Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাষ্ট্রীয় প্রকল্পের অপচয় কমানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

একনেকে ১৫৮৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ প্রকল্প অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

সরকারের নেয়া উন্নয়ন প্রকল্পগুলোতে মিতব্যয়ী হতে এবং অপচয় কমানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে মন্ত্রিসভার সদস্য, সরকারের সব পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সব ধরনের অপচয় কমিয়ে মিতব্যয়ী হওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের মানুষও যেন অযথা কোনো অপচয় না করেন সে জন্য সবার কাছে অনুরোধ জানান তিনি।

গতকাল মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গণভবন থেকে যুক্ত হয়ে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভায় ১৫ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮টি প্রকল্প অনুমোদন হয়। বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ও প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম প্রধানমন্ত্রীর এসব অনুশাসন সাংবাদিকদের জানান। ব্রিফিং এ পরিকল্পনা সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সারা বিশ্বে যে টালমাটাল অবস্থা, তার অভিঘাত পড়েছে বাংলাদেশে। নাগরিক হিসেবে সবার ওপরে মূল্যস্ফীতির প্রভাব পড়েছে। জ্বালানি তেলের কারণে সব জিনিসের দাম বাড়ছে। এ বিষয়ে সরকার নানা উদ্যোগ নিয়েছে। একনেক বৈঠকে সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মিত্যবায়ী হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, অপচয়, অপরাধ, দুর্নীতি রোধে সকলকে সচেতন থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন বিদ্যুৎ ব্যবহারে মিতব্যয়ী হতে হবে। এছাড়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের আওতায় তৈরি রাস্তার মান বজায় রাখার নির্দেশও দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে, রাস্তা যাতে টেকসই হয় সেদিকে এলজিইডিকে নজর রাখতে হবে। সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হাওয়ার এলাকার জন্য একটি সমন্বিত প্রকল্প তৈরির কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনা মন্ত্রী জানান, আগামী ডিসেম্বর মাসে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেল চালু হবে বলে প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রান্তিক পর্যায়ে, বিশেষ করে গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণে কাজের মান ভালো করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মূল্যস্ফীতি বিগত কয়েক দিনে বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যগুলোতে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় মনে করে মূল্যস্ফীতি জুলাই শেষে কমার সম্ভাবনা রয়েছে। চাল, ভোজ্যতেলে স্বস্তির সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চালে রোপা আমন লাগাতে মাঠ পর্যায়ে নজরদারি বাড়ানো হবে। প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকদের জন্য বিনা মূল্যে সার, তেলসহ যাবতীয় সহায়তা দেয়া হবে। তিনি বলেন, গ্রামীণ পর্যায়ে সড়কের মান যেন অক্ষুন্ন থাকে সে বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, কোনো সরকারি প্রকল্প লাভজনক হলে সে মুনাফা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মেট্রোরেলের ল্যান্ডিং স্টেশনে গাড়ি পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা রাখতে একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে হাসপাতালের মতো স্থাপনার সামনে মেট্রোরেল চলাচলের শব্দ কমাতে সাউন্ড ব্রেকার বসানোর নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড.শামসুল আলম বলেন, জনদুর্ভোগ কমানোর জন্য কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত কানেকটিং রেল চালুর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এক্ষেত্রে বলা হয়েছে কানেকটিং রেলের পাশাপাশি যেখানে প্রয়োজন সেখানেই আন্ডারপাস তৈরি করতে হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রসহ যেসব প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে তার অর্থ সরকারি কোষাগাড়ে জমা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন শেখ হাসিনা

এদিকে ব্যয় বেড়েছে মেট্রোরেল (এমআরটি-৬) প্রকল্পের। এর প্রধান কারনই হচ্ছে মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত নতুন অংশ অর্ন্তভুক্তি। এক্ষেত্রে প্রকল্পটির মূল ব্যয় ছিল ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা। সেখান থেকে ১১ হাজার ৪৮৬ কোটি ৯২ লাখ টাকা বেড়ে এখন মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। গতকাল মঙ্গলবার প্রকল্পটির দ্বিতীয় সংশোধনী প্রস্তাবসহ মোট ৮টি প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে একনেক। রাজধানীর আগারগাঁও এ অনুষ্ঠিত বৈঠকে গণভবন থেকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এসময় তিনি মেট্রোরেলের গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন গুলোতে পার্কিং তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে মেট্রোরেল প্রকল্পের কারণে জমি দাতাতের কম দামে ফ্ল্যাট দেয়ার নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি বলেছেন, মেট্রোরেল পথের যেখানে হাসপাতাল বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থাকবে সেখানেসাউন্ড ব্রেকার লাগাতে হবে।
ব্রিফিং এ জানানো হয়, মেট্রোরেল প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে মেয়াদও। ২০১২ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য ছিল। কিন্তু এবার দ্বিতীয় সংশোধনীর মাধ্যমে দেড় বছর বাড়িয়ে ২০২৫ সালেরর ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় গত এপ্রিল মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৮৪৯ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এছাড়া বাস্তব অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৮১ দশমিক ১৯ শতাংশ। মূল প্রকল্পটি রাজধানীর উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত করার কথা ছিল। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সেটি কমলাপুর পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে। এত ব্যয় বৃদ্ধি প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অনেক জমি অধিগ্রহণ করতে হয়েছে। ঢাকার জমির দাম কেমন হবে তা সহজেই অনুমেয়। জমি অধিগ্রহণেই মোটা অঙ্কের খরচ হবে।

জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার স্কিনিং প্রকল্পে ৫০ কর্মকর্তার বিদেশ সফর প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য মোসাম্মৎ নাসিমা বেগম বলেন, আমরা তাদের কাছে জানতে চেয়েছি। প্রকল্প সংশ্লিস্টরা যে ব্যাখা দিয়েছেন এতে আমরা সন্তুষ্ট হওয়ায় এ ব্যবস্থা রেখেছি। এটা একটি স্বাস্থ্য সম্পর্কিত প্রকল্প। তাই প্রায় ৩০ জন ডাক্তার ও নার্স যাবেন বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে। বাকি ২০ জন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা থাকবেন। যদিও জরায়ুমুখ ও স্তন ক্যান্সার স্কিনিংয়ে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা থাকা নিয়ে প্রশ্নও রয়েছে।

একনেকে অনুমোদন পাওয়া অন্য প্রকল্পগুলো হলোÑচট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি জাতীয় মহাসড়ক এর হাটহাজারী হতে রাউজান পর্যন্ত সড়কাংশ ৪ লেনে উন্নীতকরণ। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ১০৪ কোটি টাকা। এছাড়া নরসিংদী সড়ক বিভাগের আওতায় ইটাখোলা-মঠখোলা-কাটিয়াদী সড়ক ও নয়াপাড়া আড়াইহাজার নরসিংদী-রায়পুরা দুইটি আঞ্চলিক মহাসড়ক যথাযথমানে প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ, ব্যয় হবে ৯৮৪ কোটি টাকা। ময়মনসিংহ কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহের জন্য ধনুয়া হতে ময়মনসিংহ পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণ, ব্যয় ৫৫৩ কোটি টাকা। ইলেকট্রিক ডাটা ট্র্যাকিংসহ জনসংখ্যা ভিত্তিক জরায়ু মুখ ও স্তন ক্যান্সার স্ক্রিনিং কর্মসূচী, ব্যয় হবে ১২৯ কোটি টাকা। খাগড়াছড়ি শহর ও তৎসংলগ্ন অবকাঠামো নদী ভাঙ্গন হতে সংরক্ষণ, ব্যয় হবে ৫৮৬ কোটি টাকা। উপজেলা পরিচালন ও উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় ২১১ কোটি টাকা। বৃহত্তর দিনাজপুর জেলার গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প, ব্যয় হবে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: একনেকে

১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ