Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

‘কামসূত্র’ রচিত হয়েছে যে দেশে, সেখানে তারকার নগ্ন ছবি নিয়ে এত হৈচৈ কেন?

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০২২, ৮:১৩ পিএম

"আমি এক হাজার মানুষের সামনে নগ্ন হতে পারি… কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে কি, তারা অস্বস্তি বোধ করবেন," সম্প্রতি 'দ্য পেপার' নামের এক ম্যাগাজিনকে বলছিলেন বলিউড তারকা রনবীর সিং। বাস্তবে আসলে ঠিক এরকমটাই ঘটেছিল, যখন সম্প্রতি রনবীর সিং এই একই ম্যাগাজিনের জন্য নগ্ন হয়ে পোজ দিলেন। তার এসব ছবি ছাপা হয়েছিল ম্যাগাজিনটির পাতা জুড়ে। সাথে সাথে সোশ্যাল মিডিয়া যেন একই সঙ্গে এর প্রশংসায় আর ধিক্কারে বিস্ফোরিত হলো। তবে প্রশংসার চাইতে ধিক্কারই যেন অনেকগুণ বেশি।

রনবীর সিং এর নগ্ন ছবির মিম আর কৌতুকে ভেসে যেতে লাগলো সোশ্যাল মিডিয়ার টাইমলাইন। অনেকেই অভিযোগ করলেন এই তারকা পুরুষ জাতিকে কলঙ্কিত করেছেন। সেখানেই শেষ নয়, তার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের করা হলো, কারণ তিনি "নারীদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন।" রনবীর সিং আর দশজন গড়পড়তা পুরুষ তারকার মতো নন। তিনি অসীম প্রাণশক্তিতে ভরপুর এবং বর্ণাঢ্য এক ব্যক্তিত্ব, আর তার ফ্যাশনের স্টাইলও একটু খ্যাপাটে- ভেলভেটের প্যান্ট, টার্টল-নেক সোয়েটার, অলংকার- ভোগ ম্যাগাজিনের ভাষায়, তিনি এমন এক ধরণের 'নন-বাইনারি' স্টাইল অনুসরণ করেন, যাকে এখন ফ্যাশন জগত লুফে নিচ্ছে।

দ্য পেপার ম্যাগাজিনের ভাষায়, রনবীর সিং "সনাতনী ভারতীয় সমাজে 'পুরুষত্ব' বলতে যত রকমের গতানুগতিক বদ্ধমূল ধারণা আছে, তার সবগুলিকেই আসলে চ্যালেঞ্জ করেছেন।" "একজন আদর্শ পুরুষের শরীর যেরকম ভাবা হয়, সেটা তার আছে। কিন্তু তিনি এমন সব পোশাক পরেন, যেন তিনি এক উভলিঙ্গের মানুষ। তিনি গোঁড়া নন, এবং যৌনতা নিয়ে খোলাখুলি কথা-বার্তা বলেন। ভারতে পুরুষত্ব বলতে যা বোঝানো হয়, রনবীর সিং-কে তার মধ্যে আঁটানো যাবে না। এটা সমাজে বিরাট উদ্বেগ তৈরি করছে, বহু মানুষ তাকে নিয়ে সাংঘাতিক অস্বস্তিতে ভুগছেন," বলছিলেন রাহুল সেন, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের টাফট ইউনিভার্সিটিতে "সাহিত্য এবং যৌনতা" নিয়ে পিএইচডি গবেষণা করছেন।

রনবীর সিং এর নগ্ন ছবির ব্যাপারে যেরকম বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, তাকে অনেকে ভারতীয় সমাজ নীতি-নৈতিকতা নিয়ে কি সাংঘাতিক বিভ্রান্তিতে আছে, তার উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরছেন। ভারতীয়দের মধ্যে একই সঙ্গে রক্ষণশীল আর উদার দৃষ্টিভঙ্গির যে এক অদ্ভুত সংমিশ্রণ আছে, রনবীর সিং-কে ঘিরে বিতর্ক যেন আবার সেদিকেই আলোকপাত করেছে। ভারতের বহু ছোট শহরের মন্দির গাত্রে পর্যন্ত কামোত্তেজক দৃশ্যের শৈল্পিক চিত্র খোদাই করা আছে। বিশ্বে যৌনতার সবচেয়ে প্রাচীন গ্রন্থগুলোর একটি 'কামসূত্র' রচিত হয়েছে ভারতে। ভারতীয় মডেল এবং নৃত্যশিল্পী প্রতিমা বেদী মুম্বাই এর এক সাগরতীরে নগ্ন হয়ে দৌড়ে একটি ফিল্ম ম্যাগাজিনের কভার ছবির জন্য পোজ দিয়েছিলেন বহু আগে সেই ১৯৭৪ সালে।

ভারতে নগ্নতা একেবারেই বিরল কোন ব্যাপার নয়। গায়ে ছাই মেখে হিন্দু সাধুরা নগ্ন হয়ে কুম্ভমেলার মতো ধর্মীয় উৎসবে যোগ দেন নিয়মিত। মিশিল বাস 'মাস্কুলার ইন্ডিয়া' নামে একটি বই লিখেছেন। তিনি বলছেন, ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটকে এরকম বহু ভারতীয় পুরুষের ছবি আর ভিডিও দেখা যাবে, যারা খুবই সংক্ষিপ্ত অন্তর্বাসে নিজেদের শরীর যৌন উত্তেজক ভঙ্গিতে তুলে ধরেছেন। "এদের কারো কারো তো হাজার হাজার, এমনকি লাখ লাখ ফলোয়ার আছে। এদের কারও কারও ছবির নীচে অশ্লীল মন্তব্য দেখা যাবে। কিন্তু সাধারণত এসব ছবিতে লোকে নানা ধরণের ইমোজি দিয়ে তারা যে কতটা চমৎকৃত হয়েছে, সেটাই প্রকাশ করেছেন", বলছেন তিনি।

আর বলিউডের ছবিতে তারকারা অ্যাকশন দৃশ্যে তাদের গায়ের শার্ট খুলে অংশ নিচ্ছেন- এটা তো হরহামেশাই ঘটছে। তবে মিশিল বাস বলেন, ভারতীয় সমাজে পুরুষদের শরীর দেখানোর ব্যাপারটি যতখানি পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য বলে মনে করা হয়, রনবীর সিং হয়তো সেখান থেকে অনেক বেশি বিচ্যুত হয়েছেন। তবে রনবীর সিং এর এসব ছবিতে তিনি ১৯৭০ এর দশকের সৌন্দর্য-বোধের ইঙ্গিতের পাশাপাশি আরেকটি বিষয় দেখতে পাচ্ছেন- পুরুষরা তাদের নরম বা মেয়েলি দিকের প্রকাশ ঘটালে সেটাকে যেরকম অস্বাভাবিক বলে ভাবা হয়, তিনি যেন সেটি নিয়ে উপহাস করছেন। অনেকে অবশ্য রনবীর সিং এর ছবি নিয়ে বিতর্ক একেবারেই নিরর্থক বলে মনে করেন।

ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এক লেখক শোভা দে বলেন, "আমি তো বুঝতেই পারছি না এই বিতর্ক কী নিয়ে। নাংগাপান (নগ্নতার হিন্দি শব্দ) তো ভারতে নতুন কিছু নয়। নিজের শরীর নিয়ে রনবীর সিং তার ইচ্ছেমত যা খুশি করার অধিকার রাখেন।" অথচ হিন্দু দেবীর নগ্ন ছবি বা নারীর স্তনের ওপর পুরুষের হাতের দৃশ্য আঁকার জন্য ভারতে এমএফ হুসেন এবং আকবর পদমশির মতো নামী শিল্পীদের আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। নগ্নতার দৃশ্য থাকায় সিনেমার সেটে গিয়ে ভাংচুর করা হয়েছে, নাটকের মঞ্চ তছনছ করা হয়েছে। সূত্র: বিবিসি।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ