পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যখন কমছে, তখন দেশের ইতিহাসে এক লাফে সর্বোচ্চ দাম বাড়িয়ে দেশবাসীকে অবাক করে দিয়েছে সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ৪৫০ কোটি (৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন) ডলার ঋণ পেতে তাদের শর্ত পূরণ করতে সারের পর তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তারা বলছেন, আইএমএফের ঋণের প্রধান শর্তই ছিল সরকারের ভর্তুকি কমাতে হবে। সেই শর্ত মেনেই তেলের দাম বাড়িয়েছে সরকার। তবে একসঙ্গে এতোটা বাড়ানো উচিৎ হয়নি।
গত শুক্রবার রাতে দেশে জ্বালানি তেলের দাম এক লাফে লিটারে ৩৪ থেকে ৪৬ টাকা বাড়িয়েছে সরকার। হুট করে এত বেশি দাম বাড়ানোর চাপ অর্থনীতি নিতে পারবে না বলে মনে করছেন অর্থনীতির গবেষক ও গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, ‘আইএমএফের ঋণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যে কোনো মুহূর্তে ঘোষণা আসতে পারে। ঋণের জন্য আইএমএফের সঙ্গে সরকারের কী চুক্তি হয়েছে, সেটা তো আমরা জানি না। তবে সারের পর তেলের দাম বাড়ানোয় এখন আমাদের বুঝতে সমস্যা হচ্ছে না যে, ঋণ পেতেই আইএমএফের কথা মতো তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, দাম কিছুটা বাড়ানো হবে, এই আশঙ্কা ছিল। তবে সেটা সহনীয় পর্যায়ে রাখা যেত। যতটা বাড়ানো হয়েছে, তা চিন্তার বাইরে।
গত শুক্রবার রাতে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এখন থেকে ডিজেলের দাম হবে ১১৪ টাকা লিটার, যা এত দিন ৮০ টাকা ছিল। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ানো হয়েছে ৩৪ টাকা। কেরোসিনের দামও একই হারে বাড়ানো হয়েছে। নতুন দর ডিজেলের সমান, অর্থাৎ ১১৪ টাকা লিটার। সাধারণত ডিজেল ও কেরোসিনের দাম সমান হয়। বাড়ানো হয়েছে পেট্রোল ও অকটেনের দামও। পেট্রলের নতুন দাম ১৩০ টাকা, যা এত দিন ৮৬ টাকা ছিল। এ ক্ষেত্রে দাম বেড়েছে লিটারে ৪৪ টাকা। অকটেনের দাম বাড়ানো হয়েছে লিটারে ৪৬ টাকা। এত দিন অকটেন ৮৯ টাকা লিটার বিক্রি হতো। এখন তা ১৩৫ টাকায় বিক্রি হবে। রাত ১২টার পর থেকেই নতুন এই দাম কার্যকর হয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে কখনোই জ্বালানি তেলের দাম এক সঙ্গে এতটা বাড়ানো হয়নি। সব মিলিয়ে জ্বালানি তেল খাতে সরকারের ভর্তুকি একবারে শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পদক্ষেপ এটি।
সরকার অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চাপে পড়ে (আইএমএফ থেকে ৪৫০ কোটি ডলার ঋণ নেয়ার চেষ্টা করছে। আইএমএফের ঋণের শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো জ্বালানি খাতে ভর্তুকি প্রত্যাহার। জ্বালানি তেলের দাম বাড়িয়ে সেই শর্ত পূরণ করা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকার এর আগে গত নভেম্বরে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে এক লাফে ১৫ টাকা বাড়িয়েছিল। তখন দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল ৮০ টাকা লিটার। ডিজেলের দাম বাড়ানোর পর বাসভাড়া বাড়ানো হয় প্রায় ২৭ শতাংশ, যা তেলের দাম বাড়ানোর হারের চেয়ে অনেক বেশি। একইভাবে তখন লঞ্চভাড়া বাড়ানো হয় ৩৫ শতাংশ।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় অনেক বেশি। বিবৃতিতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, জনবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় আমজনতার স্বস্তি ও স্বাচ্ছন্দ্য বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়। যত দিন সম্ভব ছিল, তত দিন সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির চিন্তা করেনি। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকটা নিরুপায় হয়েই দাম কিছুটা সমন্বয়ে যেতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে সরকার জ্বালানি তেলের দাম কমিয়ে দিয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সে অনুযায়ী জ্বালানি তেলের দাম পুনর্বিবেচনা করা হবে।
জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে দেশে দাম কম থাকায় তেল পাচারের আশঙ্কার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, কোলকাতায় ডিজেলের দাম লিটার প্রতি বাংলাদেশি মুদ্রায় ১১৪ টাকা। পেট্রোলের দাম ১৩০ টাকা। দেশে দাম কম থাকায় তেল পাচার হওয়ার আশঙ্কা থেকেও জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি সময়ের দাবি।
জ্বালানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিপিসি গত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই) জ্বালানি তেল বিক্রি করে ৮ হাজার ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে। ডিজেলের দাম বিশ্ববাজারে ব্যারেলে ১৭০ ডলার থেকে ১৩০ ডলারে নেমেছে। অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে এখন ৯০ ডলারে এসেছে। এই দর এ বছর ৭০ থেকে ৮০ ডলারে নামতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। আর
এমন সময় হুট করে এত বেশি দাম বাড়ানোর চাপ অর্থনীতি নিতে পারবে বলে মনে হয় না, বলে মনে করেন ডা. আহসান এইচ মনসুর।
এদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাড়বে জীবন যাত্রার ব্যয়। নিম্ন এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষই এর শিকার হবেন বলে মনে করেন এই পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ঋণ পেতে নানাবিধ সংস্কার শর্ত পরিপালনের বিকল্প নেই। আর ঋণ দিতে যেসব শর্ত জুড়ে দিয়েছে আইএমএফ, তার মধ্যে রয়েছে জ্বালানি তেলের উপর ভর্তুকি কমানো।
পরিকল্পনামন্ত্রী মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে জ্বালানি তেল বিক্রির ক্ষেত্রে বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিয়ে আসছে সরকার। সমন্বয় করারও প্রয়োজন ছিল। তিনি জানান, মধ্যরাতে এক লাফে প্রায় ৫০ ভাগ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে জ্বালানি তেলের দাম। ভর্তুকি কমাতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আর ঋণ পেতে এই পরামর্শ দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, আইএমএফ। ব্যালেন্স অব পেমেন্ট ও বাজেট সহায়তা হিসেবে এই ঋণদাতা সংস্থার কাছে ৪ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ চেয়েছে সরকার। ঋণ দিতে একগুচ্ছ শর্ত জুড়ে দিয়েছে আইএমএফ।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, জ্বালানি তেলে দীর্ঘদিন যাবত বিশাল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে আসছিল আমাদের সরকার। বাস্তবে যে মূল্যে আমরা কিনি তার এক-চতুর্থাংশ মূল্যেও বাজারে বিক্রি করি না। জ্বালানি হচ্ছে কেন্দ্রীয় দ্রব্য, সকল দ্রব্যের সৃষ্টিতে যার ভূমিকা প্রধান। সেই জ্বালানির মূল্য যখন বেড়েছে, আর কেবল বাড়া নয় বেশ বড় অঙ্কের বেড়েছে তখন আঘাতটাও বড় আসবে। সেটা অস্বীকার করার কোনো মানে হবে না। আইএমএফ বলুন কিংবা বিশ্বব্যাংক, তাদের সংস্কারের মানে হচ্ছে তারা যে নিয়মকানুনের কথা বলেছে সেগুলো মেনে চলতে হবে।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।