Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সরকার এখন সর্ষে ফুল দেখবে : সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

সরকার এখন সর্ষে ফুল দেখবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমাদের রিজার্ভের সাড়ে ৭ বিলিয়ন ডলার তারা (সরকার) এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট ফান্ডে দিয়েছে। যারা দেশে-বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে তারা এই টাকাটা নিয়ে বিদেশে পাচার করেছে, বাড়ি-ঘর বানিয়েছেন আর দেশে সেই টাকা আর আসছে না। এই তো শুরু, দিস ইজ এ বিগিনিং। অর্থনীতিবিদরা বলছেন প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে। এখন গভমেন্ট সর্ষে ফুল দেখবে, দেখতে হবে। জনগণ ফুঁসে উঠছে, ফুঁসে উঠবে এবং তাদের (সরকার) পতন তরান্বিত হবে।

গতকাল মঙ্গলবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিদ্যুৎ সংকটসহ দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা তুলে ধরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়বে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, এর সবচেয়ে বড় প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। বাংলাদেশের অর্থনীতি মূলত; নির্ভর করে পোষাক শিল্পের ওপরে। সেই খাতে যখন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি চাহিদার ঘাটতি হলে সমস্যা তৈরি হবে, পরিবহনে সমস্যা সৃষ্টি হবে। জ্বালানি তেল ও বিদ্যুৎ সম্পূর্ণভাবে অর্থনীতির সাথে ওতোপ্রতোভাবে জড়িতে। সেখানে যখন রেশনিং সিষ্টেম চালু করা হবে তখন কিন্তু উৎপাদন হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্ট থাকবে। অর্থনীতিবিদরা যেটা বলছেন, এটা একটা টেম্পোরারি ম্যাজার। এটাকে কাটাতে হলে তাদেরকে (সরকার) স্থায়ী সমধানের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। সেইদিকে কিন্তু সরকার যাচ্ছে না। তারা দাম বাড়াচ্ছে না। দাম বাড়ালে জনগণ বিগড়ে যাচ্ছে। অলরেডি দাম তো বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু অর্থনীতিতে অত্যন্তভাবে ক্ষতির সৃষ্টি হচ্ছে।

তিনি বলেন, যেসব পাওয়ার প্ল্যান্ট কাজ করছে না তাদেরকে পয়সা দিতে হবে। সেক্ষেত্রে কিন্তু বিরাট অংশ চলে যাচ্ছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অনেকেই ডলারে পরিশোধ করতে হয়। এই সমস্যাগুলো বলা যেতে পারে সামগ্রিক সমস্যা। এই সমস্যাগুলো সৃষ্টির বিষয়ে আমরা আগেই বলেছি যে, সরকারের কোনো পরিকল্পনা নেই এবং দুর্নীতি চরম জায়গা পৌঁছছে। সব জায়গাতে তাদের একটাই লক্ষ্য দুর্নীতি করা। এটা অস্বীকার করলে তো চলবে না। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রে আজকে এমন একটা জায়গায় চলে গেছে, যেখানে ‘পয়েন্ট অব নো রিটার্ন’ এ চলে গেছে। ঠিক একইভাবে শ্রীলংকাতে যে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ৭টা দেশকে ওয়ার্নিং দেয়া হচ্ছে যে, শ্রীলংকার মতো অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে। এটা তো হয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যুতে অর্থ লুটের বিচার হবে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রায় ৭৮ হাজার কোটি টাকা তাদের দিতে হয়েছে কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন না করেই। এখন যে বলা হচ্ছে ৬টা ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ থাকবে, বাকীগুলো কিন্তু পয়সা পেতেই থাকবে। এরাও (ছয়টা) কিন্তু পয়সা পাবে। ১ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা বছরে তাদের জন্য গুনতে হবে। এতে প্রমাণিত শুধুমাত্র দুর্নীতি করার জন্য কোনো বিশেষ বিশেষ কোম্পানিকে অর্থ বানানোর সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে তাতে নিজে উপকৃত হওয়ার কারণে এই কাজটা করেছে তারা। বিদ্যুৎ না পেলেও ওইসব কোম্পানি মালিকদের এভাবে টাকা দেয়া হচ্ছে। একদিন তাদেরকে এর হিসাব দিতেই হবে। এই হিসাব না দিয়ে তারা যেতে পারবে না। তাদেরকে জনগণের আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।

কার্গো বিধবস্তের প্রকৃত ঘটনা প্রকাশের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সভায় গত ১৬ জুলাই সার্বিয়া থেকে বাংলাদেশে সমরাস্ত্র নিয়ে আসার সময় ইউক্রেনের একটি কার্গো বিমান বিধবস্ত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। আইএসপিআরের দুই রকম বক্তব্যে বিষ্ময় প্রকাশ করা হয়। সার্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর ভাষ্য এবং আইএসপিআর এর বক্তব্য সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় জনগণের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে সরকারের নিকট প্রকৃত তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করার দাবি জানানো হয়। ওয়াসার পানি এবং ৫৩টি ঔষুধের মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষোভ ও নিন্দা প্রকাশ করেছে জাতীয় স্থায়ী কমিটি। ওয়াসার পানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে ঢাকার মহানগরের প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রতিবাদ সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান বিএনপি মহাসচিব।

সিইসির বক্তব্য হাস্যকর উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, উনি (প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল) এখন হাস্যকর ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছেন। আওয়ামী লীগ ও ইলেকশন কমিশন তারা মনে করেন যে, দেশের সব মানুষ আহাম্মক। তাহলে তো হবে না। এটা গত ১০ বছর ধরে প্রমাণিত হয়েছে যে, আওয়ামী লীগের অধীনে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। একথা শামসুল হুদা সাহেবও বলেছেন, শেষ মুহুর্তে একেএম নুরুল হুদা সাহেবও তার চাকুরি যাওয়ার পরে এই কথা বলেছেন। আর উনি এখনই বলে দিচ্ছেন, যে এটা সম্ভব না, ইটস নট পোসেবল। তিনি বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে না আসলে নির্বাচন গ্রহন যোগ্য হবে না। তাই সরকারকে জনগণের অধিকারকে ফিরিয়ে দিতে হবে এবং তত্ত¡াধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া সংকট উত্তরণের কোনো পথ নেই।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে গত সোমবার স্থায়ী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নড়াইলে হিন্দু স¤প্রদায়ের বাড়ি-ঘর-মন্দিরে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে ঘটনার সরজমিন তদন্তে দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরীর নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানান মহাসচিব। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, জয়ন্ত কুমার কুন্ড, অ্যাডভোকেট ফাহিমা মুন্নী, ব্যারিস্টার রুমির ফারহানা ও অ্যাডভোকেট নিপুণ রায় চৌধুরী। তদন্ত কমিটিকে আগামী ২৬ জুলাই প্রতিবেদন জমা দিলে তা জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে বলে জানান মহাসচিব।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মির্জা ফখরুল


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ