বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
কুষ্টিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জগামী ঈগল পরিবহনের বাসটি গভীর রাতে টাঙ্গাইল সীমানায় প্রবেশ করতেই নিয়ন্ত্রণ নেয় ডাকাতরা। এরপর তারা ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক হয়ে নিরাপদ সড়ক হিসেবে বেছে নেয় টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ-জামালপুর সড়ক। এর মধ্যেই চলে ডাকাতি ও ধর্ষণ। পরে বাসটি জেলার ঘাটাইল উপজেলা পার হয়ে মধুপুর এলাকায় প্রবেশ করার পর রক্তিপাড়া এলাকার মসজিদের কাছে যাওয়ার আগেই একে একে নেমে পড়ে ডাকাত দলের সদস্যরা। এ সময় যে ডাকাত চালকের আসনে বসে ছিলেন তিনিও চলন্ত অবস্থায় নেমে পড়লে বাসটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে সড়কের পাশে একটি বিদ্যুতের খুঁটিতে ধাক্কা দিয়ে বালুর স্তূপের ওপর উঠে পড়ে।
এভাবেই গত বুধবার (৩ আগস্ট) দিবাগত রাতের ঘটনার বর্ণনা দেন স্থানীয়রা। টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়া বাজারে রাতে পাহারা দিচ্ছিলেন নৈশপ্রহরী হেলাল মিয়া। তিনি বিকট শব্দ পেয়ে দৌড়ে এসে দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির কাছে আসেন। এ সময় তিনি একটি সাদা মাইক্রোবাসও দেখতে পান। তবে বাসটি দুর্ঘটনায় কবলে পড়ায় সেখানেই দৃষ্টি ছিল তার। নৈশপ্রহরী হেলাল মিয়া বলেন, বাসটি রক্তিপাড়া বাজার পার হওয়ার পরই আসতে আসতে যাচ্ছিল। এ সময় কয়েকজনকে নেমে যেতে দেখলাম। পরে মুহূর্তেই বাস থেকে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার শোনা যাচ্ছে। বাসের পেছনেই একটি সাদা মাইক্রোবাস ছিল। ডাকাত দলের সদস্যরাও বাস থেকে নেমে দৌড়াতে শুরু করে। পরে তারা সাদা মাইক্রোবাসটিতে চরে স্থান ত্যাগ করে। যেহেতু বাসটি দুর্ঘটনায় কবলে পড়ে সড়কের পাশে হেলে পড়ে ছিল, তাই দ্রুত সেখানে গিয়ে চিৎকার দিয়ে স্থানীয়দের এগিয়ে আসতে বলি।
তিনি বলেন, পরে গাড়িটি হেলে পড়ার কারণে দরজা বন্ধ হওয়ায় যাত্রীদের জানালা দিয়ে বের করা হয়। মসজিদের মই দিয়ে তাদের গাড়ি থেকে নামানো হয়। তিনি আরও বলেন, এক নারীকে অর্ধনগ্ন অবস্থায় পাওয়া যায়। অন্যদের ওড়না দিয়ে তার শরীর ঢেকে দেওয়া হয়। এ সময় যাত্রীরা জানান- বাসে ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা সর্বস্ব লুটে নিয়েছে। গাড়িতে থাকা নারী যাত্রীদের ধর্ষণ করেছে ডাকাতরা। অনেকেই লোকলজ্জার ভয়ে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেনি। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন আসলে আমি বাজারে গিয়ে পাহারা দেওয়া শুরু করি।
বাসটি যেখানে হেলে পড়েছিল তার পাশের বাড়ির মালিক রক্তিপাড়ার কালামাঝি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, গভীর রাতে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনতে পেয়ে জানালা দিয়ে দেখি বড় বাস সড়কের পাশে হেলে পড়ে আছে। কিন্তু তখন সেখানে থাকা লোকজন ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করায় ভয়ে তখন যেতে পারিনি। পরে গিয়ে দেখি গাড়িতে যাত্রীরা আটকা পড়ে আছে। স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করি। এর মধ্যেই পুলিশ চলে আসে। যাত্রীরা জানিয়েছেন- ডাকাত দলের সদস্যরা যাত্রী বেশে গাড়িতে উঠেছিল। গাড়িতে উঠেই তারা ডাকাতি শুরু করে। এরপর চলন্ত অবস্থায় গাড়ি থেকে নেমে তারা চলে যায়। তবে চালকের আসনে কেউ না থাকায় গাড়ি সড়কের পাশে বালুর স্তূপ ও বিদ্যুতের খুঁটির সঙ্গে ধাক্কা লাগে। তবে গাড়ি যদি আরেকটু পেছনে হেলে যেত, তাহলে খাদের পানিতে পড়ত। এদিকে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ সড়কের এলেঙ্গা থেকে জেলার সীমান্তবর্তী রসুলপুর পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার সড়কে বাস ডাকাতি, চলন্ত বাসে ধর্ষণ এবং যাত্রী খুনের ঘটনা ঘটছে। বিগত ১০ বছরে এ সড়কে সংঘটিত বেশ কয়েকটি ঘটনা সারাদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। এছাড়া মধুপুর হয়ে জামালপুর ও শেরপুর সড়কেও একই অপরাধ সংঘটিত হয়।
জানা গেছে, ১৯৯২ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত জামালপুরের দিগপাইত থেকে মধুপুর উপজেলার গোলাবাড়ী পর্যন্ত সাত বার বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। আবার ১৯৯১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মধুপুর উপজেলা সদর থেকে রসুলপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ২০ কিলোমিটার সড়কে ছয় বার বাস ডাকাতির ঘটনা ঘটেছিল। এছাড়া ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট বগুড়া-ময়মনসিংহগামী একটি বাসে চালক ও তিন হেলপার এক নারীকে ধর্ষণ করে। ধর্ষকরা পরে তাকে মধুপুর বনাঞ্চলের এতিমখানা নামক স্থানে চলন্ত বাস থেকে জঙ্গলে ফেলে দেয়। ওই মামলায় চালকসহ চারজনকে মৃত্যুদণ্ড এবং একজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। ২০০৭ ও ২০০৯ সালে দুটি পৃথক ঘটনায় বিনিময় পরিবহনের দুটি বাসে দুই গার্মেন্টস কর্মীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। একটিতে মধুপুর থানায় মামলাও হয়। অপরটি সালিস বৈঠকের মাধ্যমে নিষ্পত্তি হয়। সাক্ষীর অভাবে মামলাটিও পরে খারিজ হয়ে যায়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।