দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
উত্তর : জগতের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি সাহিত্যিকরা যুগ যুগব্যাপী তাদের মনের মাধুরী মিশিয়ে অনুপম শৈল্পিক সুষমায় প্রিয়তম রসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাহাত্ম্যের যত ভাষাচিত্রই আঁকুন না কেন, তাতেও তাঁর গৌরবদীপ্ত মহিমা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। তাঁর অনিন্দ্যসুন্দর মুবারক দেহের সৌন্দর্যচ্ছটা, পবিত্র দেহের মনোমুগ্ধকর সুঘ্রাণ, আখলাকে হাসানা আর সর্বোপরি তাঁর (সা:) মুবারক সুহবতের কল্যাণে সাহাবা আযমাঈনের হৃদয় সাগরে যে প্রেমতরঙ্গের উচ্ছ্বাস জাগতো, তা প্রকাশের ভাষা কোথায়? নাবীয়ে রহমত সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পূত পূণ্যময় তাওয়াজ্জুহ (কারও প্রতি প্রেমময় মনঃসংযোগ/আত্মিক প্রভাব) ও অনন্য সাহচর্যের সুবাদেই সাহাবা আযমাঈনের এত আকশাছোঁয়া মর্যাদা। আল্লাহ জাল্লা শানহুর পরম প্রেমাষ্পদ রসূলে আকদাস সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুপম তাওয়াজ্জুহ/সুহবতের কি যে অনবদ্য মহিমা তারই প্রতিচ্ছবি নিম্নের আলেখ্যটিঃ
মক্কা বিজয়ের বছরে একদিন নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল্লাহ শারীফ তাওয়াফ করছিলেন। এমন সময় হয়রত ফোযালা ইবনে উমাইর (রা:) নামীয় জনৈক কুরাইশ (তখনও সে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয় নি) নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শহীদ করার বদ নিয়তে তাওয়াফ করতে লাগলো। এক পর্যায়ে সে রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে এসে পড়লো। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে প্রথমে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি ফোযালা? সে জবাব দিল, হ্যাঁ। রসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, ‘তুমি মনে মনে কি ভাবছো?’ সে বললো, কিছু না, আল্লাহর যিকর করছি। এ কথা শুনে নবী আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃদু হাসলেন এবং বললেন, ‘‘আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনাা কর’’। এ কথা বলেই রসূলে মকবুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফোযালার বুকে তাঁর পবিত্র হাত রাখলেন। এতে ফোযালার অন্তর থেকে নিমিষেই সমস্ত বদ চিন্তা বিদূরিত হয়ে গেলো। ফোযালা আল্লাহর শপথ করে বলতে লাগলো, ‘তখনও রসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর পবিত্র হাত আমার বক্ষ থেকে তোলেন নি, আমার অন্তরের অবস্থা এমন হয়ে গেলো যে, আল্লাহর সৃষ্টি জগতের মধ্যে আমার নিকট নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চেয়ে প্রিয়ভাজন আর কেউ নেই। (সুবহানাল্লাহ)। ইবনে হিশাম (রহঃ), সিরাতে ইবনে হিশাম, ২/৪১৭ পৃ., ইবনে কাসির (রহঃ), আাল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/৩০৮ পৃ., আল-মাওয়াহিবুল লাদুন্নিয়্যাহ।
এ কোন সীমাহীন বিস্ময় যে, কুফরির আঁধারে আচ্ছন্ন যে হৃদয়, তা মুহুর্তেই আলোকিত হলো হেদায়েতের জ্যোতির্ময় প্রভায়। যে মানুষটি ছিল গোমরাহির দুর্গন্ধময় পংকে নিমজ্জিত, সে আজ আলোর পথের যাত্রী। যে পাপিষ্ঠ নিষ্ঠুর জিঘাংসায় প্রিয় আঁকা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শহীদ করার উন্মক্ত নেশায় বন্ধপরিকর, সেই মানুষটির অন্তর আজ শাশ্বত সত্যের সৌরভে সুরভিত। এ কোন অসীম বিস্ময়! আমাদের ইন্দ্রিয়জ জ্ঞান এই অন্তহীন রহস্যলীলা অনুবাধনে অক্ষম। বিষ্ময়াবিষ্ট কন্ঠে শুধু এটুকুই বলতে পারি যে, কত অসামান্য, কত মাধুর্যমন্ডিত ছিল প্রিয় আঁকা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনন্য সুন্দর সুহবত, কত মাধুরীময় ছিল তার পবিত্র হাতের প্রেমময় পরশ। আর তাই তো সাহাবা আযমাঈনের হৃদয় সিন্ধু ইশকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তাল তরঙ্গে উচ্ছ্বলিত হয়ে উঠত। রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রণয়ে তারা হয়ে যেত বেকারার, আবেগে উদ্বেলিত। হে মাবুদ! তোমার বারগাহে অশ্রুভেজা আকুতি, আমাদের হৃদয় সরোবরেও প্রস্ফুটিত করে দাও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রেমের পারিজাত।
উত্তর দিচ্ছেন : খন্দকার সিদ্দিকুর রহমান। শিক্ষাবিদ ও গবেষক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।