বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা কাল বৃস্পতিবার (৪ আগস্ট) সকাল ৮টা পর্যন্ত হামলাকারীদের গ্রেফতারের সময় বেঁধে দিয়েছেন। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারীদের গ্রেফতার করা না হলে বহির্বিভাগসহ ওসমানী হাসপাতালের সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। আজ বুধবার (৩ আগস্ট) বেলা আড়াইটার দিকে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার শেষে এ ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
এর আগে দুপুর ১টার দিকে ওসমানী হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীরা অবরোধ করেন স্থানীয় মেডিকেল রোড। পরে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়ে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন।
ওসমানী মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর উপর হামলা ও হাসপাতালের এক নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের শ্লীলতাহানীর ঘটনার প্রতিবাদ এবং দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে সোমবার রাত থেকে ্ওসমানী হাসপাতালে চলছে টানা আন্দোলন। গতকাল মঙ্গলবার পুলিশ ও হাসপাতাল প্রশাসন এবং আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক হলেও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমঝোতা হয়নি। মূল অভিযুক্ত কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় ওসমানী হাসপাতালের শুধু জরুরি ও হৃদরোগ বিভাগ ছাড়া সকল বিভাগে কার্যক্রম বন্ধ রাখেন তারা।
আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় আজ বুধবার সকাল থেকে ওসমানী মেডিকেল কলেজের প্রশাসনিক ভবনে তালা মেরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেন শিক্ষার্থী ও ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পরে তারা বিক্ষোভ করে দুপুর ১টার দিকে মেডিকেল রোড অবরোধ করেন। এসময় সড়কে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজটের। এসময় হাসপাতালের মূল ফটকও বন্ধ করে দেন। তবে এক ঘণ্টা পর আন্দোলনকারীরা অবরোধ প্রত্যহার করে খুলে দেন মূল ফটক। এসময় কর্মবিরতি ও ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন আন্দোলনকারীরা।
জানা যায়, ওসমানী মেডিকেল কলেজের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী (ইন্টার্ন চিকিৎসক) ইমন আহমদের (২৪) সঙ্গে গত রোববার দুপুরে এক রোগীর দুই স্বজনের বাগবিতন্ডা হয়। ইন্টার্ন চিকিৎসকরা এসময় পুলিশে সোপর্দ করেন ওই দুজনকে। পরে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মীমাংসা হয় বিষয়টি। ওই ঘটনার জের ধরে সোমবার রাত ৮টার দিকে ইমন আহমদ ও তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রুদ্র নাথের (২২) উপর কলেজের পেছনে হামলা হয়। আহত অবস্থায় তাদেরক উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন সহপাঠীরা। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে রাত ১০টার দিকে ধর্মঘটের ডাক দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। তারা হাসপাতালের সব বিভাগে চিকিৎসা সেবা বন্ধ করে দেন। এছাড়া কলেজের সামনের সড়কে অবস্থান নিয়ে অবরোধ করেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিলেটে মেট্রোপলিটন পুলিশের (এসএমপি) দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এবং সিলেট আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। পরে রাত ১টার দিকে আন্দোলনরতের সঙ্গে বৈঠক হয় তাদের। এসময় শিক্ষার্থীরা মেডিকেল কলেজে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলাকারীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মেডিকেল প্রশাসনের মামলা করাসহ পাঁচ দফা দাবি জানান। তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়নের আশ্বাস দিলে রাত ৩টার দিকে ধর্মঘট ও অবরোধ প্রত্যাহার করেন আন্দোলনরতা। তবে এসময় তারা হামলাকারীদের গ্রেফতাওে গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন আন্দোলনরত ইন্টার্ন চিকিৎসকরা।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বেলা দুইটায় আন্দোলনরতদের সঙ্গে কলেজ, হাসপাতাল, পুলিশ প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ফের বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ইন্টার্ন চিকিৎসকের দাবিগুলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের আশ্বাস দেওয়া হয় এবং মঙ্গলবার সকালেই মেডিকেল কলেজে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে বলে জানানো হয়। তবে হামলাকারী কেউ গ্রেফতার না হওয়ায় বৈঠক শেষে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। পরে বিকেলে কলেজ প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। তবে শুধু ইমার্জেন্সি ও হৃদরোগ বিভাগে সেবা অব্যাহত রাখবেন বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
এদিকে, ওসমানী মেডিকেল কলেজের দুই শিক্ষার্থীর ওপর হামলা ও নারী ইন্টার্ন চিকিৎসকের শ্লীলতাহনির অভিযোগে ৮ জনকে আসামি করে গতকাল দুপুরে কোতোয়ালি থানায় দুটি মামলা দায়ের করেন হাসপাতাল ্ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। ওসমানী হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ হানিফ এবং ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিএ-টু প্রিন্সিপাল ও সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহমুদুল রশিদ বাদী হয়ে দায়ের করেন পৃথক দুটি মামলা। দুই মামলার আসামিরা হলেন- দিব্য, আব্দুল্লাহ, এহসান, মামুন, সাজন, সুজন, সামি ও সাঈদ হাসান রাব্বি। আসামিদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত।
এদের মধ্যে নগরীর মুন্সিপাড়ার মৃত রানা আহমদের পূত্র সাঈদ হাসান রাব্বি (২৭) ও কাজলশাহ এলাকার আব্দুল হান্নানের পূত্র এহসান আহমদ (২২)-কে সোমবার দিবাগত রাতে পুলিশ গ্রেফতার করে। রাব্বি সিলেট মহানগরীর ৩ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক।
অপরদিকে, ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া জানান, ইন্টার্ন চিকিৎসকরা আন্দোলন করলেও স্বাভাবিক রয়েছে সার্বিক চিকিৎসাসেবা। হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজের নিরাপত্তা জোরদার করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। আজ বুধবার দুপুরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘একদম সর্বোচ্চ লেভেল থেকে তাদের সাথে কথা হচ্ছে এবং এটার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আইজিপি থেকে এবং আমাদের অনেক উপরের লেভেল থেকে এটার ব্যাপারে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। একটাই দাবি আপনারা জানেন যে, অন্তত একজন বা দুইজন হলেও যেন ধরা পড়ে আসামি। ওরা (শিক্ষার্থীরা) পুলিশের রেসপন্স দেখতে চাচ্ছে, অ্যাকশন দেখতে চাচ্ছে। এখানকার পুলিশ কমিশনারের সাথে রাতে ও সকালে আমার কথা হয়েছে। র্যাব, পুলিশ ও অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা সবাই (আসামি গ্রেফতারে) কাজ করছে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বিষয়টি জানে। তাঁরা উপর থেকে কাজ করছেন। এখানকার ডিজি স্বাস্থ্য এবং ডিজি স্বাস্থ্য-শিক্ষাও খোঁজ রাখছেন।’ হাসপাতাল পরিচালক আরও বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বড় একটা রোল প্লে করে। এটা সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতেই। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি (সমাধান) হবে। অবশ্যই (স্বাভাবিক কাজে) কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। আমাদের আশা আসামিরা তাড়াতাড়ি গ্রেফতার হবে এবং আমরা স্বাভাবিক কাজে ফিরে যাবো।’ বর্তমানে অন্যান্য ডাক্তার ও স্টাফ যারা আছেন, তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
সার্বিক নিরাপত্তাবৃদ্ধি প্রসঙ্গে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান ভুঁইয়া বলেন, ‘ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্যাম্পের জন্য একটা জায়গা দেখিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে পুলিশ ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। পুলিশের টহল বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আনসার বাহিনীর সদস্যদেরও বৃদ্ধি করার চেষ্টা চলছে। পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সমন্বয়ে নিরাপত্তা বৃদ্ধি পাবে আশা করি। ’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।