Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দীর্ঘমেয়াদের ইউক্রেন যুদ্ধে ঘটবে ভয়ঙ্কর বৈশ্বিক বিপর্যয়

রাশিয়ার অসামরিক অস্ত্র শরণার্থীর চাপে দিশেহারা ইউরোপ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২২ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে নতুন একটি মোক্ষম অসামরিক অস্ত্র প্রয়োগ করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। রাশিয়া-ইউক্রেন সঙ্ঘাত এবং এ-থেকে সৃষ্ট বিশ্বব্যাপী খাদ্য ও জ্বালানি সঙ্কটের মধ্যে ৬০ লাখেরও বেশি ইউক্রেনীয় ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে আশ্রয় চেয়েছে। চরম বর্ণবাদী হিসেবে পরিচিত ইউরোপ এ যাবত পৃথিবীর অন্যান্য যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোর শরণার্থীদের প্রতি ব্যাপক বৈষম্য করে আসলেও ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার জন্য শরণার্থী নীতি পাল্টাতে হয়েছে তাদের। ফলে, এ বছরের প্রথমার্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ১ কোটি উদ্বাস্তুর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে পশ্চিমারা।

ফ্রন্টেক্স মূল ভ‚মধ্যসাগরীয় পথে ২৫ হাজার ১শ’ ৬৪টি সীমান্ত লঙ্ঘন নথিবদ্ধ করেছে যা ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় ২৩ শতাংশ বেশি। অনেকে পূর্ব ভ‚-মধ্যসাগর হয়ে আসছে এবং সাইপ্রাসে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করছে, যেখানে এ সংখ্যা ১শ’ ২৫ শতাংশ বেড়েছে। এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে ইউক্রেনীয়রা ছাড়াও ১ লাখ ১৪ হাজার ৭শ’ ২০ অভিবাসী অবৈধভাবে ইইউতে এসেছেন। বসনিয়া হারজেগোভিনা, গ্রিস, ইতালি, মন্টিনিগ্রো, সার্বিয়া, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে অবৈধভাবে আসা এসব শরাণার্থীর ক্রমবর্ধমান তালিকায় রয়েছে আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, মিসর, তিউনিসিয়া, সিরিয়া এবং ইরাক থেকে আগতরা। জাতিসঙ্ঘ বলছে যে, এসব শরণার্থীর মানবিক সাহায্য নিশ্চিত করতে ২০২২ সালে প্রাথমিকভাবে ৪ কোটি ২ লাখ মার্কিন ডলার প্রয়োজন।
পুতিন সরাসরি সামরিক শক্তি ব্যবহার না করেও অভিবাসনের চাপ তৈরি করে সফলভাবে ইউরোপকে অস্থিতিশীল করে তুলকে পেরেছেন। ফ্রন্টেক্সের অন্তর্র্বর্তীকালীন নির্বাহী পরিচালক আইজা কালনাজা গত সপ্তাহে বলেছেন, ‘ইউক্রেন থেকে শস্য পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে এবং এটি ব্যাপক উদ্বাস্তু সঙ্কট তৈরি করছে।’ তিনি বলেন, খাদ্য নিরাপত্তার কারণে অন্যান্য অঞ্চল থেকে আসা শরণার্থীদের জন্যও প্রস্তুত হওয়া উচিত ইইউ’র।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, প্রাথমিকভাবে আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যেরসহ ৫০টি দেশ তাদের গম আমদানির অন্তত ৩০ শতাংশের জন্য রাশিয়া এবং ইউক্রেনের ওপর নির্ভর করে এবং জাতিসঙ্ঘের বিশ^ খাদ্য কর্মসূচি ইউক্রেন থেকে তার অর্ধেক গম পেত। যুদ্ধের আগে মিসর, ইন্দোনেশিয়া, বাংলাদেশ, তুরস্ক এবং তিউনিসিয়া ইউক্রেনীয় গমের শীর্ষ আমদানিকারক ছিল। শুধুমাত্র ইউক্রেনই প্রতি বছর ৪শ’ মিলিয়ন মানুষের জন্য খাদ্য রফতানি করতো, যা বর্তমানে সম্ভব হচ্ছে না।

এখন এ ধরনের পরোক্ষ যুদ্ধের ভুক্তভোগীদের প্রথম ঢেউ ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ছে এবং প্রায় নিশ্চিতভাবেই আরো ব্যাপক আকার ধারণ করবে। জেসুইট রিফিউজি সার্ভিসের ইন্টারন্যাশনাল ডিরেক্টর টমাস স্মোলিচ বলেন, ‘এই মুহ‚র্তে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের অনেক মানুষ পরিস্থিতি অনুধাবন করছে। তারা উপসংহারে পৌঁছেছে যে, খাদ্য পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে এবং মুদ্রাস্ফীতির অর্থ হল, তারা তাদের অর্থের বিনিময়ে আরো কম পাবে এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, তাদের এখনই সুযোগটি কাজে লাগাতে হবে। সবাই দীর্ঘপথের ভ্রমণে টিকে থাকতে পারে না, তবে অনেকেই করতে পারে।’

পুতিন এ ধরনের ব্যাপক প্রভাবের কথা মাথায় রেখেই ইউক্রেনের সাথে সঙ্ঘাতে নেমেছিলেন বলে দাবি করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা, ইউক্রেনীয় শস্যের অবশিষ্ট সরবরাহ হ্রাস এবং আরো বেশি লোক ইউরোপের দিকে ধাবিত হওয়ার কারণে এ বিপর্যয় দ্রæত বৃদ্ধি পাবে এবং বিশে^র অন্যান্য অঞ্চলেও সম্ভাব্য খাদ্য ও জ¦ালানি বিপর্যয় ঘটবে। পুতিন ইউরোপে শরণার্থী-বিপর্যয় তৈরির সুবর্ণ সুযোগ নিলেও অন্যান্য যুদ্ধগুলোও ইউরোপীয় শরণার্থীদের সংখ্যা বাড়িয়েছে এবং এক্ষেত্রে ওয়াশিংটনের দায়ভারও কম নয়। সিরিয়া, আফগানিস্তান এবং ইরাকের মতো দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ এবং সেখান থেকে বিশৃঙ্খলভাবে দেশটির প্রস্থান আলাদাভাবে একটি উদ্বাস্তু সঙ্কট তৈরি করেছে। এরফলে দেশগুলো গত বছর ইউরোপীয় ইউনিয়নে আশ্রয় আবেদনের শীর্ষে ছিল।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হলে যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউকে প্রথমেই মিসর থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত দেশগুলোকে অন্যান্য উৎস থেকে গম পেতে সহায়তা করতে হবে। ইতোমধ্যেই রাশিয়া-বিরুদ্ধ সমর্থন হারাতে শুরু করেছে তারা। দীর্ঘমেয়াদে যুক্তরাষ্ট্র, ইইরোপ এবং তাদের মিত্রদের শিখতে হবে যে, বিশ্বের আধিপত্যের যুদ্ধে রাশিয়ার মতো পরাক্তিগুলোর সামান্যই হারানোর আছে এবং ভ‚-রাজনৈতিক কারণে বিশে^র বাকি দেশগুলোর ওপর এ ধরনের সঙ্ঘাতের প্রভাব অতি ভয়ঙ্কর। তাই এ পরাশক্তির বিরুদ্ধে যুুদ্ধে সফলতা কার্যত অসম্ভব। সূত্র : ইউনিসেফ, ইউএনএইচসিআর, ফরেন পলিসি।

 

 



 

Show all comments
  • Ahmed Shorif ২২ জুলাই, ২০২২, ৭:৩৬ এএম says : 0
    ভারতের আসামে মুসলমানদের উপর অত্যাচার হচ্ছে ভারতীয় সরকার ও সেখানকার হিন্দুরা মুসলমানদের বাড়িঘর ভেঙ্গে দিচ্ছে বাংলাদেশকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানাচ্ছি এবং বাংলাদেশ থেকে প্রতিবাদ জানানো হোক
    Total Reply(0) Reply
  • Abdul Jalil ২২ জুলাই, ২০২২, ৭:৪৩ এএম says : 0
    এ যুদ্ধ বন্ধ হওয়া ভালো যুদ্ধের কারণে আজ বিশ্বে তেল ও খাদ্যের দাম বেড়েই চলছে।
    Total Reply(0) Reply
  • Al Amin ২২ জুলাই, ২০২২, ৭:৪৩ এএম says : 0
    খুব তাড়াতাড়ি পুরোটাই দখল করে যুদ্ধ থামাও, আমরা তেল, গ্যাসের সংকটে পুষ্টিহিনতায় ভুগতেছি, জয়, পুতিনের জয়, ।
    Total Reply(0) Reply
  • Mofizur Rahaman Emon ২২ জুলাই, ২০২২, ৭:৪৪ এএম says : 0
    দ্রুত দখল করে যুদ্ধের সমাপ্তি টানুন এতে বিশ্ব শক্তির ভারসাম্য আসবে ও বিশ্ব স্থিতিশীল হবে।।।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রাশিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ