Inqilab Logo

শনিবার, ১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

করোনা মহামারী কাটিয়ে ভিমরুলীর ভাসমান পেয়ারার বাজার এবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারা চাষিদের মুখে হাসি

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০২২, ৫:৩২ পিএম

 করোনা মহামারী সংকটের দুটি মৌসুম পেরিয়ে এবার আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারা চাষিদের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে। গত দুটি মৌসুুমে দাম না পাবার কষ্ট আর ক্ষতি এবার অনেকটাই কাটিয়ে ওঠার পাশাপাশি পেয়ারা বাগানকে ঘিরে ভিমরুলীর ভাসমান হাটও জমে উঠেছে। আর এ পেয়ারা হাট সহ বাগান দেখতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন পর্যটকগন। ফলে আটঘর-কুড়িয়ানার পেয়ারা বাগান আর ভিমরুলীর ভাসমান হাটকে ঘিরে এলাকার আর্থÑসামাজিক ব্যাবস্থার পালেও কিছুটা হাওয়া লেগেছে।

‘প্রাচ্যের ভেনিস’ খ্যাত ঝালকাঠি-পিরোজপুর সীমান্তের ভিমরুলী’র ভাসমান হাটে এবার ভাল দাম পেয়ে পেয়ারা উৎপাদকদের মুখ অনেকটাই উজ্জল। ২০২০-এ করোনা সংকটের প্রথম বছর এ হাটে যেমনি ক্রেতা ছিলনা, তেমনি দামও মেলনি। গত বছর দাম কিছুটা বাড়লেও ক্রেতার অভাবে অনেক পেয়ারা বাগানেই নষ্ট হয়েছে। তবে এবার ক্রেতার সমাগমের সাথে দাম ভাল মেলায় কৃষকরা কিছুটা আশায় বুক বেঁেধছেন।
আর এ পেয়ারা বাগান সহ ভিমরুলীর ভাসমান বাজার দেখতে রাজধানী সহ সারাদেশ থেকে প্রতিদিন বিপুল সংখ্যক পর্যটকের ভীড় বাড়ছে। নৌপথে ও সড়ক পথে সকাল ১১টার মধ্যে বরিশালে পৌছে পর্যটগন ছুটে আসছেন ভিমরুলীর ভাসমান হাটে। সারা দিন কাটিয়ে বিকলে বরিশালে ফিরে কেউ আবার সড়ক পথেই ঢাকা ফিরে যান। আবার অনেকেই বরিশাল মহানগরী ও আসেপাশের এলাকা ঘুরে রাতের লঞ্চে ঢাকায় ফেরেন। অনেকে বরিশালে রাত কাটিয়ে পরদিন দূর্গসাগর দিঘি ও গুঠিয়ার বায়তুল আমান জামে মসজিদ ও শের এ বাংলা জাদুঘর দেখে রাতে ঢাকায় ফেরেন।
আটঘরÑকুড়িআনা এলাকার ‘মুকুন্দপুরী’, ‘লতা’ ও ‘পুর্নম-ল’ জাতের পেয়ারা মিষ্টি ও অত্যন্ত পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। শ্রাবণÑভাদ্র থেকে আশি^নের মধ্যভাগ পর্যন্ত বরিশালÑঝালকাঠি ও পিরোজপুরের ব্রান্ডিং পণ্য পেয়ারা’র ভরা মৌসুম। ঝালকাঠী ও পিরোজপুরের আটঘর, শতদশকাঠি, কাফুরকাঠি, ভীমরুলি, জিন্দাকাঠি, ডুমরিয়া, খাজুরিয়া, বাউকাঠি, বেতরা, হিমানন্দকাঠি, পোষন্ডা, রমজানকাঠি, সাওরাকাঠি ও কাঁচাবালিয়া সহ বানরীপাড়ার বেশ কিছু গ্রামে প্রতিবছরই প্রায় ১০Ñ১৫ হাজার টন পেয়ারা উৎপাদন হচ্ছে। তবে বিগত দুটি মৌসুমে এসব এলাকার চাষীরা বাগানে ১৫ টাকা কেজি দরেও পেয়ারা বিক্রী করতে না পেরে চরম সংকটে পড়েন। এবার পরিস্থিতির কিছুটা পরিবর্তন হওয়ায় দাম বেড়েছে কেজিতে প্রায় ১০ টাকা।
প্রতিদিন এসব এলাকার বাগান থেকে ছোট ও মাঝারী নৌকায় করে বিপুল পরিমান পেয়ারা ভিমরুলীর ভাসমান হাটে নিয়ে আসছে চাষী সহ বাগান পর্যায়ের ক্রেতারা। সেখান থেকে পাইকার সহ খুচরা ব্যাবসায়ীরা পেয়ারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন বাজারে। ট্রলার ছাড়াও লঞ্চ, বাস ও ট্্রাকে করে ভিমরুলী থেকে পেয়ারা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন বাজার ও মোকামে। আটঘরÑকুড়িআনার এ পেয়ারা দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইতোমধ্যে প্রতিবেশী পশ্চিম বঙ্গের বাজারেও বিক্রী হচ্ছে। এমনকি এ অঞ্চলের পেয়ারার সাথে আমড়া ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ত্রিপুরার আগরতালাতেও ভাল বাজার তৈরী করে নিয়েছে ইতোমধ্যে।
আটঘর-কুড়িয়াআনায় এখন পোয়রা’র সাথী ফসল হিসেবে বিভিন্ন প্রজাতির লেবু ছাড়াও আমড়া’র আবাদ ও উৎপাদন হচ্ছে। দেশের সিংহভাগ আমড়ার উৎপাদন হচ্ছে ঝালকাঠী সদর, বরিশালের বানরীপাড়া এবং পিরোজপুরের নেসারাবাদ, নাজিরপুর ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে।
এলাকায় অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে মাটি কেটে লম্বা ঢিবি তৈরী করে ‘সার্জন’ পদ্ধতিতে পেয়ারার সাথে লেবু ও আমড়া’র আবাদ হয়ে আসছে। কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারী উদ্ভাবিত এ পদ্ধতিতে বরিশাল, ঝালকাঠী ও পিরোজপুরের অপেক্ষাকৃত নিচু এলাকার জমিতে বিভিন্ন ধরনের ফল ও সবজির আবাদের সম্প্রসারন ঘটছে। ফলে এসব এলাকার কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটছে দ্রুত।
ভিমরুলি’র ভাসমান হাট থেকে সারা দেশের পাইকাররা পেয়ারা কিনে সড়ক ও নৌপথে নিজ নিজ মোকামে নিয়ে বিক্রী করছেন। গত প্রায় তিনমাস ধরে ভীমরুলী ও আটঘরÑকুড়িয়ানার ভাসমান বাজারে পেয়ারা চাষি ও পাইকারদের ভিড় লেগে আছে। ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, নোয়াখালী ও ফরিদপুর সহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা বেপারীরা নৌকা থেকেই পেয়ারা কিনে সড়ক ও নৌপথে তাদের নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে পাইকারী ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রী করছেন। প্রতিদিন সকালে ভরপুর এ বাজারে পেয়ারার বেচাকেনা শুরু হয়ে দুপুরের মধ্যেই শুনশান নিরবতা নেমে আসছে।
তবে দক্ষিণাঞ্চলে উৎপাদিত তরমুজ, পেয়ারা ও আমড়া ছাড়াও ইলিশ মাছ নিয়ে একটি ‘রপ্তানী প্রক্রিয়াকরন অঞ্চল’ গড়ে তোলার তাগিদ দিয়েছেন কৃষিবীদগন। সঠিক বাজার সহ উৎপাদকদের ন্যায্য দাম নিশ্চিত কল্পে সরকারী পদক্ষেপ এ অঞ্চলের কৃষিÑঅর্থনীতি সহ রপ্তানী বাজারকেও সম্প্রসারন করবে বলে মনে করছেন ওয়াকিবহল মহল। দেশে আহরিত ইলিশের ৬৬Ñ৭০ ভাগই পাওয়া যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের নদ-নদী সহ উপক’লীয় এলাকায়। সারা দেশে উৎপাদিত ৪৫ লাখ টন তরমুজের ৩০ লাখ টনই উৎপাদন হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলে। আমড়া ও পেয়ারা’র সিংহভাগেরই উৎপাদন এ অঞ্চলে। কিন্তু সঠিক বাজারের অভাবে এঅঞ্চলের আর্থÑসামাজিক ব্যবস্থায় তেমন পরিবর্তন আসছে না। এক সময়ে ইপিজেড-এর চেয়ারম্যান সহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাগন দক্ষিনাঞ্চল ঘুরে ইতিবাচক মাতামত দিলেও পরবর্তিতে সব স্তিমিত হয়ে গেছে। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলে দুটি ‘একান্ত অর্থনৈতিক অঞ্চল’ গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত এখনো কাগজে কলমেই সীমাবদ্ধ। ৭-৮-২০২২.



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ