বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, বর্তমান সরকারকে বিদায় করতে ২০১৪ সালের মতন আন্দোলনের দরকার নেই। তার চেয়েও অনেক শর্টকার্ট আন্দোলন করলে এই সরকার নদীর পানিতে ভেসে যাবে, হাবুডুবু খাবে। তীরে ওঠার কূল কিনারা পাবে না। আমরা সরকারের বিরুদ্ধে হরতাল দিচ্ছি না অনেক বছর। হরতাল তো সাংবিধানিক অধিকার। হরতাল দেব না, তা তো বলি নাই। অবরোধ সাংবিধানিক অধিকার। অবরোধ অনেকদিন করি না। করব না এমন কথা তো দিই নাই। হরতাল করলে কোথায় যাবেন, কোথায় থাকবেন, তার ঠিকানা আগেই বুকিং দেন। মানুষের ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। জনগণের হাতে হ্যারিকেন ধরিয়ে দিয়েছেন। সেটি সরকারকে ধরিয়ে দিতে হবে। তারপর হেঁটে দেখুক, হ্যারিকেন হাতে হাঁটতে কেমন লাগে।
তিনি শনিবার বিকালে নগরীর পুরাতন রেল ষ্টেশন চত্বরে সারাদেশে লোডশেডিং ও জ্বালানীখাতে অব্যবস্থাপনার প্রতিবাদে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা বলেছিলেন শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদন করবেন। সেজন্য রাতারাতি কুইক রেন্টাল করলেন। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে কুইক কমিশন বিদেশে টাকা পাচার করেছে। ১০ লক্ষ কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে। অবৈধ প্রধানমন্ত্রী অবৈধভাবে পাচার করা টাকা বৈধভাবে দেশে আনার কথা বলছে। অর্থমন্ত্রীও পার্লামেন্টে এরকম আইন পাশ করলো। আমার মনে হয় আপনার অর্থনীতি বুঝেন না। আপনি যে টাকা পাচার করেছেন সেটাতো বৈধ ভাবে নেন নাই, এই টাকা টাকা বৈধভাবে আনবেন কিভাবে? শ্রীলংকার পাচারকৃত টাকা বাজেয়াপ্ত হওয়ায় আজকে তাদের এই দুর্দশা।
তিনি বলেন, আজকে এমন একটা জালিম সরকার ক্ষমতায়। মানুষের আয় নাই। চাল ডাল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সবকিছুর দাম বেশি, তবে শেখ হাসিনার দাম ক্রমান্বয়ে কমছে। এই ফ্যাসিস্ট সরকারের মূল্য প্রতিদিনই কমছে। শেয়ার মার্কেটে ধস নেমেছে। আমরা যদি রাস্তায় সংক্ষিপ্ত আন্দোলন করি, তাহলে সরকার সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই চলে যাবে।
গয়েশ্বর রায় বলেন, বর্তমান সরকারের ক্ষমতায় থাকার কোন শক্তি নাই। আশেপাশের দেশের জারিজুরিও কমে গেছে। জঙ্গিবাদ এবং মৌলবাদের তকমা দিয়ে এতোদিন বিদেশিদের বোকা বানিয়ে রেখেছিল। আজকে পশ্চিমা বিশ্ব বুঝতে পারছে বাংলাদেশে মৌলবাদী দেশ না। জঙ্গিবাদ নাই। আজকে আস্তে আস্তে শেখ হাসিনার সকল কুকর্ম জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ এবং মানবাধিকার সংস্থা বার বার বলছে। এ দেশে কত লোক গুম হয়েছে কত লোক খুন হয়েছে, প্রহসনের মাধ্যমে কত লোককে সাজা দেওয়া হয়েছে, সবকিছুর হিসাব নিচ্ছে। করোনার জন্য ওষুধ আনতে টাকা দেয় সরকার এল সি খুলে দরবেশ। এখন ঔষধও আসলো, না টাকাও ফেরত পেল না। সরকার যদি দরবেশকে টাকা বানানোর জন্য টাকশাল খুলে দেয় সেই দেশ বেশি দিন টিকে থাকতে পারে না।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, শুধুমাত্র লোভের কারণে আজকে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে অন্ধকারের পথে নিয়ে গিয়েছে সরকার। এখন শহরে ২-৩ ঘণ্টা এবং গ্রামাঞ্চলে ৫-৬ ঘণ্টা লোডশেডিং জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তুলেছে। সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহবায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, বিদ্যুতের চাহিদা সঠিকভাবে নির্ধারণ না করেই চাহিদার অনেক বেশি পাওয়ার প্ল্যান্টের সঙ্গে চুক্তি করে দুর্নীতিপরায়ণ ব্যবসায়ীদের লুট করার সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। বিদ্যুৎ খাতে রাষ্ট্রীয় দায়দেনা ২ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৯৭ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। ২০২৪ সাল থেকে আগামী ৩০ বছরে সুদসহ এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে, যা জনগণের পকেট কেটে করা হবে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন বলেন, বিশেষ আইনে স্থাপিত রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল ১৯টি বিদ্যুৎকেন্দ্র দু-তিন বছরে বন্ধ হওয়ার কথা থাকলেও প্রয়োজন ব্যতিরেকে তা এখনো চলমান। বেশ কিছুসংখ্যক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদন না করেও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ বিপুল অর্থ নিয়ে যাচ্ছে। সরকারের নিজস্ব ব্যবসায়ীদের পকেটে গেছে ৪২ হাজার কোটি টাকা।
চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্কর বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় চাল, ডাল, তেল, লবণ, চিনি, শাকসবজি ও মাছ মাংসের দাম বৃদ্ধির জন্য সরকারের অব্যবস্থাপনা ও সরকারের মদদপুষ্ট সিন্ডিকেটই দায়ী। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকারকে এর দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার বলেন, আওয়ামীলীগের নীতি একটাই, সেটা হচ্ছে জনগণের সম্পদ লুট করে নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করা এবং তা বিদেশে পাচার করা। এখন আওয়ামী সেই জঞ্জাল সাফ করার সময় এসেছে। দেশকে আওয়ামী জঞ্জালমুক্ত করতে আমাদের প্রত্যেককে পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ভূমিকা নিতে হবে।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সুফিয়ান বলেন, জ্বালানি তেলের লোকসান কমাতে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু করেছে সরকার। কিন্তু এই লোডশেডিংয়ের জন্য সরকারের লুটপাটই দায়ী।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।