Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

নতুন হিজরী হোক পাপ পঙ্কিলতা ও অন্যায় অবিচার মুক্ত

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ২৯ জুলাই, ২০২২, ৪:০২ পিএম

কাল কিংবা পরশু থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে ইসলামী বর্ষপঞ্জির নতুন বছর হিজরী ১৪৪৪ সন। নতুন হিজরী বছরের আগমনে মুমিনের দৃঢ় প্রত্যয় হওয়া উচিৎ নতুন বছর হবে পাপ পঙ্কিলতা ও অন্যায় অবিচার মুক্ত। আল্লাহর হুকুম পালনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণে নেক আমলে জীবন হবে পরিপূর্ণ। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, মানুষের হিসাব নিকাশের সময় সমাগত। কিন্তু তারা বেখবর হয়ে অলসতার কারণে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। যখনই তাদের নিকট কল্যাণময়ী কোন নতুন উপদেশ আগামন করে তখন তারা তা খেলার ছলে শ্রবন করে। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং ১ ও ২)। আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।

মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, কাল কিংবা পরশু দিন থেকেই শুরু হতে যাচ্ছে ইসলামী বর্ষপঞ্জির নতুন বছর হিজরী ১৪৪৪ সন। তার অর্থ আমাদের জীবন থেকে ১৪৪৩ হিজরী সন নামে একটি বছর অতিবাহিত হয়ে গেল। হায়াত নামক বিল্ডিং থেকে ৩৬৫ দিনের ৩৬৫টি পাথর যেন খসে পড়ল। আর জীবন সংকীর্ণ হয়ে এলো। এটা আনন্দের নয়, এটা চিন্তার ব্যাপার। এখন উল্লাসের সময় নয়, বরং সময় হলো হিসাব নিকাশের। বিগত বছরে কতটুকু ভালো কাজে সময় দিতে পেরেছি ? কত সময় অন্যায় অনাচার, দুরাচার পাপ আর গুনাহের কাজে ব্যয় হয়েছে। এর হিসাব কি আমার কাছে আছে ? এর জবাব কি মহান আল্লাহর দরবারে আমি দিতে পারব ? যদি আমার কাছে হিসাব না-ই থাকে, জবাব যদি দিতেই না পারি তবে এতো আনন্দ উল্লাস আর অহংকার দাপট কেন ? এর পরিনতি কি একবারও কি ভেবে দেখেছি ? না হিসাব তো নেই, মহান বিধাতার নিকট জবাব দেয়া তো সম্ভবই নয়। তাহলে এখনি সময় এসেছে হিসাব নিকাশ করার। বিগত জীবনের অন্যায় অবিচার, জুলুম অত্যাচার, দুর্নীতি দূরাচার, গুনাহ ও পাপাচার থেকে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করার। অতীতের সব দুঃখ গøানি ভুলে গিয়ে নতুন বছরে, নতুন উদ্যমে অধিক পরিমাণে নেক আমল করার। ব্যক্তি পরিবার, সমাজ, রাজনীতি ও রাষ্ট্রীও অঙ্গনে মানুষের কল্যাণে, দ্বীনের উপকারে জীবন বিলিয়ে দেয়ার। মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, মানুষের হিসাব নিকাশের সময় সমাগত। কিন্তু তারা বেখবর হয়ে অলসতার কারণে মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। যখনই তাদের নিকট কল্যাণময়ী কোন নতুন উপদেশ আগামন করে তখন তারা তা খেলার ছলে শ্রবন করে। (সূরা আম্বিয়া, আয়াত নং ১ ও ২)। আল্লাহ তায়ালা আরও ইরশাদ করেন, তোমরা তাকওয়া ও কল্যাণের পথে পরস্পরে সহযোগীতা করো। (সূরা মায়েদা, আয়াত নং ২)।

খতিব বলেন, একটি বছরের উপসংহারে নতুন বছরের আগামনে মুমিনের দৃঢ় প্রত্যয় হওয়া উচিৎ আমার নতুন বছর হবে পাপ পঙ্কিলতা ও অন্যায় অবিচার মুক্ত । আল্লাহর হুকুম পালনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসরণে, নেক আমলে জীবন হবে পরিপূর্ণ। আল্লাহ সকলকে তৌফিক দান করেন। আমিন। ঢাকার শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি জুমার বয়ানে বলেন, আল্লাহ তায়ালা বিশেষ কিছু সূরা ও আয়াতের ফযিলত ও মর্যাদা ঘোষণা করেছেন। যেন বান্দারা অধিকহারে সওয়াব অর্জন করতে পারে। ফযিলতের অধিকারী সূরাসমূহের অন্যতম হলো সূরা ইখলাস। হাদিস শরিফে এই সূরার অনেক ফযিলতের কথা বর্ণিত হয়েছে। 'সূরা ইখলাস পবিত্র কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান' । হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা.) হতে বর্ণিত, এক ব্যক্তি জনৈক সাহাবীকে দেখলেন বারবার 'ক‚ল হু আল্লাহু আহাদ' সূরাটি পড়ছেন। সকাল হলে ঐ ব্যক্তি রাসূলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সামনে বিষয়টি পেশ করলেন। লোকটি হয়ত ভেবেছেন, এ ছোট একটি সূরা বারংবার পড়তে থাকা তেমন সওয়াবের কাজ নয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ঐ সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ! সূরা ইখলাস কোরআনের এক তৃতীয়াংশের সমান। (সহিহ বুখারী, হাদিস- ৫০১৩) । আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, জনৈক আনসারী সাহাবী মসজিদে কোবায় ইমামতি করতেন। তার অভ্যাস ছিলো, সূরা ফাতেহার সাথে অন্য সূরা মিলানোর আগে অবশ্যই সূরা ইখলাস পড়তেন, এরপর অন্য সূরা পড়তেন৷ প্রতি রাকাতেই তিনি এমন করতেন। তার সাথী-সঙ্গিরা আপত্তি জানালেন। তারা বললেন, আপনি প্রত্যেক রাকাতে সূরা ইখলাস পড়েন, কিন্তু এই সূরাকে যথেষ্ট মনে করেন না; বরং এর সাথে আরেক সূরা তিলওয়াত করেন। আপনি হয় শুধু সূরা ইখলাস পড়ুন, না হয় শুধু অন্য সূরা পড়ুন। (সূরা ফাতেহার পর প্রতি রাকাতে দুই সূরা পড়বেন না) । তিনি বললেন, এই সূরা আমি ছাড়তে পারব না এবং আমি নামায পড়ালে এভাবেই পড়াব। তোমাদের পছন্দ হলে ইমামতি করব, না হয় ছেড়ে দেব। সেই সাহাবী ছিলেন তাদের দৃষ্টিতে শ্রেষ্ঠ মানুষ। তাই অন্য কেউ ইমামতি করবে, এটা তারা পছন্দ করেননি। (তাই এভাবেই চলতে থাকলো) । একদিন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে কোবায় এলেন। তার কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা হলো। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ সাহাবীকে ডেকে বললেন তোমার সাথিদের কথা মানতে বাধা কী? প্রতি রাকাতে আবশ্যিকভাবে সূরা ইখলাস পড়ার কারণ কী? সাহাবী উত্তর দিলেন আমি সূরা ইখলাসকে মহব্বত করি। তার জবাব শুনে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন সূরা ইখলাসের প্রতি তোমার এই মহব্বত তোমাকে জান্নাতে দাখেল করবে। (জামে তিরমিযি, হাদিস- ২৯০১) । দিনাজপুর গোর এ শহীদ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মাওলানা রেজাউল করিম জুমা বয়ানে বলেন, পশ্চিমা বিশ্ব আজ মানবতার কথা বলে নিজেই মানবতাবিরোধী কর্মকাÐের সঙ্গে জড়িত। কারণ তাদের কাছে ইসলাম নেই, ভালো মন্দের মানদন্ড নির্ধারণ করার মাপকাঠি নেই, তাদের কাছে ভালো কিছু নেই এমনটি বলা ঠিক হবে না। পশ্চিমা সমাজে অনেক ইতিবাচক দিক আছে। যা সত্যি অবাক করার মত। যেমন সামাজিক রীতিনীতি, ন্যায় নিষ্ঠা, মানুষের প্রতি সম্মান প্রদর্শন, ইত্যাদি। তবে পশ্চিমা সমাজের নেতিবাচক দিক হলো, প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষতা সত্বেও তাদের ঘরে,সংসারে, সুখ শান্তি নেই। দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রীর মাঝে ভালোবাসা প্রেম নেই। সম্পর্ক নেই। পারিবারিক দায়িত্ববোধ নেই। দীর্ঘ সময় একসাথে থাকার পরেও সামান্য বিষয় নিয়ে তারা পারিবারিক জীবনে আলাদা হয়ে যায় । সন্তানের চিন্তা করে না। স্বামীর চিন্তা করে না। পরিবার নিয়ে কোন ভাববার সময় তাদের থাকে না। যাদের ব্যক্তি জীবনে পারিবারিক জীবনে দায়িত্ববোধ ভালোবাসা মানবতা থাকে না তারা কিভাবে বিশ্বকে মানবতা শেখাবে? পৃথিবীতে ইসলাম একমাত্র ধর্ম যে শান্তির বার্তা দেয়। মানবতার কথা বলে। ভালোবাসার কথা বলে। আল্লাহ তায়ালা বলেন নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনবে এবং নেক আমল করবে আল্লাহ তায়ালা তাদের অন্তরে মহব্বত ও ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিবেন। (সূরা মারিয়াম হায়াত নং ৯৬) যদি তুমি জমিনে যা আছে তার সবকিছুই ব্যয় করো তবুও তাদের অন্তরসমূহে প্রীতি স্থাপন করতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেন। ( সূরা আনফাল আয়াতনং ৬৩)



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ