Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৬২ বছর বয়সি আরেফার মাস্টার্স সনদ

ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা : | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

আরেফা হোসেন ৪ বছর বয়সে মা এবং আট বছর বয়সে বাবাকে হারান। পাঁচ বোনের মধ্যে আরেফা তৃতীয়। অভিভাবক হলেন বড় বোন। অল্প বয়সে বড় বোনের বিয়ে হয়ে যায়। পরে তার বাকি তিন বোনসহ আশ্রয় হয় একটি অনাথ আশ্রমে। অনাথ আশ্রম থেকে ভর্তি হন মিশনারি স্কুলে। মাধ্যমিকে পড়াশোনা করার সময় বাংলা একটি সিনেমা দেখেন তিনি। যে সিনেমায় এক এতিম মেয়ে সেচ্ছায় মানুষকে সেবা দিচ্ছেন। সে সিনেমা থেকেই স্বপ্ন বুনতেন তিনিও একদিন সেবিকা হবেন। ১৯৭৬ সালে মাধ্যমিক পাস করে রাজশাহীর খ্রিস্টিয়ান মিশন হাসপাতালে ডিপ্লোমা ইন নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারিতে ভর্তি হোন। সেখান থেকে ১৯৮১ সালে শেষ করে ১৯৮২ সালের ৬ জুন ঠাকুরগাঁও মহকুমা হাসপাতালে (বর্তমানে আধুনিক সদর হাসপাতালে) নার্স হিসেবে যোগদান করেন। চাকরির দুই বছর পরেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন। বছর না যেতেই কোলজুড়ে আসে সন্তান। বেড়ে গেলো আরো দায়িত্ব। কমল সময়। একদিকে সংসারের ব্যস্ততা অন্যদিকে কর্মময় জীবন। এগুলো বাদ দিয়ে আলাদা কোন বিষয়ে মনোনিবেশ হওয়ার সুযোগ ছিলনা তার। তবে মনে তার সুপ্ত বাসনা তাড়া করতো উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার। সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে আবার শুরু হয় পড়াশোনা। বিএসসি করার জন্য ভর্তি হোন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত মহাখালী সেবা মহাবিদ্যালয়ে। সেখান থেকে স্নাতক শেষ করে ক্ষান্ত হননি তিনি, বরং চাহিদা বেড়েছে মাস্টার্স করার। চলতি বছরের ১৭ জুন অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন তিনি। ৬২ বছর বয়সে শিক্ষাগত সনদ অর্জনে যেন উচ্চ শিক্ষার স্বাদ শেষ বয়সে আস্বাদন করলেন তিনি। এত বয়সে উচ্চ শিক্ষায় সারা পড়েছে জেলার শিক্ষার্থীদের মাঝে। ঠাকুরগাঁও পৌরসভার ইসলামবাগের বাসিন্দা আরেফা হোসেন। তিন বছর আগে স্বামীকে হারিয়ে বর্তমানে দুই ছেলে সন্তান নিয়ে পরিবার তার। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে ৩৮ বছরের চাকরিজীবন শেষ করে ঠাকুরগাঁও নার্সিং সায়েন্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত আছেন তিনি।


একদিকে বয়সের ভাড়, অন্যদিকে পরিবার ও কর্মস্থলের ব্যস্তময় সময়। এ বয়সে পড়াশোনা যেন আকাশকুসুম বিষয়। তবুও সব বাধা ডিঙ্গিয়ে উচ্চ শিক্ষার সনদ পেয়ে তৃপ্ত আরেফা হোসেন।

তিনি বলেন, আমার জন্ম পাবনা জেলায়। সেখানেই আমাদের বাড়ি ছিল। আমি এ বয়সে মাস্টার্স করেছি আমার স্বামীর অনুপ্রেরণায়। যদিও তিনি জানেন আমি মাস্টার্স করছি কিন্তু আমার সফলতা তিনি দেখে যেতে পারেননি। ২০১৯ সালে তিনি মারা গেছেন। আর আমি এ বছরে মাস্টার্স শেষ করে সনদ পেলাম। আসলে জীবন মানে সংগ্রাম। আরেফা হোসেনের ছোট ছেলে আদিব হোসেন বলেন, আম্মুর সফলতায় আমরা অনেক খুশি। আমরা মা ছেলে একসাথে পিএইচডি করব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ