Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কমলনগরে খানাখন্দে বেহাল সড়ক

তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট রুটে যাতায়াতকারীদের চরম দুর্ভোগ

কাজী মুহাম্মদ ইউনুছ, কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) থেকে | প্রকাশের সময় : ২৫ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

সড়কটিতে যানবাহনে চড়ে ভ্রমণ করলে মনে হয় যেন যুদ্ধবিধ্বস্ত কোন দেশের রাস্তা। মাত্র সাড়ে আট কিলোমিটার সড়কে ১শ’ মিটার জায়গাও এখন আর ভালো নেই। ৪ বছর আগেই বিভিন্ন জায়গায় পিচ-খোয়া ওঠে গিয়ে এতদিন ছোট ছোট গর্ত ছিল। এখন সেগুলো ক্রমান্বয়ে পুকুরে পরিণত হচ্ছে। এ সড়কে যাতায়াতকারী গর্ভবতী নারী শিক্ষার্থী শিশু বৃদ্ধ নারী পুরুষসহ সর্বস্তরের জনগণের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই। এ অবস্থায় চরম ভোগান্তিতে যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা। লক্ষ্মীপুর জেলার অতি গুরুত্বপূর্ণ তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট সড়কের এখন এ অবস্থা।
কমলনগর উপজেলার এ সড়কটির পশ্চিম মাথায় রয়েছে মতিরহাট ইলিশঘাট ও মতিরহাট লঞ্চঘাট। মেঘনার ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় এবং কম সময়ে ভোলা, বরিশাল ও লক্ষ্মীপুরে যাতায়াতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক। এখন সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে দুর্ভোগ চরমে পৌঁছায়। অন্যদিকে সড়কের পূর্ব এবং শেষ মাথার তোরাবগঞ্জ বাজারের মধ্যভাগের সড়কটি পুরো খালে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী এবং শতশত গাড়ি ব্যাপক দুর্ভোগে চললেও জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রশাসন কারোই যেন কোন উদ্যোগ নেই।
স্থানীয়ভাবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালের শেষ দিকে এ সড়কের কিছু অংশ মেরামত করা হয়েছিল। কিন্ত তখন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কাজের মান নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ ছিল। শেষ পযর্ন্ত ২০১৮ সালের মে মাস থেকে সড়কের বিভিন্ন অংশে চাল-বাকল উঠতে শুরু করে। এরপর দীর্ঘ সময় আর কোন মেরামতের উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
এরই মাঝে পরপর গত তিন বছর মেঘনার জোয়ারের পানিতে বলিরপোল থেকে পশ্চিম দিকের বহু জায়গা ভেঙে একাকার হয়ে যায়। মতিরহাট বাজারের পূর্ব পাশে সড়কটি ভেঙে রাতারাতি খালে পরিণত হয়েছে।
এত কিছুর মাঝে ও অতিগুরুত্বপূর্ণ এ সড়ক ধরে ভোলা বরিশাল থেকে লক্ষ্মীপুর হয়ে চট্টগ্রাম এবং ঢাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করার লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ২৭৯নং চিঠির আলোকে মতিরহাট-তোরাবগঞ্জ রাস্তাটি প্রস্তকরণের জন্য নির্দেশনা জারিকরে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের মাঠ প্রশাসন অধিশাখা। নির্দেশনার আলোকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় রাস্তাটি প্রস্তকরণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ পাঠায়।
এর কয়েক দিন পর ২০২০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি রামগতি-কমলনগরের স্থানীয় সংসদ সদস্য মেজর (অব.) আবদুল মন্নানও রাস্তাটি প্রস্তকরণের জন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়য়ে একটি ডিও লেটার জমা দেন।
মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের অনুরোধ ও স্থানীয় এমপির চাহিদার ভিত্তিতে দেশের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের মধ্যে দ্রত যোগাযোগের অন্যতম একটি সংযোগ হিসেবে তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট সড়ককে গুরুত্ব দিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের টিসি শাখা ২০২০ সালের অক্টোবর মাসের ১৫ তারিখে সড়কটি এলজিইডি হতে সড়ক ও জনপথ বিভাগে হস্তান্তরের জন্য আরো একটি পত্র প্রদান করে এলজিইডিকে।
অন্যদিকে ২০২০ সালের ৩ নভেম্বর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সড়কটি রোডসের অধীনে নেয়ার জন্য লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগে চিঠি প্রেরণ করে।
এসব প্রেক্ষিতে মতিরহাট-তোরাবগঞ্জ সড়ক এলজিইডি থেকে স্থানান্তর করে সড়ক ও জনপদ বিভাগে হস্তান্তরের জন্য লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগ সরজমিনে পরিদর্শন করে ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তাদের টেকনিক্যাল রিপোর্ট জমা দেন।
সন্তোষজনক ওই রিপোর্টের কারণে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় ২০২১ সালের নভেম্বর মাসের ১৮ তারিখে তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট সড়ককে এলজিডি হতে স্থানান্তর করে সড়ক ও জনপদ বিভাগের অধীন জেলা মহাসড়ক হিসেবে উন্নিত করে গেজেট প্রকাশ করার নিদের্শ প্রদান করে।
কার্যত ওই তারিখের পর তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট সড়কটি এখন লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপদ বিভাগের আওতাধীন একটি জেলা মহাসড়ক।
সড়ক বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে এ সড়কের আশপাশের জমি অধিগ্রহনসহ বিভিন্ন কারণে সড়কটিতে উন্নয়ন কাজের কিছুটা বিলম্ব হবে। কিন্ত এর মাঝে দীর্ঘদিন কাজ না করায় সড়কটি বর্তমান অবস্থায় অত্যন্ত নাজুক হয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে স্থানীয়দের দাবি সড়কটি দ্রুত সংস্কার করা হোক।
এসব বিষয়ে কমলনগর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী সোহেল আনোয়ার জানান, সড়কের বেহাল অবস্থা দেখে আপদকালীন সংস্কাকারের জন্য একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছেন তিনি। প্রস্তাবটি অনুমোদন পেলে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে সংস্কার কাজ শুরু হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ