Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির অভাবে দক্ষিণাঞ্চল এখনো লোডসেডিং মুক্ত

জানুয়ারীর মধ্যে পায়রা ও রামাপালের প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হচ্ছে

নাছিম উল আলম | প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০২২, ২:৪০ পিএম

উৎপাদন শুরুর প্রায় দেড় বছর পরেও পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির অভাবে দক্ষিণাঞ্চল সহ পশ্চিম জোন প্রায় লোডসেডিং মূক্ত থাকলেও দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি পুরনে সরকারী এ বৃহত উৎপাদন কেন্দ্রটিকে এখনো কাজে লাগান যাচ্ছেনা। উপরন্তু ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াটের এ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির উৎপাদন ১ হাজার মেগায়োটের কমবেশী সিমিত রাখতে হচ্ছে। বুধবার সান্ধ পীক আওয়ারে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির সর্বোচ্চ উৎপাদন ১ হাজার ৭০ মেগাওয়াটে সিমিত ছিল।
চীনা কারিগরি সহায়তায় পটুয়াখালীর দক্ষিনে পায়রা নদী তীরে ৬৬০ মেগাওয়াটের দুটি ইউনিটের তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মান কাজ শেষে উৎপাদন শুরুর পরে সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে তা উদ্বোধনও করেছেন। কিন্তু তা এখনো জাতীয় গ্রীডে পুরোপুরি সংযুক্ত করা সম্ভব হয়নি ট্রান্সমিশন লাইন নির্মানের অভাবে। সরকারী মালিকানায় কয়লা ভিত্তিক একক সর্ববৃহত এ তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রেটির উৎপাদিত বিদ্যুৎ ৪শ কেভি ট্রান্সমিশন লাইনের মাধ্যমে পায়রা থেকে ১৬৩ কিলোমিটার উত্তরে গোপালগঞ্জে বরিশালÑফরিদপুরÑঢাকা জাতীয় মহাসড়কের পাশে নির্মিত সাব-স্টেশনে পৌছলেও সেখান থেকে তা এখনো সরাসরি জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত করা সম্ভব হয়নি সঞ্চালন লাইন নির্মানের অভাবে।
তবে গোপালগঞ্জের ঐ গ্রীড সাব-স্টেশন থেকে ভেড়ামাড়াÑবরিশাল ১৩২ কেভী ডবল সার্কিট লাইনের মাধ্যমে বরিশালে এবং আরেকটি ২২৫ কেভি সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে পটুয়াখালী গ্রীড সাব-স্টেশনে পৌছার পরে সেখান থেকে ১৩২ কেভী সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে আবার বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের গ্রীড সাব-স্টেশন গুলোতে পৌছছে। গোপালগঞ্জ থেকে আরেকটি ৪শ কেভি সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে ৭৬ কিলোমিটার দুরে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র সহ মোংলা গ্রীড সাব-স্টেশনকেও সংযুক্ত করা হয়েছে।
তবে এখনো পায়রায় উৎপাদিত বিদ্যুৎ ঢাকা সহ মূল জাতীয় গ্রীডে সংযুক্ত করা সম্ভব হয়নি। পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী-পিজিসিবি’র দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, গোপালগঞ্জ থেকে ঢাকার আমীন বাজার পর্যন্ত ল্যান্ডবেজ টাওয়ার নির্মান সহ সঞ্চালন লাইন নির্মান কাজ শেষ হলেও পদ্মা নদীর ওপর ৭টি ক্যাশন টাইপ রিভার ক্রসিং টাওয়ারের মধ্যে ৪টির নির্মান কাজ শেষ হয়েছে। দায়িত্বশীল সূত্রের মতে, আগামী ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারীর মধ্যে পদ্মার রিভার ক্রসিং সহ সমুদয় ট্রান্সমিশন লাইন নির্মান কাজ সম্পন্ন হবে। ফলে জানুয়ারীর মধ্যেই ঢাকার আমীন বাজার গ্রীড সাব-স্টেশনের মাধ্যমে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির আশা করছেন পিজিসিবি কতৃপক্ষ। ফলে জাতীয় গ্রীডে পায়রার কয়লা ভিত্তিক ১৩শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ যুক্ত হবে বলে পিডিবি’র উর্ধতন কতৃপক্ষও আশা করছেন। পাশাপাশি ডিসেম্বরের মধ্যে রামপাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র উৎপাদিত আ রা প্রায় ১৩শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির আশা করছেন কতৃপক্ষ।
বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে লোডসেডিং করা হলেও পিরোজপুর বাদে দক্ষিণাঞ্চলের ৫টি জেলা তার আওতামূক্ত থাকছে পায়রার বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে সংযুক্তির অভাবে। তবে বর্তমান বিদ্যুৎ সংকট ডিসেম্বরের পরে অব্যাহত থাকলে দক্ষিণাঞ্চল সহ পুরো পশ্চিম জোনের ২১ জেলাই সারা দেশের মত লোড সেডিং-এর আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওজোপাডিকো’র দায়িত্বশীল মহল। কিন্তু পায়রা ও রামপালের প্রায় আড়াই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যুক্ত হবার পাশাপাশি ডিসেম্বরের আগে শীত মৌসুম শুরু হলে দেশে লোড সেডিং-এর বিড়ম্বনা নাও থাকতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পিডিডি’র দায়িত্বশীল মহল।
বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলে পায়রা তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাইরে ভোলাতে গ্যাস ভিত্তিক ২২৫ মেগাওয়াটর পাওয়ার স্টেশনের প্রায় ১৯০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রীডে যাচ্চে। এছাড়া বরিশাল ও পটুয়াখালীতে বেসরকারী সামিট ও ইউনাইটেড গ্রুপের ফার্নেস অয়েল নির্ভর উৎপাদন কেন্দ্রগুলো বেশীরভাগ সময়ই বন্ধ থাকছে। এছাড়া বরিশালে পিডিবি’র নিজস্ব ডিজেল নির্ভর ২০ মেগাওয়াটের দুটি গ্যাস টার্বাইন পাওয়ার স্টেশন আরো ৩ বছর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে।
বুধবার সান্ধপীক আওয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের ৫ জেলা বাদে পশ্চিম জোনের ১৬টি জেলায় চাহিদার মাত্র ৩০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ঘাটতি ছিল বলে জানা গেছে। পশ্চিম জোনে সান্ধ পীক আওয়ারে বর্তমানে সর্বমোট চাহিদা প্রায় সাড়ে ১২শ মেগাওয়াট।
তবে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো জেলার মত পশ্চিম জোনের ২১ জেলার বেশীরভাগেই এখনো যথাযথ রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে লোডসেডিং-এর বাইরেও বিদ্যুৎ নিয়ে বিড়ম্বনা সহ্য করতে হচ্ছে লক্ষ লক্ষ গ্রাহকদের। এ অঞ্চলে ১১ কেভি থেকে শুরু করে এলটি লাইন সহ ১১/.০৪ ট্রান্সফর্মার ছাড়াও অন্যান্য স্পর্ষকাতর বৈদ্যুতিক সরঞ্জামগুলোর পরিবর্তন এবং পূণর্বশনও জরুরী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ