Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লোডশেডিংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্য খাত

এস. এম. সামছুর রহমান, বাগেরহাট থেকে | প্রকাশের সময় : ৩ আগস্ট, ২০২২, ১২:০৪ এএম

বাগেরহাটের শহর ও উপজেলাগুলোতে অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়েছে লোডশেডিং। একই সাথে মানা হচ্ছে না লোডশেডিং শিডিউল। এর ফলে জনভোগান্তিসহ বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে মৎস্য খাতে। বরফ কারখানাগুলো থেকে চাহিদা অনুযায়ী বরফ পাচ্ছেন না ব্যবসায়ী ও জেলেরা। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম, তাই এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি বিদ্যুৎ বিভাগের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাগেরহাটে গলদা ও বাগদা চিংড়ি থেকে শুরু করে, ইলিশ, ভেটকি, পারশে, টেংরা, রুই ও কার্প জাতীয় মাছ উৎপাদান হয়। এই জেলায় উৎপাদিত সাদা সোনাখ্যাত চিংড়িসহ সাদা মাছ প্রক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। কিন্তু বাগেরহাটে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক না থাকায় হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বরফ কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে বরফ কারখানায় গিয়ে চাহিদা অনুযায়ী বরফ পাচ্ছে না, মৎস্য চাষি ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এতে তারা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।
বারাকপুর মৎস্য আড়তের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম জানান, বিদ্যুতের সমস্যার কারণে বরফ কম জমাট বাধায় আগের থেকে বেশি টাকার বরফ দিয়ে মাছ পাঠাতে হচ্ছে। আগে যেখানে ১৫০০ টাকার বরফ দিয়ে এক পেটি মাছ ঢাকায় পাঠানো যেত এখন সেখানে প্রায় ২ হাজার ৪শ’ টাকার বরফ প্রয়োজন হচ্ছে।
সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া ফিসিং ট্রলারের চালক মিকাইল ইসলাম বলেন, ‘টানা ৬৫ দিন অবরোধের পর আমরা যখন সাগরে মাছ ধরতে যাবো তখন চাহিদানুযায়ী বরফ পাচ্ছি না।
খুচরা বরফ ব্যবসায়ী মিকাইল ইসলাম জানান, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের অজুহাতে ভেতরে ফাঁকা বরফ দেয়া হচ্ছে, মাঝে মধ্যে কম জমাটবাধা বরফও দেয়া হচ্ছে। এর ফলে ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন হচ্ছি।
সুন্দরবন বরফ কলের ক্রেন অপারেটর মিঠুন মন্ডল জানান, দিন রাতে অনেকবার বিদ্যুৎ যাওয়া-আসা করে। একবার বিদ্যুৎ গেলে অনেক সময় পরে আবার আসে। বিদ্যুতের লুকোচুরির ফলে বরফ ঠিকমত জমাতে পারছেন না, একবার জমে আবার বিদুৎ চলে গেলে গলে যায়।
নাগেরবাজারের বরফকল মালিক তারাপদ দাম বলেন, যেভাবে বিদ্যুৎ যাচ্ছে তাতে এখনই ক্রেতাদের ঠিকমত বরফ দিতে পারছিন না। আগামীর বরফের চাহিদা পুরণ করা তাদের পক্ষে মোটেও সম্ভব হবে না। তাছাড়া বিদ্যুৎ যাওয়া আসার কারণে বৈদ্যুতিক মোটরসহ বিভিন্ন সরঞ্জামের ক্ষতি হচ্ছে।
বাগেরহাট চিংড়ি চাষি সমিতির সভাপতি ফকির মোহিতুল ইসলাম সুমন বলেন, লোডশেডিং-এর কারণে বাগেরহাটে বরফের সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে ঠিকমত মাছ সংরক্ষণ করা যাচ্ছে না। তাছাড়া রপ্তানির জন্য চিংড়ি হিমায়িত করতেও সমস্যা হচ্ছে। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন মাছ চাষিরা।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ.এস.এম রাসেল বলেন, বাগেরহাট একটি মৎস্য প্রধান এলাকা। মাছ সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাত করণে বিদ্যুতের প্রয়োজন। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারনে বরফ জমাতে পারছে না মিল মালিকরা। এতে সাগরে যাওয়ার জন্য জেলেরা ও ব্যবসায়ীরা বরফ পাচ্ছে না। আর হিমায়িত মৎস্য প্রক্রিয়াজাত করণের কাজও করতে পারছে না।
বাগেরহাট ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশ কোম্পানী লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ নির্বহিী প্রকৌশলী জিয়াউল হক বলেন, দেশের জ¦ালানি সাশ্রয়ের অংশ হিসেবে সরকারের নেয়া লোডশেডিং কার্যক্রম চলছে। বাগেরহাটেও বরাদ্দ অনুযায়ী লোডশেডিং করতে হচ্ছে, সিডিউল ঠিক রাখা যাচ্ছে না। দ্রুত সময়ের মধ্যে বাগেহাটের বিদ্যুৎ প্রবাহ স্বাভাবিক করে, সম্ভবনাময় মৎস্য খাতকে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার দাবি সংশ্লিষ্টদের।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ