Inqilab Logo

সোমবার, ১৩ মে ২০২৪, ৩০ বৈশাখ ১৪৩১, ০৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

মেঘনার ভয়াবহ ভাঙন

লক্ষ্মীপুরে শতাধিক বসতভিটা বিলীন

এস এম বাবুল (বাবর), লক্ষ্মীপুর থেকে | প্রকাশের সময় : ২৬ জুলাই, ২০২২, ১২:০৪ এএম

লক্ষ্মীপুরে মেঘনায় পানি বাড়ার সঙ্গে বাড়ছে ভয়াবহ ভাঙন। গত এক মাসে নতুন করে ভাঙনের শিকার শতাধিক পরিবার। ভাঙন ঠেকাতে সরকারের দেয়া তিন হাজার এক শত কোটি টাকা বরাদ্ধে বাঁধ নির্মাণ কাজ শুরু হলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের অবহেলার কারণে বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে চোখের সামনে একের পর এক বসতবাড়ি, বিস্তীর্ণ জনপথ বিলীন হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, বর্ষার শুরু থেকে মেঘনার ভাঙনে দিশাহারা সদর, রামগতি, কমলনগর ও রায়পুর উপজেলার নদী তীরের মানুষ। প্রতিদিন নতুন করে ভাঙছে একের পর এক বসতভিটা। অনেকেই আতঙ্কে সরিয়ে নিচ্ছেন ঘরবাড়ি। তিন যুগ ধরে টেকসই বাঁধ না থাকায় ৪৪ কিলোমিটার এলাকায় প্রতিনিয়ত ভাঙন ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন সময়ে ভাঙন ঠেকাতে প্রকল্প নিলেও তা কোনো কাজে আসেনি বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তাদের অভিযোগ, জিওব্যাগ ডাম্পিং তিন মাস বন্ধ থাকার পর তীর রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হলেও তা থেমে থেমে চলছে কাজ। এতে করে প্রতিনিয়ত ভয়াবহ ভাঙনের শিকার হতে হচ্ছে।
কমলনগর উপজেলা সংবাদদাতা কাজী মো. ইউনুছ জানান, কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন, চৌধুরী বাজার, নাছিরগঞ্জ বাজার, চরজগবন্ধু, চরফলকন, লুধুয়া, চরকালকিনি এবং রামগতি উপজেলার চর আলেকজেন্ডার, রামগতিবাজার, চরআবদুল্লা, বালুরচরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।
রায়পুর উপজেলা সংবাদদাতা এ কে এম ফজলুল হক জানান, রায়পুর উপজেলার উত্তরচর আবাবিল, উত্তর চরবংশী ও দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের পার্শবর্তী মেঘনা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদী তীরবর্তী স্থাপনা ও ফসলী জমি। গত ১০ বছরে সহস্রাধিক ঘরবাড়িসহ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে অগণিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদসহ নানারকম সরকারি ও ব্যক্তি মালিকানাধীন স্থাপনা। ভাঙন প্রতিরোধে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন থেকে তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানালেও প্রতিশ্রুতি পর্যন্তই সীমাবদ্ধ রয়েছে তা।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত বছরের জুন মাসে ৩১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য তিন হাজার উনানব্বই কোটি ছিয়ানব্বই লাখ নিরানব্বই হাজার টাকার প্রকল্প বরাদ্দ দেয় সরকার। এরপর ৯৯ প্যাকেজে ভাগ করে একই বছরের আগস্ট মাসে প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ২৪ প্যাকেজে ১৫ জন ঠিকাদার টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ পায়। সে অনুযায়ী এ বছরের ৯ জানুয়ারি কমলনগরের সাহেবের হাট এলাকায় জিওব্যাগ ডাম্পিং-এর মাধ্যমে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে উক্ত কাজের উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনের পরবর্তী এখন পর্যন্ত যতটুকু কাজ হওয়ার কথা ছিল, তার একভাগও সম্পন্ন হয়নি। এছাড়া বালু সংকট দেখিয়ে তিন মাস কাজ বন্ধ করে রেখেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো। বালু সংকট দূর করে জুনের শুরুতে আবারো শুরু হয় বাঁধ নির্মাণ কাজ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক আহমেদ বলেন, তিন মাস বন্ধ থাকার পর আবারো পুরোদমে কাজ শুরু হয়েছে। যে মেয়াদে প্রকল্প শেষ করার কথা, আশা করি সঠিক সময়ে বাঁধের কাজ শেষ হবে। যদি বাঁধের কাজ উদ্বোধনের পর বালু সংকটের কারণে বন্ধ হলেও এখন আর বালু সংকট নেই। কাজে কোনো সমস্যা হবে না।
জেলা প্রশাসক মো. আনোয়ার হোছাইন আকন্দ বলেন, ৩১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ৩ হাজার ৮৯ কোটি ৯৬ লাখ ৯৯ হাজার টাকা প্রকল্প বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। এটি বাস্তবায়ন হলে সুফল ভোগ করবে এ অঞ্চলের লাখো মানুষ। এ কাজে কোনো গাফিলতি হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ