেন্দ্র। এলাকার আধিপত্য বিস্তার, নানা অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার অসম প্রতিযোগীতা চলে এখানে রাত-দিন। আর এসবকে কেন্দ্র করেই গত ৪৭ বছরে ২৭টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকাণ্ডের একটিরও বিচার হয়নি।

স্থানীয়দের দাবি, যদি হত্যাকাণ্ডের বিচার হতো, তাহলে আর কেউ নতুন করে খুন করার সাহস করতো না। তবে চনপাড়াবাসীরা বলছেন, তাদেরকে রাজনীতির কাজে ব্যবহার করা হয়। ফলে সন্ত্রাসীরা প্রশ্রয় পায়। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ হলে চনপাড়া শান্ত হবে। এখনই নিয়ন্ত্রণে না নিলে চনপাড়া ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে।

 

১৯৭৪ সালের জানুয়ারি মাসে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নদী ভাঙ্গা, ঘর ভাঙ্গা লোকদের শীতলক্ষ্যা নদ ঘেঁষা ওয়াসার ১২৬ একর জমিতে ঠাঁই দেন। ধীরে ধীরে চনপাড়া বস্তি হিসাবে রূপ নেয়। চনপাড়া পূনর্বাসনে কয়েক হাজার ঝুঁপড়ি ঘরে প্রায় দেড় লাখ লোকের বসবাস।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চনপাড়া পূনর্বাসনে গত ৪৭ বছরে ২৭টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে এ সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে স্থানীয়রা মনে করেন। প্রথম খুনের শিকার হন ১৯৭৬ সালে বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তি। সর্বশেষ চলতি বছরের ১৮ জুন হত্যা করা হয় সজল মিয়া একজনকে।

পুলিশ ও চনপাড়া পূনর্বাসন কেন্দ্রের লোকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে ৫টি কারণ রয়েছে। অন্যতম একটি হলো ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখা। এলাকার আধিপত্য, অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, ব্যবসায়িক ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব, পূর্ব শত্রুতা, রাজনীতিক প্রভাব। বিভিন্ন সূত্র ও নিহতদের পরিবারের লোকজন জানান, এসব হত্যাকাণ্ডের অধিকাংশের বিচার হয়নি। কয়েকটি মামলার আসামিদের সাজা হলেও পরবর্তীতে আইনের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে অনেকেই বের হয়েছে।

নিহতদের একাধিক পরিবার বলছে, তারা স্বজন হারিয়ে তারা বিষন্ন। বোবা কান্না চার দেয়ালের বাইরে বের না হলেও ঘরের পরিবেশ ভারী করে তুলেছে। তারা তাদের প্রিয়জনের হত্যার বিচার চায়। কিন্তু ৪৭ বছরে একটি খুনেরও বিচার হয়নি। কোনটি পুলিশের দুর্বল এজাহারের কারণে, কোনটি স্বাক্ষীর কারণে কিংবা কোনটি রাজনৈতিক চাপের কারণে নিষ্পত্তি হয়ে গেছে। কিছু হত্যাকাণ্ডের বিচার আদালতে প্রক্রিয়াধীন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, কোনো না কোনো শত্রুতার জের ধরেই হত্যাকাণ্ডগুলো ঘটছে। এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এক বা একাধিক প্রভাবশালী পরিবার বা ব্যক্তি জড়িত থাকায় মামলাগুলো আর এগোয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে আসামিরা ধরা পড়লেও সাক্ষী প্রমাণের অভাবে তারা ছাড়া পেয়ে যায়। রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম সায়েদ বলেন, ‘চনপাড়া ভয়ঙ্কর এটা সঠিক। তবে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ এখানে বসবাস করে। অনেকে আছে ভাসমান। তাদের নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। খুন কতো হয়েছে তা আমার জানা নেই। আমি বেশি দিন হয়নি রূপগঞ্জে এসেছি। সব ঘটনাই আগের।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ