বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
শিক্ষা,চিকিৎসা,বিশুদ্ধ পানি,নিরাপদ বাসস্থানসহ পর্যাপ্ত নাগরিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন দ্বীপ লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআব্দুল্লাহ ইউপি নির্বাচন আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আজ বুধবার অনুষ্ঠিত হওয়া লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে দুটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এর একটি মেঘনানদী বেষ্টিত দ্বীপ চরআবদুল্লাহ। অন্যটি বড়খেরী ইউনিয়নে।
সরকারি হিসেবে ২২ বর্গ মিটার আয়তনের এ ইউনিয়নে মোট জনসংখ্যা ৪০ হাজার হলেও বর্তমানে এ চরের জনসংখ্যা ১৫ হাজার। এর মধ্যে ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার ৯শ ৩৭। চেয়ারম্যান পদে ২, সাধারণ সদস্য পদে ২১ এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৯জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। এ ইউনিয়নটি বিচ্ছিন্ন এক চরে অবস্থিত। যার চারদিকে রয়েছে মেঘনানদী। নোয়াখালীর হাতিয়া,ভোলার তজুমদ্দীন, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার সীমান্তবর্তী ইউনিয়ন এটি। বিচ্ছিন্ন এ ইউনিয়নের নির্বাচন নিয়ে আতংক আর উৎকন্ঠায় রয়েছে গোটা উপজেলাবাসী।
সীমান্তবর্তী হওয়ায় সুষ্ঠ ভোট নিয়ে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন সকল প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা।
ইউনিয়নবাসীর দীর্ঘদিনের দাবী দূর্গম চরের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নির্মাণ ও চুরি,ডাকাতি,চিনতাই, হত্যা ও অপহরণ সহ চরের জনগনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে একটি পুলিশ ক্যাম্প বা ফাঁড়ি থানা স্থাপনে যিনি ভূমিকা রাখতে পারবে তাকেই এবার বিবেচনা করবেন বলে জানান ভোটাররা।
চরআব্দুল্লাহ ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি কামাল উদ্দীন মন্জু ও আনারস প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হন সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ বেলাল হোসেন।
উপজেলা সদর থেকে যাতায়াত সমস্যাসহ বহুমুখী কারনে এ ইউনিয়নের কার্যালয়টি রামগতি পৌরসভার আলেকজান্ডার বাজারে অবস্থিত। স্থানীয় কয়েকটি ওয়ার্ডের কয়েকজন ইউপি সদস্য প্রার্থীর সাথে কথা বলে জানা গেছে এক তৃতীয়াংশ ভোটার তাঁদের স্থায়ী ঠিকানায় থাকেন না। নাগরিক জীবনের নানান অসুবিধার সম্মুখীন হওয়ার এ চরে স্থায়ীভাবে কেউই থাকতে চান না।
বেশিরভাগ ভোটারই উপজেলার মূল ভূখন্ড তথা রামগতি-কমলনগরসহ নোয়াখালী জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বসবাস করেন। এসব ভোটারদের নদীর ওপারে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত করাটাই কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে প্রার্থীদের।
অন্যদিকে বিচ্ছিন্ন চর হওয়ায় ভোটারও যেতে চান না এলাকায়। সবার মাঝে আতংক বিরাজ করছে। হাতিয়া,সন্দ্বীপ,ভোলা, বরিশালসহ আশপাশের ডাকাত, সন্ত্রাসী, নৌ ডাকাত, বনদস্যু ও জলদস্যু কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত এসব এলাকায় স্থাপিত ৮টি কেন্দ্রই (অপর ১টি কেন্দ্র মূল ভুখন্ডে অবস্থিত) অধিক ঝূঁকিপুর্ন। ভোটাররা দুরে থাক,
অনেক মেম্বার প্রার্থীই ভোটের দিন কেন্দ্র এলাকায় অবস্থান করতে পারবেন কিনা শংকায় আছেন। প্রতীক পাওয়ার পর থেকে একাধিক প্রার্থী দিনের বেলায় নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করলে রাতে ফিরে আসছেন এ পাড়ে। ইতিমধ্যে দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে চেয়ারম্যান বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন কৃষকলীগের সভাপতি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বেল্লাল হোসেনকে। উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় নির্বাচন কমিশন ইভিএম পাল্টে ব্যালটে ভোট গ্রহন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নানামূখী আতংক কাটাতে ভোটার-প্রার্থী উভয়েই চাচ্ছেন পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃংখলা বাহিনীর উপস্থিতি যেন থাকে।
তবেই এ আংতক উৎসবে রুপ নিতে পারে।
৯ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারন সদস্য প্রার্থী মোঃ মিলাদ হোসেন, আইউব নবী (৫ নম্বর ওয়ার্ড), রাবেয়া বেগম (সংরক্ষিত ৪,৫,৬), আবুল খায়ের (৪ নম্বর ওয়ার্ড ),মো: যুবরাজ (৭নম্বর ওয়ার্ড) সহ কয়েকজন মেম্বার প্রার্থী জানান, ইতিমধ্যে সবগুলো কেন্দ্র ঝুকিপূর্ণ বলে আমরা রিটার্নিং কর্মকর্তাসহ একাধিক স্থানে আবেদন করেছি। এমনকি একাধিক কেন্দ্র স্থানান্তরেরও আবেদন করেছি।
৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার মোঃ মিলন জানান, ভোট নিয়ে আতংকে আছি। পরিবেশ দেখে তবেই ভোট দিতে যাবো। মুল ভূখন্ডে বসবাসরত ভোটার মোঃ মনির জানান,গন্ডগোল হতে পারে তাই দেখে শুনে এলাকায় যাবো ভাবছি। কারন সবার আগে জীবনের নিরাপত্তা।
আওয়ামীলীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী কামাল হোসেন মঞ্জুর জানান, এখন পর্যন্ত শান্তিপুর্নভাবে প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছি। সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রশসনকে সহযোগিতা করছি।
স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ও সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ বেল্লাল হোসেন জানান, সবগুলো কেন্দ্রই ঝুঁকিপূর্ন। এছাড়াও সরকার দলীয় প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা হুমকি-ধামকি দিচ্ছেন। এসব নিয়ে ভোটাররাও আতংকে আছে।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তা কাজী হেকমত আলী জানান, ভোটারদের ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই। ভোটারদিন নিরাপত্তার জন্য পর্যান্ত লোকবল থাকবে। আমি সকল ভোটারকে নির্ভয়ে ভোট কেন্দ্রে যাওয়ার অনুরোধ করছি। প্রার্থীদের অভিযোগ বিষয়ে বলেন, বেশ কয়েকটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি এবং সেগুলো সমাধান করার চেষ্টাও করেছি।
রামগতি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, দুর্গম চরাঞ্চল ও ঝুঁকিপূর্ন এলাকা হিসেবে চর আবদুল্লাতে একটি সুষ্ঠু এ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা সবটাই করবো। ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।