Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

দেড়শতাধিক অবৈধ স্থাপনা বহাল

ভৈরব নদের খনন কাজ শেষ

শাহেদ রহমান, যশোর থেকে | প্রকাশের সময় : ৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৪ এএম

যশোরের ভৈরব নদের খনন কাজ শেষ হয়েছে। তবে যশোর শহরের দড়াটানায় পূর্ব প্রান্তের দেড়শতাধিক অবৈধ স্থপনা উচ্ছেদ না করায় খনন প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। নদ সংস্কার আন্দোলনের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড সরকারের নীতির প্রতি বৃদ্ধাআঙ্গুল দেখিয়ে তাদের ডিজাইন অনুযায়ী ও এই ভৈবর নদ খনন করেনি। বরং প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে প্রশাসন ও পানি উন্নয়নবোর্ড দখলকারীদের স্থাপনা রক্ষা করতে গিয়ে খননের নামে নদ উল্টো খালে পরিণত করেছে। ফলে এই খননকাজ কাজে আসবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তারা। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, আমরা অনেক দখলদার উচ্ছেদ করেছি। ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হলে জেলা প্রশাসন আর পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে বাকীদেরও উচ্ছেদ করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৬ সালে ২৭২ কোটি টাকার ৯২ কিলোমিটার নদ খনন প্রকল্প গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। শুরু হয় পাঁচ বছর মেয়াদি ‘ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্প’। শহর অংশের চার কিলোমিটার এলাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ছাড়া খনন কাজ করা সম্ভব ছিল না। এ জন্য জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে নদের দু’ধারে জেলা প্রশাসনের খাসজমি এবং সড়ক ও জনপদ বিভাগের জমিতে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনার তালিকা তৈরি করে প্রশাসন। সবমিলে ভৈরব নদের গর্ভে ও তার পাড়ে সরকারি জমিতে গড়ে তোলা ২৯৬ অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি উচ্ছেদের চূড়ান্ত নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশ পাওয়ার পরদিনই বেশ কয়েকজন নিজেদের বৈধ মালিক দাবি করে জেলা প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করেন। পরে তারা উচ্ছেদ বন্ধে উচ্চ আদালতের দারস্থ হন। সবশেষ ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ ৮৪টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে। কিন্তু পূর্ব প্রান্তের অবশিষ্ট দেড় শতাধিক অবৈধ স্থাপনা ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। গত তিন বছরে এই উচ্ছেদ নিয়ে সাড়া শব্দও মিলেনি। সেই দখলদার রেখেই ভৈরব খনন শেষ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। এমনকি নদের দুই ধারে হাঁটার ও সৌন্দর্য বর্ধন করার কাজ চলছে দখলদার রেখেই। সূত্র মতে, ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই নিজেদের ওয়েবসাইটে এসব দখলদারদের তালিকাটি প্রকাশ করে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন।
যশোর সদরে ভৈরব দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করা সেই তালিকায় রয়েছে একতা ক্লিনিক, দড়াটানা হাসপাতাল, মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কম টেক হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, দেশ ক্লিনিক, অর্থোপেডিক ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার, জনতা সুপার মার্কেট, সম্রাট সুজ, প্রাইম সুজ, ছিট বিতান, এ্যানি সুজ, একতা ক্লথ স্টোর, তাসলিমা টেলিকম, মাংসের দোকান, বিভিন্ন চায়ের দোকান, বাসা বাড়িসহ অন্যান্য স্থাপনা। কিন্তু এ দখলদারদের কেউ উচ্ছেদ হয়নি। উপরন্তু এসব দখলদারসহ পাড়ের ক্লিনিক ও হাসপাতালের বর্জ্য নদে ফেলে নদ দূষণ করা হচ্ছে।
ভৈরব নদ সংস্কার আন্দোলন কমিটির উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, ‘আন্দলনের ভিতর দিয়েই ভৈরব নদ খনের প্রকল্প গৃহিত হয়। এই নদই হলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান নদী প্রবাহ। সেই দিক থেকেই এই নদীটা যথাযত খনন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শুরু থেকেই সংশয়ে ছিলাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতীত কার্যকলাপ দেখে আধও সঠিকভাবে এই নদী খনন হবে কিনা। আমাদের সেই সংশয় সত্যি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজাইন অনুযায়ীও এই ভৈবর নদ খনন হয়নি। বরং নদী আইন ব্যহত ঘটিয়ে নদীর ভিতরেই খননের মাটি রেখেছে। যা আবার এই মাটি দিয়েই নদী ভরাট হয়ে যাবে। সঠিক আইনানুগ ব্যবস্থা না নেওয়া হয়; তাহলে নদ সংস্কারের প্রশ্ন, জনগণের স্বার্থের যে প্রশ্ন সব ক্ষতিগ্রস্ত হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষিত এই প্রকল্প যে নয়ছয় করা যায় সেটা পানি উন্নয়ন বোর্ড করে দেখালো।
জনউদ্যোগ যশোরের সদস্য ও যশোরের প্রবীণ সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা রুকুনউদ্দৌলাহ্ বলেন, ভৈরব রক্ষায় জনউদ্যোগের পক্ষ থেকে বহুবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। আমাদের দাবি ছিল প্রথমে দখলদার উচ্ছেদ করতে হবে। এরপর নিয়মমাফিক ভৈরব খনন করে সৌন্দর্যবর্ধন করা। কিন্তু দখলদার উচ্ছেদ করা হয়নি। এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার। নদ খননে যারা অনিয়ম দুনীর্তি করেছে তাদেরকে নদী আইনে আইনের আওতায় আনা উচিত।
এ বিষয়ে পাউবো যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম বলেন, নির্দিষ্ট সময়ে তারা খনন শেষ করার চেষ্টা করছেন। নানা কারণে সেটা হয়ে উঠেনি। খনন কাজ শেষ বলা চলে। তবে ওয়াকওয়ে, সৌন্দর্য বর্ধন কাজ বাকী রয়েছে। সম্প্রতি ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে; দ্রতই এই কাজ শুরু হবে। দখলদার উচ্ছেদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা অনেক দখলদার উচ্ছেদ করেছি। ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ হলে জেলা প্রশাসন আর পানি উন্নয়ন বোর্ড যৌথভাবে বাকীগুলোদের উচ্ছেদ করা হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ