Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্বাক্ষর জাল করে স্কুলে শাখা খুলে বাণিজ্যের অভিযোগ

ভোগান্তিতে নিয়োগপ্রাপ্তরা

| প্রকাশের সময় : ১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

নাটোর জেলা সংবাদদাতা : নাটোরের লালপুর উপজেলার ভেল্লাবাড়ীয়া আ: ওয়াহেদ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক স্বাক্ষর জালিয়াতি করে নিজে নিয়োগ নেয়া, স্কুলে শাখা খুলে দুইজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ১৩ লাখ টাকা বাণিজ্য করাসহ তার বিরুদ্ধে অসংখ্য অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। বিষয়গুলো তদন্ত করে প্রমাণিত হওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধের নির্দেশ দেয়ার পরও তিনি নিজের পদে এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছেন। অপরদিকে সাড়ে ৬ লাখ করে টাকা দিয়ে নিয়োগ পাওয়া সহকারী দু’জন শিক্ষক এমপিওভুক্ত না হওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো বিভিন্ন অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রধান শিক্ষক এনামুল হক ২০১২ সালের ৬ মার্চ নিয়োগ পেলেও রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শকের স্বাক্ষর জালিয়াতি করে ২০০৮ সালের ৫ ডিসেম্বর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে এবং ২০০৯ সালের ১০ ডিসেম্বর তারিখ দেখিয়ে ৮ম শ্রেণীতে ‘খ’ শাখা হিসেবে একটি শাখা খোলেন। পরে ৮ম শ্রেণীতে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে মোছা: মেরিনা খাতুন এবং পদ না থাকার পরও কৃষিশিক্ষা/জীববিজ্ঞান বিষয়ে মো: তোফায়েল আহমেদ নামে দু’জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেন। প্রধান শিক্ষক স্কুলের উন্নয়ন তহবিল (ডোনেশন)-এর নামে সাড়ে ৬ লাখ করে মোট ১৩ লাখ টাকা নেন। পরে এমপিওভুক্তির জন্য তাদের কাগজপত্র মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরে পাঠালে প্রধান শিক্ষকের জালিয়াতি ধরা পড়ে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর প্রথমে দুবার কারণ দর্শানোর নোর্টিশ প্রদান করা হয়। পরে সেসিপ-এর সহকারী পরিচালক মো: সবুজ আলম চলতি বছরের ১ জুন এ সব জালিয়াতি প্রমাণ হওয়ায় প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধের জন্য ডিজি, জেলা শিক্ষা অফিসার ও স্কুল কমিটির সভাপতির কাছে চিঠি পাঠান। তারপরও এখন পর্যন্ত তিনি নিজ পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের বেতন বন্ধের আদেশ দেয়ার সময় স্কুল পরিচালনা কমিটির তৎকালীন সভাপতি মোঃ আফসারুজ্জামান মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পাঠানো জবাবে উল্লেখ করেন, ২০১২ সালে তৎকালীন সভাপতি সাইফুল ইসলামসহ কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষর জাল করে প্রধান শিক্ষক এনামুল হক নিয়োগ নেন। এরপর থেকেই তিনি স্বাক্ষর জাল করে একের পর নানা কর্মকা- শুরু করেন। স্বাক্ষর জাল করার বিষয়ে তৎকালীন সভাপতি সাইফুল ইসলাম মামলা করার পর বিষয়টি সিআইডি তদন্ত করলে প্রধান শিক্ষকের ১৩টি জাল প্রমাণিত হয়। তিনি স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের সময় প্রথম স্থান অধিকারী মো: হুসাইন আল আরিফকে নিয়োগ দেয়ার কিছু দিনের মধ্যে ফলাফল সিট পরিবর্তন করে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা  মো: আলাউদ্দিনকে নিয়োগ দেন। বেতন না হলে এখনো স্কুলটিতে দু’জন সহকারী প্রধান শিক্ষক কর্মরত আছেন। একইভাবে একই বছরে সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়ে সহকারী শিক্ষক পদে প্রথম স্থান অধিকারী নাসরিন সুলতানাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা শিউলী খাতুনকে নিয়োগ প্রদান করেন। সহকারী গ্রনন্থাগারিক পদে প্রথম স্থান অধিকারী আবু সায়েমকে নিয়োগ দেয়ার কিছুদিন পর আবার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা প্রার্থী মোঃ আলাল উদ্দিনকে নিয়োগ দেন। এখনোও এদের বেতন হয়নি। এসব নিয়োগের মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক প্রায় ৩০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারের স্বাক্ষর জাল করে কমিটি গঠনের ঘটনায় তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক এনামুল হক এই প্রতিবেদকের কাছে সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তিনি সহকারী প্রধান শিক্ষক মো: হুসাইন আল আরিফ ও সহকারী গ্রন্থাগারিক আবু সায়েমকে নিয়োগ প্রদান করেন নাই। স্বাক্ষর জালের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরকারী আগের সভাপতি সাইফুল ইসলামই এসব স্বাক্ষর জাল করেছেন। সাইফুল ইসলাম স্কুলের ২০ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন এবং ১৩ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা রয়েছে বলেও তিনি দাবি করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ