Inqilab Logo

বুধবার ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১ কার্তিক ১৪৩১, ০৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লোডসেডিং মুক্ত দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্যুৎ নিয়ে লক্ষ লক্ষ গ্রাহক চরম দুর্ভোগে

বরিশাল ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০২২, ১১:০৫ এএম

লোডসেডিং মুক্ত দক্ষিণাঞ্চলে বিতরন ও সরবারহ ব্যবস্থার গলদে ওজোপাডিকো’র লক্ষ লক্ষ গ্রাহককে বিদ্যুৎ নিয়ে প্রতিনিয়ত চরম দূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এমনকি খোদ বরিশাল মহানগরীতে পর্যন্ত দিনরাত বিদ্যুৎ নিয়ে যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ প্রায় ১০ লাখ মানুষ। দক্ষিণাঞ্চলের ৬ জেলা সদর ছাড়াও কয়েকটি উপজেলা সদরে ওয়েষ্ট জোন পাওয়ার ডিষ্ট্রিবিউশন কোম্পানী-ওজোপাডিকো’র দূর্বল বিতরন ও সরবারহ ব্যবস্থা বিদ্যুৎ নিয়ে যথেষ্ঠ ভোগান্তি রেখেছে সাধারন মানুষ থেকে শিল্প ও ব্যাবসা প্রতিষ্ঠানকেও।
পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র এখনো জাতীয় গ্রীডে যুক্ত না হওয়ায় উৎপাদিত সমুদয় বিদ্যুতই পশ্চিম জোনে বিতরনের ফলে লোডসেডিং-এর বাইরে থেকেও বিদ্যুৎ নিয়ে বিড়ম্বনার কোন শেষ নেই দক্ষিণাঞ্চলে। এ অঞ্চলে ১১ কেভি ফিডার থেকে শুরু করে এলটি লাইন সহ ১১/.০৪ ট্রান্সফর্মার সহ অন্যান্য স্পর্ষকাতর বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলোর পরিবর্তন এবং পূণর্বশন জরুরী হলেও সে লক্ষে কার্যকর কোন পদক্ষেপ নেই। এমনকি গত কয়েক বছর ধরে বরিশাল,যশোর ও গোপালগঞ্জ শহরের ১১ কেভী লাইনসমুহ ভূগর্ভে প্রতিস্থাপনের কথা শোনা গেলেও আদৌ তা আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে সন্দিহান কতৃপক্ষ। তবে দুটি প্রকল্পের আওতায় সম্প্রতি বরিশাল মহনগরীতে ৩টি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন পূণর্বাশন ছাড়াও আরো ২টি নতুন নিমান ছাড়াও ৩৩ কেভি কিছু লাইন নির্মান হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা সদর ছাড়াও ৩টি উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরন ও সরবারহের দায়িত্ব উত্তরাধিকার সূত্রে পিডিবি’র কাছ থেকে ওজোপাডিকো গ্রহন করে বানিজ্যিক ভিত্তিতে কাজ করছে বিগত ১৫ বছরেরও বেশী সময় ধরে। কিন্তু এ দীর্ঘ সময়েও প্রতিষ্ঠানটি দক্ষিণাঞ্চলে সঠিক পেশাদারিত্বের পরিচয় দিতে পারেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ কোম্পানী গঠনের পরে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে অন্তত ৪ গুন। প্রতিষ্ঠানটিতে অনেক দক্ষ ও পেশাদারী প্রকৌশলী সহ বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মী নিয়োগ দেয়া হয়েছে পিডিবি’র চেয়ে প্রায় দ্বিগুন বেতনে। কিন্তু গ্রাহকদের সেবার মান বৃদ্ধির পরিবর্তে ক্রমশ তলানীতে ঠেকছে।
খোদ বরিশাল মহানগরীর ২৮টি ১১ কেভীর এইচটি ফিডারে দিনরাত নানা মুখি বিড়ম্বনা অব্যাহত থাকলেও তা থেকে উত্তরনের নুন্যতম কোন উদ্যোগ নেই। ১১/.০৪ কেভি ট্রান্সফর্মারের ফিউজ পুড়ে যাওয়া থেকে শুরু করে এলটি ও এইচটি জাম্পার, লুপ আর ব্রেকারে গোলযোগ এ নগরীর নিয়মিত ঘটনা। আর সামান্য বাতাসেই বিতরন লাইনগুলোর ওপর আসেপাশের গাছের গলপালা ছিটেকে পড়ে বেশীরভাগ ফিডার ট্রিপ করছে। এমনকি অনেক সময়ই এসব গোলযোগ দীর্ঘস্থায়ী হয়। ফলে এবারের আষাঢ়Ñশ্রাবনের দুঃসহ গরমে বিদ্যুৎ বিভ্রাট গ্রাহকদের দূর্ভোগের চরম সীমায় নিয়ে যাচ্ছে।
বরিশাল মহানগরীর ২৮টি ১১ কেভী ফিডারের বেশীরভাগ লাইনই ত্রুটিপূর্ণ। এসব লাইনই ২০Ñ৩০ বছরের পুরনো। এলটি লাইনগুলো ইনসুলেটেড হলেও সময়মত পরিবর্তন সহ যথাযথ রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে তার অবস্থাও করুন। এ নগরীর কোন ১১/.০৪ ট্রান্সফর্মারে ড্রপ আউট সহ সংযুক্ত এলটি লাইনগুলোতে এমসিপি না থাকায় গোলযোগ লেগেই আছে। বেশীরভাগ ট্রান্সফর্মারের এলটি লাইনগুলোর ভারসাম্যতা না থাকায় ঘন ঘন এইচটি ফিউজ পুড়ে যাচ্ছে। আর ট্রান্সফর্মরিগুলোতে ড্রপআউট না থাকায় একটি ফিউজ পুড়ে গেলে পুরো ফিডার বন্ধ করে তা পরিবর্তন করতে হচ্ছে।
নগরীর বেশীরভাগ ফিডারের ৫০Ñ৬০টি ট্্রান্সফর্মার রয়েছে। প্রতিটি ট্রান্সফর্মারে ৩টি করে ফিউজ রয়েছে। ফলে কোন ফিডারে দৈনিক ৫টি ফিউজ পুড়ে গেলেও অন্য গোলযোগের বাইরেও ৫ বার লাইন বন্ধ করে ঐসব ফিউজ যুড়তে হচ্ছে।
এর বাইরেও নানামুখি গোলযোগের কোন শেষ নেই বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরন ব্যবস্থায়। খোদ বরিশাল মহানগরীর কোন অভিযোগ ও সেবা কেন্দ্রগুলোর জন্য সার্বক্ষনিক গাড়ী নেই। ফলে গ্রাহকদের অভিযোগের সুরাহা খুব দ্রুত হচ্ছে না। উপরন্তু কোন আবাসিক গ্রাহকের সার্ভিস লাইনের ত্রুটি দুর করতে ওজোপাডিকো’র সংশ্লিষ্ট অভিযোগ কেন্দ্রে খবর দেয়ার পরে দ্রুত সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। তেমনি এসব অভিযোগের সুরাহা করতে যারা আসেন, তাদের হাতে নুন্যতম দুশ টাকা দিতে হচ্ছে। কারণ বিশাল মই নিয়ে অভিযোগ কেন্দ্র থেকে গ্রাহকের বাড়িতে যাতায়াতেই ১শ টাকা রিক্সা ভাড়া দিতে হচ্ছে।
অপরদিকে রাত ১০টার পরে বরিশাল মহানগরীর দুটি বিতরন বিভাগের ২৮টি ফিডারের প্রায় ৩ লাখ গ্রাহকের জন্য মাত্র দুটি কথিত ‘ওয়ান স্টপ’ সার্ভিস খোলার থাকে। কিন্তু এ বিশাল মহানগরীর এত বিপুল সংখ্যক গ্রাহককে মাত্র দুটি কেন্দ্রের মাধ্যমে কি সেবা প্রদান সম্ভব, তা ওজোপাডিকো’র দায়িত্বশীলগন না বুঝলেও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন গ্রাহকগন।
বরিশাল মহানগরীর মত পটুযাখালী, ভোলা, পিরোজপুর, বরগুনা ও ঝালকাঠী শহরেও একই পরিস্থিতি। তবে দ্বীপজেলা ভোলা সহ আরো কয়েকটি শহরের অবস্থা আরো করুন।
এসব ব্যাপারে ওজোপাডিকো’র নির্বাহী পরিচালক প্রকৌশলী আবু হাসানের সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, আমরা গ্রাহকদের নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পৌছে দিতে সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। তবে বরিশাল সহ ওজোপাডিকো’র প্রায় সব এলাকার বিদ্যুৎ লাইনগুলো দীর্ঘদিনের পুরনো ও মেয়াদত্তীর্ণ বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সব বিতরন ও সরবারহ লাইন পূণর্বাশনে প্রকল্প প্রনয়নের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে আগামী বছর পাঁচেকের মধ্যে সব বিতরন লাইন পূণর্বাশন সম্ভব হবে বলেও জানান তিনি। তবে বরিশাল, যশোর ও গোপালগঞ্জ শহরে ভ’গর্ভে ১১ কেভি লাইন প্রতিস্থাপনের ডিপিপি’টি এখনো পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন লাভ করেনি দাতার অভাবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ