Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এক ঘণ্টার লোডশেডিং ৫ ঘণ্টা গরমে হাঁসফাঁস জনজীবন

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে মনিটরিং জোরদারে কমিটি গঠন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

দেশের কিছু কিছু এলাকায় হালকা বৃষ্টি হলেও বৃষ্টির পর আবার সেই ভ্যাপসা গরম চলছে। বাতাসে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি হওয়ায় তাপমাত্রার চেয়ে বেশি গরম অনুভূত হচ্ছে। গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা সাধারণ মানুষের। বিশেষ করে নি¤œবিত্তদের কষ্ট হচ্ছে সবচেয়ে বেশি। এই গরম কবে নাগাদ কমতে পারে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদরা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি।

তারা বলছেন, টানা ভারী বৃষ্টি না হলে এই গরম কমবে না। আগামী কয়েক দিনে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও নেই। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে যতটুকু লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তা এক ঘণ্টার লোডশেডিংয়েই যথেষ্ট ছিল। কিন্তু গ্রাহকদের অপচয় বন্ধ না হওয়ায় সাশ্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে অতিরিক্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলো। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়ে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করার সুবিধার্থে বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত সচিবকে (প্রশাসন) আহŸায়ক করে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ সচিব হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহার সংক্রান্ত পর্যালোচনা অনলাইন সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গত ২০ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউসের সভাপতিত্বে ব্যয় সংকোচন সংক্রান্ত সভায় গৃহীত বিদ্যুৎ বিভাগের জন্য প্রযোজ্য সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় সভায়। পর্যালোচনা সভায় অন্যান্যের মাঝে পিডিবি’র চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান, আরইবি’র চেয়ারম্যান সেলিম উদ্দিন, পাওয়ার সেলের ডিজি মোহাম্মদ হোসাইনসহ দফতর বা সংস্থার প্রধানরা সংযুক্ত ছিলেন। সভায় লোডশেডিং-এর তথ্য এসএমএস-এর মাধ্যমে গ্রাহকদের অবহিত করা, রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিং মল, মার্কেট, বিপণী বিতান বন্ধের বিষয়টি মনিটরিং জোরদার, ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে সভা করা, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে বাতি ও এসি সর্বোচ্চ কম ব্যবহার নিশ্চিত করাসহ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের বিষয়ে মনিটরিং ব্যবস্থা। জোরদার করার সুবিধার্থে এই কমিটি গঠন করা হয়।
গতকাল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা গত কয়েক দিনের তুলনায় অনেক কম। গত কয়েক দিন গড়ে তাপমাত্রা ছিল ৩৪ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর ভ্যাপসা গরম একই রকম অনুভূত হচ্ছে।

আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, এই বৃষ্টি ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হচ্ছে। বৃষ্টি কম হলে তাপমাত্রা খুব একটা কমবে না। গরম কমতে হলে টানা ভারী বৃষ্টি হতে হবে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টি হলেও ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনাও নেই।

রিকশাচালক রাসেল জানান, সকাল থেকে সূর্যের তেজ বাড়তি। বিকাল পর্যন্ত টানা রিকশা চালানো যায় না। দুপুরের পরে ক্লান্ত হয়ে ফিরে যেতে হয়। দুপুরে যারা রিকশা বের করেন তারা সন্ধ্যার পর আর রিকশা চালাতে চায় না। এদিকে গরমের কারণ পল্টনের অনেক হকার শামিয়ানা টানালেও অনেকে এত খরচ করতে পারে না। তাই সূর্য যখন মাথার ওপরে আসে তখন কাপড়চোপড় গুছিয়ে রেখে দেন। ঘণ্টা দুই বিশ্রাম নেন। এদিকে ঈদের পর অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ খুলে গেছে সব। রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে সাধারণ মানুষও গরমে হাঁসফাঁস করছেন। এই সময়ের গরমের কারণে সবচেয়ে কষ্ট পায় শিশু ও বৃদ্ধরা। অনেকে গরমে অসুস্থও হচ্ছেন।

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ ভারতের রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের মধ্যাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়, রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোর মধ্যে রংপুরে ৩৪, ময়মনসিংহে ৩২ দশমিক ৯, সিলেটে ৩৩ দশমিক ৮, চট্টগ্রামে ২৯ দশমিক ৩, খুলনা ও বরিশালে ৩৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ নাজমুল হক বলেন, গত কয়েক দিনের তুলনায় আজ তাপমাত্রা কম। কারণ, কিছু এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে। যেমন, চট্টগ্রামে গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ৯৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটি দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃষ্টি। এতে ওই এলাকার তাপমাত্রা কিছুটা কমেছে। একইভাবে ঢাকায় ১৩ মিলিমিটার, নেত্রকোনা ও পটুয়াখালীতে ১৪ এবং খুলনায় ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এসব এলাকায় বৃষ্টি হওয়ায় তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও বাতাসে জলীয়বাষ্পের কারণে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। যেখানে এক ঘন্টা লোডশোডিং থাকার কথা সেখানে দেশের বিভিন্ন জেলায় ৪ থেকে ৫ ঘন্টার লোডশোডিং চলছে।

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) ও ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেসকো) প্রতিদিন এলাকাভিত্তিক এক ঘণ্টা করে শিডিউল প্রকাশ করে। তবে শিডিউলের বাইরেও অতিরিক্ত লোডশেডিং হতে দেখা যায় রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকায়।

জানা গেছে, রাজধানীর বাড্ডা এলাকায় দুদিন ধরেই এক ঘণ্টার অতিরিক্ত লোডশেডিং হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। প্রথম দিন সন্ধ্যায় এক ঘণ্টা লোডশেডিং হলেও দুপুরে ও রাতে বাড়তি লোডশেডিং হয় এ এলাকায়। রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, খিলগাঁও, মুগদা, হাতিরপুলসহ আরও কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়েও এক ঘণ্টার অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া যায়। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ান ইনকিলাকে ফোনে বলেন, আমরা চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ প্রায় ১৪০-১৫০ মেগাওয়াট কম পাচ্ছি। এক ঘণ্টা লোডশেডিং করার পরও বিদ্যুতের ঘাটতি থাকার কারণে আমাদের অতিরিক্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে। এক ঘণ্টা লোডশেডিং করার পর আমাদের দরকার প্রায় ১ হাজার ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। কিন্তু এখন সরবরাহ করা হচ্ছে ১ হাজার ৫৫০ মেগাওয়াটের মতো। প্রতিদিন ১৫০ মেগাওয়াট কম পাচ্ছি। যে কারণে আরও অতিরিক্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে। চাহিদা ও বিতরণের সঙ্গে সমন্বয় কেন হচ্ছে না। তিনি বলেন, আমাদের সাশ্রয় যে লক্ষ্যমাত্রা, তাতে এক ঘণ্টার লোডশেডিংয়েই হয়ে যেতো। কিন্তু আমরা যতটুকু বিদ্যুৎ পাচ্ছি, তাতে এক ঘণ্টার লোডশেডিংয়ে বিতরণ পূর্ণ হচ্ছে না। অতিরিক্ত লোডশেডিং করতে হচ্ছে। বিদ্যুৎ অপচয়ের কারণেই এমনটি হচ্ছে।

তিনি বলেন, আসলে যতটুকু চাহিদা তৈরি হচ্ছে, সেটা প্রকৃত চাহিদা নয়। গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অপচয় করছে বলে চাহিদাও বেশি হচ্ছে। যদি অপচয় না হতো, তবে যতটুকু সরবরাহ, ততটুকুতেই হয়ে যেতো। বিদ্যুৎ বিভাগের উপসচিব জাহিদুল ইসলামের সই করা এক চিঠিতে গত বুধবার রাতে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। সারাদেশে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়, দুটি এসএমএস ’র মাধ্যমে লোডশেডিংয়ের বিষয়টি গ্রাহকদের অবহিত করতে হবে। এসএমএস দুইটি হচ্ছে, লোডশেডিং এবং নির্দিষ্ট এলাকার লোডশেডের জন্য দুঃখিত। নির্দিষ্ট সময়সূচির বাইরে কোনও লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কথা যাতে ভোক্তারা জানতে পারেন, সেকারণে হটলাইন, কমপ্লেইন সেন্টার এবং সংশ্লিষ্ট ডিউটি অফিসারের নম্বরে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হলো।

গতকাল সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় লোডশেডিং শুরু করেছে ডিপিডিসি এবং ডেসকো। কোথায়, কখন লোডশেডিং হবে, তার তালিকাও দিয়ে দিয়েছে সংস্থা দুটি। এই প্রতিবেদনের সঙ্গে ডিপিডিসি ও ডেসকোর তালিকাভুক্ত এলাকার লোডশেডিংয়ের সময়সূচি। ডিপিডিসি ও ডেসকোর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন এক জায়গায় একই সময় লোডশেডিং করা হচ্ছে না। এলাকাভেদে প্রতিদিন লোডশেডিংয়ের সময়ের ভিন্নতা থাকছে। আপাতত রাজধানীতে প্রতিদিন একটি এলাকায় এক ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লোডশেডিং

২৮ আগস্ট, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ